Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

ইনডোর প্ল্যান্টের সাতসতেরো

সবুজের সমারোহ। কার না পছন্দ। ইনডোর প্ল্যান্ট দিয়ে ঘর, বারান্দা সবুজায়ন করা সম্ভব। ছোট বারান্দা হয়ে উঠতে পারে সবুজের স্বর্গ। মন, প্রাণ জুড়ানোর উৎকৃষ্ট জায়গা। ইনডোর প্ল্যান্টের সাতসতেরো লিখেছেন-

Icon

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দুচোখ একটু সবুজ খুঁজে বেড়ায়। কোথায় সবুজ। চোখ মেললেই দেখা যায় সারি সারি দালানকোঠা। সবুজের বড় অভাব। কৈশোর, যৌবন যাদের গ্রামে কেটেছে তাদের কষ্টটা অনেক বেশি। সবুজের মধ্যেই সে বেড়ে উঠেছে। কংক্রিটের এই শহর তাকে টানে না। বাসার দক্ষিণে কিংবা উত্তরের বারান্দা আছে। রাস্তার সাইডে ছোট বারান্দা থাকতে পারে। ছোট হোক। অল্প একটু জায়গা। এই রোদ এই অন্ধকার। এরই মধ্যে হতে পারে সবুজের সমারোহ। সবুজের একটুখানি স্বর্গ। যান্ত্রিকতায় বুক ভরে দম নেওয়ার জায়গা। জায়গা কতটুকু, কেমন আলো পড়ে। তার ওপর গাছ রাখা নির্ভর করবে। ইনডোর প্ল্যান্টের বেসিকটা যখন জানবেন। তখন আপনার জন্য কাজটা যেমন সহজ হবে। তেমনি সফলতা পাবেন দ্রুত। যারা বেসিক জানেন না। তাদের চেয়ে।

আলো : আলো একটু কম পড়ে। তাহলে জিজি প্ল্যান্ট, সবুজ ন্সেক প্ল্যান্ট, মানি প্ল্যান্ট, ইঞ্চ, ফিলোডেনড্রন, জেইড, ল্যাকি বাম্বু, অ্যাগ্নোনিমা, ড্রাসিনা ইত্যাদি গাছ লাগাতে পারেন। সপ্তাহে একদিন। গাছগুলো কিছুটা সময় রোদে রাখা যেতে পারে। অতিরিক্ত আলো অনেক ইনডোর প্ল্যান্ট সহ্য করতে পারে না। পাতা পুড়ে যায়। শেডের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

পানি : যখন মাটি শুকিয়ে যাবে। তখন পানি দিতে হবে। পানি বেশি দিলে গাছ খুব ভালো হবে। ব্যাপারটা একদমই তা নয়। বেশি পানি দিলে গাছের গোড়া পচে যাবে। তবে ফিটোনিয়া, সাকুলেন্ট এরা পাতায় পানি ধরে রাখে। এদের কম পানি দিলেও চলে। কোকোপিট, বালু এসব সঠিকভাবে মিডিয়ার রাখুন। এরা পানি ধরে রাখতে পারে। পাশাপাশি টব হালকা থাকবে। ওজন কম হবে।

গাছ কিনেই লাগাতে নেই : ইনডোর প্ল্যান্ট কিনেই লাগাতে নেই। দিন পনেরো রেখে দিন। নতুবা গাছ স্ট্রেসে পড়ে মারা যেতে পারে। পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সময়টা দিতে হয়। ছত্রাকনাশক দিয়ে গাছ ক্লিন করা উত্তম। ম্যনসার, মেটারিল সহজলভ্য দুটি ছত্রাকনাশক।

মাটি তৈরি : সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মাটিতে পানি নিষ্কাশনের উপাদান থাকবে। আবার প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণও থাকবে। দুয়ের মিশ্রণে উত্তম মাটি/মিডিয়া তৈরি হবে। মাটি তৈরির বিভিন্ন ফরমুলা বিদ্যমান। ২৫ ভাগ বাগানের ঝুরঝুরে মাটি, ২৫ ভাগ কেঁচো সার, ২৫ ভাগ ককোপিট, ২৫ ভাগ সিলেটি মোটা বালু। এ মিশ্রণ সহজ, বেশ জনপ্রিয়। এর সঙ্গে হাড়ের গুঁড়া, একটু পটাশ, একটু ছত্রাক নাশক দেওয়া উত্তম। ছত্রাকনাশক মাটিকে ক্ষতিকর জীবাণুমুক্ত রাখবে। মাটি তৈরি করে কিছুদিন রোদে রাখুন। মাটিতে কিছু মাইক্রো নিউটেন্ড থাকে। যা গাছ গ্রহণ করতে পারে। মাটির জায়গায় বালু দিলে এ উপকারটুকু হবে না। বালু ধুয়ে শুকিয়ে নেওয়া ভালো। মাটি ঝুরঝুরে হালকা হতে হবে।

সার : ভেষজ এবং রাসায়নিক। দুভাবে সারের উপকার পাওয়া সম্ভব। কলার খোসা ভিজিয়ে সে পানি দেওয়া যায়। আবার পটাশ সার দিতে পারেন। দুটিই একই কাজ করবে। গাছের ফুল ধরতে সাহায্য করবে। এপসম সল্ট, হাইড্রেজেন পার অক্সাইড পানিতে গুলে দিতে পারেন। হাইড্রোজেন পার অক্সাইড মাটিতে ক্ষতিকর ছত্রাক নির্মূল করে। অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ায়। কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পোস। ইনডোর প্ল্যান্টের জন্য যতগুলো নিউটেন্ড প্রয়োজন। কম বেশি প্রায় সব আছে এতে।

কীভাবে কোথায় রাখবেন : বারান্দায় গ্রিলের সঙ্গে অনেকের লাগোয়া র‌্যাক করে নেন। যেটা ভেতরের অংশে থাকে। সেখানে টব রাখেন। অনেকে এভাবে র‌্যাক করে বাইরেও রাখতে পারেন। আবার গ্রিলের সঙ্গে ঝুলন্ত টব। এমনটাও খারাপ নয়। স্টিলের, কাঠের, রডের স্ট্যান্ড কিনতে পাওয়া যায়। নানা রকম ডিজাইন। এ রকম স্ট্যান্ডে টব রাখা যায়। বাজেট একদমই কম। তাহলে ফ্লোরের ওপর লাইন ধরে টব রাখতে পারেন। কৃত্রিম ঘাস কিনতে পাওয়া যায়। গাছের সঙ্গে বেশ মানাবে। ফ্লোরটা এমন ঘাসে ঢেকে দিতে পারেন। এ সবের কোনোটাই মনমতো হচ্ছে না। ওয়েল্ডিংয়ের দোকানে যেমনটা চান। তাদের বুঝিয়ে বলুন, ঠিক তেমনটাই করে দেবে তারা। টব কীভাবে রেখেছেন এসব সৌন্দর্যের অন্যতম অনুসঙ্গ। অনেক সুন্দর গাছ। এলোমেলোভাবে রেখে দিলেন। উপযুক্ত পটে রাখলেন না। দেখতে ভালো লাগবে কি?

অল্প যত্নের ইনডোর প্ল্যান্ট : একদম নতুন। লাকি বাম্বু, জেজে প্ল্যান্ট, মানি প্ল্যান্ট বেছে নিন। অভিজ্ঞতা হোক। তারপর না হয় আস্তে আস্তে বাড়াবেন। অতি যত্নে ইনডোর প্ল্যান্ট বেশি মারা যায়। এমনটাই অভিজ্ঞরা বলেন। শুরুটা অল্প গাছ দিয়ে করা ভালো। এমনটাই বললেন ইনডোর প্ল্যান্ট এক্সপার্ট সুষমা ইকবাল।

টবের রকমফের : মাটি, সিরামিক, প্ল্যাস্টিক টব কিনতে পাওয়া যায়। কোনটা কাপ, কোনটা পাতিল। এমন ভিন্ন ভিন্ন আকৃতির। সাইজ বড়, ছোট, মাঝারি বিভিন্ন রকম। গাছ অনুযায়ী টব পছন্দ করতে হবে। গাছ ছোট। অনেক বড় টব। দেখতে সুন্দর লাগবে না। এ রকম হলে গাছ শাখা প্রশাখা বাড়ায়। তবে ফুল কম দেয়। সাদা টব কিনে নিজেও কালার করে নিতে পারেন। টব হালকা হলেই ভালো। স্থানান্তরে সুবিধা।

খোঁজখবর : পৃথিবীটা এখন হাতের মুঠোয়। মোবাইলের স্ক্রিনে হাত রাখলেই হলো। টব, স্ট্যান্ড, গাছ আর যা কিছু চাই। সবই আপনি অনলাইনে কিনতে পারবেন। বাসায় সবকিছু পৌঁছে দেবে। একটু বেছেটেছে কিনতে চান। শখের জিনিস তো। একটু খাটুনি হবে এ জন্য। নার্সারিতে যেতে হবে। ঢাকার আগারগাঁও, শাহবাগ, মিরপুর ১০-এ বড় বড় নার্সারি আছে। আর ইনডোর প্ল্যান্টের দোকান। সেটা আপনার এলাকায় খোঁজ নিলে দু-চারটা পাবেন। সবুজের প্রতি মানুষের ভালোবাসা দিন দিন বাড়ছে। সে কারণে প্রচুর ইনডোর প্ল্যান্ট সপ গড়ে উঠেছে। এ শহরের বিভিন্ন এলাকায়।

আরও কিছু তথ্য : ইনডোর প্ল্যান্টস বাংলাদেশ। ফেসবুকে জনপ্রিয় একটি গ্রুপ। সদস্য সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। এ গ্রুপের ডক ফাইলগুলো পড়ে নিতে পারেন। যতটা দরকার। প্রায় সবই এখানে লেখা আছে। এ ছাড়া আমাদের বাগান, গাছ অদল বদল ও পরিচর্যা, এসো বাগান করি, সবুজ বাগান সোসাইটি, সবুজ কথন এমন অসংখ্য গ্রুপ আছে। যেখানে ইনডোর প্ল্যান্ট সম্পর্কে জানতে পারবেন। কেনাকাটাও করা সম্ভব।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম