Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

ধামরাইয়ে শতবর্ষী গাছের ছায়ায়

Icon

মো. জভেদ হাকিম

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০১৮, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

একটি প্রাচীনতম বটবৃক্ষ আর পাকুর গাছের মিলন যেন শত শত বছরের জীবন্ত সাক্ষী। একটি বট গাছের জীবদ্দশায় কত রাজা আর তার রাজ্যের ইতিহাস গাঁথা রয়েছে এর কোনো ইয়াত্তা নেই। পুরনো কোনো স্থাপনা দেখলে যেমন মানুষ নষ্টালজিয়ায় ভোগে তার চেয়েও বেশি মানুষ স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন যদি কোনো শতবর্ষী গাছের ছায়ায় যান।

ঘোরার স্থান ছিল ঢাকার পাশেই ধামরাই উপজেলার সাইট্টা গ্রাম। দে-ছুট ভ্রমণ সংঘ’র বন্ধুরা ব্যক্তিগত গাড়িতেই যে যার মতো ছুটছি। দিনটি ছিল শুক্রবার। তার পরও যানজটের মহামারী ছাড়িয়ে বেলা ১১টায় সাভারবাজার এলাকায় সবাই একত্রিত হই। জসিমের প্রচেষ্টায় খেজুররস পান শেষে গাড়ি হাঁকাই ধামরাইর পথে। নবীনগর পর্যন্ত ঠেলেঠুলে গাড়ি চলে। এরপর একটানে ঢুলিভিটা হয়ে ধানতারা। মাঝে জুমা নামাজের বিরতি। ধানতারা থেকে বামে মোড় নিয়ে গাড়ি যখন ছুটে সাইট্টার পথে তখন মনে হয় এ যেন এক প্রশান্তির পথ। সরষে ফুলে জমি হলদে বর্ণ। বাংলার সেই চিরচেনা সুনসান নিরিবিলি গাঁয়ের পথ। সবুজ প্রান্তর-গাছের ছায়া, পাখির কলতান শুনতে শুনতে এগিয়ে যাই। দূর থেকে গাড়ির জানালা দিয়ে যখন বটগাছ চোখে পড়ে তখন কিছুটা নিরাশ হয়ে পড়ি।

পিচঢালা পথ ছেড়ে গাড়ি ঢুকে মেঠো পথে। থামে গিয়ে একেবারে বটবৃক্ষের ছায়াতলে। আনন্দে মন নেচে উঠে। ওয়াও! চোখ ঠেকে কপালে। অবাক বিস্ময়ে শুধু তাকিয়ে রই। একি আসলেই বটবৃক্ষ নাকি ভিন্ন কিছু। নানা জায়গায় ঘুরতে গিয়ে জীবনে অনেক বট গাছের ছায়ায় বসার সুযোগ এসেছে কিন্তু এরকম আর কোনো বট গাছ আমার চোখে পড়েনি। আশ্চর্য সুন্দর সাইট্টা বট গাছের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে নিজেকে বেশ সুখী সুখী মনে হল। ভালো করে পরখ করতে থাকি। গাছের উপর থেকে বটের ঝুরি মানে শাখামূল ঝুলে, মাটির সঙ্গে মিশে গিয়ে এমন এক অদ্ভুদ রূপ ধারণ করেছে যার বর্ণনা দিয়ে পাঠকদের বুঝানোর মতো সাধ্য নেই আমার। যা শুধু স্বচক্ষেই দেখে অনুভব করা যাবে। এরকম একটি বট গাছের সান্নিধ্যে সবাই বেশ আনন্দিত।

ক্যামেরার শার্টারে শুধু ক্লিক ক্লিক শব্দ। উচ্ছ্বসিত না হয়ে উপায় আছে! একটি বট গাছ- একটি জীবন্ত ইতিহাস। সেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রইলাম আমরাও। গাছের আদ্যপান্ত জানতে এবার স্থানীয়দের খোঁজে নামি। দু-একজনের সঙ্গে ভাব জমাই। কিন্তু তথ্যসূত্র নির্ভরযোগ্য মনে হয় না। এদিকে পেটেও টান পড়েছে। ইচ্ছা ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ভাত-ভর্তা খাব, কিন্তু সময়ের আবর্তনে তা বিবর্ণ হয়ে সাইট্টা বট গাছের তলায় এসে ঠেকেছে। সব দোষ যানজটের। শহর-মহাসড়কের জ্যাম বর্তমানে ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য মহাযন্ত্রণায় পরিণত হয়েছে। সময় মিলিয়ে এখন আর কিছুই করা যায় না। এদিকে এই গ্রামের ধারে-কাছে কোনো খাবার হোটেলও নেই। ভাগ্য ভালো গাড়িতে হাঁড়ি-পাতিল ছিল। করিৎকর্মা ফারুক বাইকে চড়ে স্থানীয় বাজার থেকে চাল-ডাল-ডিম কিনে আনে। গ্রাম্য চা দোকানি সন্তু‘ষের সহযোগিতায় শুরু হয় রান্নার মহাযজ্ঞ। সে সুযোগে ঘুরে বেড়াই পুরো গ্রাম। ঘুরতে আর জানতে গিয়ে চোখে ধরা দেয় সাইট্টা গ্রামের নানা রূপ। জমির পর জমি লেবুবাগান।

থোকায় থোকায় ধরে আছে নানা জাতের লেবু। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে হাঁটু জলের ছোট নদী। গাছের ডালে ডালে নানা রঙের পাখি। জনমানবের কোলাহল নেই। যেন সাইট্টা গ্রামটি ওদের জন্য অভয়াশ্রম।

ভর সন্ধ্যায় রান্না শেষ। খেতে খেতেই পরিচয় হয় জনি দাস নামক এক তরুণের সঙ্গে। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গেল বেশকিছু তথ্য। ষাটটি পরিবার নিয়ে প্রথম এই গ্রামে বসতি শুরু। সেই থেকেই এই গ্রামের নাম ষাটটি থেকে সাইট্টা হয়েছে। বট গাছটি সম্পর্কে জানালেন, এটির বয়স আনুমানিক প্রায় পাঁচশ’ বছর। যদিও সুনির্দিষ্ট করে কোনো তথ্য কারও কাছে নেই। বট গাছটি প্রায় দুই একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। বটগাছটির পাশেই একটি পাকুর গাছ। এক সময় বট আর পাকুর এই দুই গাছের শাখা-প্রশাখা একত্রে মিলে প্রকাণ্ড এক অবিশ্বাস্য ভয়াল রূপ ধারণ করেছে। বট গাছটিকে ঘিরে ভূতুড়ে কিছু কল্পকাহিনী লোকমুখে চালু রয়েছে। ফলে এর ডালপালা-ঝুরি কাটা বা না ছাটায় গাছটি এখন বিশাল দৈত্যাকার ধারণ করেছে। বট গাছের পাশেই একটি নাট মন্দির রয়েছে। সেখানে নিয়মিত পূজা-আর্চনা চলে। অবশেষে শিয়াল পণ্ডিতদের হুক্কাহুয়া আওয়াজ আর কুয়াশা ভেদ করে ঘরে ফেরার পথ ধরি।

যাবেন কিভাবে

ঢাকার যে কোনো প্রান্ত থেকে নিজ নিজ সুবিধা অনুযায়ী গাবতলী ও উত্তরার থার্ড ফেস এবং আব্দুল্লাহপুর হয়ে ধামরাই উপজেলার ধানতারা বা কালামপুর বাজার হয়ে সাইট্টা গ্রামে যাওয়া যাবে।

পরিবহন

নিজস্ব বা রেন্ট-এ কার নিয়ে গেলে সুবিধা বেশি হবে। তবে গুলিস্তান থেকে ধামরাইর বাসে ঢুলিভিটা বাসস্ট্যান্ড বা কালামপুর বাজার। সেখান থেকে অটো বা ভ্যানে চেপে সাইট্টা। বাসে গেলে কালামপুর হয়ে গেলে সময় বেশ সাশ্রয় হবে।

ঘুরার সময়

সকাল সকাল সাইট্টা গ্রামের পথে বের হওয়াটাই মোক্ষম সময়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম