Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

ফুলের নাম ডালিয়া

Icon

ঘরেবাইরে ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ফুলের নাম ডালিয়া

ডালিয়া, এ এক সর্বজন প্রিয় ফুল। শীতকালীন ফুলের মধ্যে ডালিয়া অন্যতম। ডালিয়া ফুলের পাপড়ির দৃষ্টিনন্দন বিন্যাস ও বর্ণ বৈচিত্র্যের জন্য এটি সবার কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। অপরূপ রূপ লাবণ্যে ও বর্ণের প্রাচুর্যে মহিমান্বিত সুন্দর একটি ফুল হলো ডালিয়া। এর বৈজ্ঞানিক নাম Dahlia Variabilis। ডালিয়া কম্পোজিটি পরিবারভুক্ত। এ ফুলের আদিবাস স্থান মেক্সিকোর গুয়াতেমালায়। লর্ডবুটি নামের এক ব্যক্তি স্পেন থেকে ডালিয়া ফুল প্রথমে ইংল্যান্ডে নিয়ে আসেন। সেই ফুল দেখে সুইডেনের উদ্ভিদতত্ত্ববিদ আন্দ্রিয়াস গুস্তাভ ডাল নিজের নামের অনুকরণে ফুলের নাম রাখেন ডালিয়া।

ডালিয়া সারা বিশ্বের কাছে একটি পরিচিত ফুল, এমনকি বাংলাদেশেও একটি চিরপরিচিত ফুল। এ ফুল বাংলাদেশে ব্যাপক চাষ হচ্ছে।

ডালিয়া একটি লতাজাতীয় উদ্ভিদ। ফুলের গঠন ও বৈচিত্র্য অনুযায়ী ডালিয়াকে ইংল্যান্ডের ডালিয়াবিদরা ১১টি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন যা বর্তমানে সারা দুনিয়ায় সাধারণভাবে স্বীকৃত। এ ১১টি শ্রেণির আওতায় এটার প্রচুর জাত রয়েছে। ডালিয়ার একক ও যুগ্ম ফুল আছে। বৈজ্ঞানিকদের নিরলস সাধনায় ডালিয়া ফুলের অনেক শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে। লাল, সাদা, হলুদ, চকলেট, গোলাপি, বেগুনি, বেগুনিমিশ্রিত লাল, মঞ্জুশ্রী, ভিগাদ হলদে প্রভূতি রঙে ডালিয়া ফুটে থাকে। ডালিয়ার উন্নত জাতের মধ্যে রয়েছে সিঙ্গল, স্টার, অ্যানেমিন ফ্লাওয়ার্ড, কলারেট, পিওনি ফ্লাওয়ার্ড, ফরমাল ডেকোরেটিভ, ইন ফরমাল ডেকোরেটিভ, ডবল শো ফ্যান্সি, পম্পন, রয়্যাল হোয়াইন, ক্যাকটাস, ভ্যারাইটি গার্ল প্রভূতি। এর মধ্যে ক্যাকটাস, পম্পন ও ডেকোরেটিভ ডালিয়ার সমাদর সবচেয়ে বেশি। তা ছাড়া ভিন্ন ভিন্ন জাতের ডালিয়া ভিন্ন ভিন্ন সুন্দর নামে পরিচিত। এসব নামের মধ্যে রয়েছে কমেট, পিটার রামসে, হোয়াইট স্টার, আরব কুইন, ডরিস ডে, মারলিন, ম্যারি রিচার্ড, ডায়না গ্রেগরি, কর্নেল চ্যারিও, পোলার বিউটি, ডোরিয়া ইত্যাদি। ডালিয়া বৃক্ষপ্রেমীরা যারা চাষ করবেন তাদের আবহাওয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। যে দিন বৃষ্টি হবে সে দিন থেকে যতদিন পর্যন্ত মাটি স্যাঁতসেঁতে থাকবে ততদিন পানি দেওয়ার দরকার নেই। আবার গরমের সময় মাটি যখন শুকনো হয়ে ওঠে তখন পানির পরিমাণ বাড়িয়ে মাটি আর্দ্র করে তুলতে হবে। কারণ ডালিয়া গাছের জন্য আর্দ্র মাটি প্রয়োজন। তবে মাটি বেশি ভিজে কাদাকাদা হয়ে গেলে তা গাছের পক্ষে তেমন উপকারি হবে না, টবের গাছের ক্ষেত্রে সেই ব্যবস্থা করা উচিত। বৃষ্টির সময় গাছের ওপর ছাউনি দিতে পারলে ভালো কিংবা কোনো ছাউনির নিচে রাখলে গাছ নিরাপদে থাকবে। টবের গাছের ক্ষেত্রে প্রতিদিন নিয়ম করে পানি দিয়ে মাটিকে আর্দ্র রাখা উচিত।

ডালিয়া বীজ, মূলজ কন্দ, ডালকলম এবং ক্ষেত্রবিশেষে জোড় কলমের সাহায্যে বংশ বিস্তার করে। মূলজ কন্দ ও ডাল কলম থেকে চারা তৈরির পদ্ধতি হলো ডালিয়া গাছের গোড়ায় জন্মানো মূলজ কন্দ পরবর্তী বছর চারা তৈরির কাজে ব্যবহার হয়। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে ফুল শেষে গাছ নিস্তেজ হয়ে পাতা ও ডাঁটা শুকিয়ে এলে কন্দ পরিপক্ব ও সংগ্রহ উপযোগী হয়।

মাটির নিচ থেকে অক্ষত অবস্থায় কন্দ তুলে দু-একদিন বাতাসে শুকিয়ে আলুর মতো শুষ্ক বালিতে সংরক্ষণ করতে হয়। অতঃপর ভাদ্র-আশ্বিন মাসে কন্দগুলোকে অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক বালিমিশ্রিত বীজতলা বা টবে রোপণ করে সামান্য পানি সিঞ্চন করলে কয়েক দিনের মধ্যে কন্দের চোখ থেকে নতুন চারা বের হয়। চারা ২ থেকে ৫ সে.মি. লম্বা হলে মূলজ কন্দটিকে চারাসহ কেটে টুকরো করে নির্ধারিত জমিতে বা টবে রোপণ করা চলে। অপরদিকে আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ মাসে ডালিয়ার ডাল কলম করা যায়। এ সময় মূলজ কন্দে জন্মানো কচি চারা বা ডাল থেকে গিটসহ কেটে বা ভেঙে নিতে হয়। তা ছাড়া পুষ্ট কন্দ বা কাণ্ডের পাশে জন্মানো ১৫-২০ সে.মি. লম্বা পুষ্ট ডাল ও গিটসহ সংগ্রহ করা চলে। পরে ডালগুলোকে বালি ভর্তি টবে কিংবা জমিতে পুঁতে প্রয়োজন মতো হালকা সেচ দিলে ১০-১৫ দিনের মধ্যে ডালে শিকড় গজায়। শিকড় গজানোর পর কলমগুলোকে সাবধানে তুলে পলিথিন ব্যাগে বা ছোট টবে ৫০ শতাংশ গোবরমিশ্রিত মাটিতে লাগাতে হয়। ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে চারা সতেজ হয়ে উঠলে নির্ধারিত জমিতে বা টবে রোপণ করা চলে।

বাংলাদেশের পরিবেশে আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ পর্যন্ত সময়ে জমিতে কিংবা টবে ডালিয়ার চারা রোপণ করা যায়। ডালিয়ার মাটি গভীরভাবে নরম ও ঝরঝরে করে তৈরি করতে হয়।

ডালিয়া চাষের জমিতে জাত ভেদে ৬০ থেকে ৯০ সে.মি. দূরত্ব সারিবদ্ধভাবে আর প্রতি টবে একটি চারা রোপণ করতে হয়। টবের আকার ২৫ সে.মি. হলে ভালো হয়। চারা লাগানোর পর থেকে গাছে এমনভাবে সেচ দিতে হয় যাতে কখনো পানির ঘাটতি না পড়ে ও জলাবদ্ধতা দেখা না দেয়। তা ছাড়া গাছের পাতায় মাঝে মাঝে পানি সিঞ্চন করা ভালো। গাছ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এতে লাঠি দিয়ে ঠেস দিতে হয়।

ফুলের আকার বড় করার জন্য প্রতি শাখায় ১টি করে কুঁড়ি রেখে বাকিগুলো ভেঙে দেওয়া যেতে পারে। ডালিয়া গাছে সাধারণ রেড স্পাইডার এবং রেড মাইভ ধরনের পোকা হয়। এ পোকা থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় হলো প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে ক্যালিথিন বা নোবাকন নামক ওষুধের ২০ ফোঁটা এক লিটার পানি ভালো করে গুলিয়ে সেই মিশ্রণ দিয়ে ঝারির সাহায্যে গাছগুলোকে ভিজিয়ে দেওয়া যায়, তাহলেই এ ধরনের পোকার আক্রমণ থেকে গাছকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

 

ডালিয়া

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম