জেনে নিন
ডেঙ্গু প্রতিরোধে চাই সচেতনতা
গাজী মুনছুর আজিজ
প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঢাকাসহ সারা দেশেই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এবার ডেঙ্গুতে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। এর কারণ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মধ্যে যেসব উপসর্গ দেখা যাচ্ছে যা ডেঙ্গুর প্রথাগত উপসর্গ নয়। ফলে অনেকেই বুঝতে পারেন না যে তার ডেঙ্গু হয়েছে। আর সেটি বুঝতে না পারার কারণে হাসপাতালে যেতে দেরি করছেন অনেকে। এরপর হাসপাতালে নেওয়া হলে তারা মারা যাচ্ছেন।
মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ নিয়াতুজ্জামান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এবার বড় একটি কারণ হলো ডেঙ্গুর যে নতুন উপসর্গ এগুলোর সঙ্গে মানুষ অপরিচিত। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রেই তারা যখন হাসপাতালে পৌঁছাচ্ছেন তখন অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। তাই দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এ ছাড়া সাধারণত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে জ্বর, প্রচণ্ড মাথাব্যথা, শরীর ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
তবে এবার এ ধরনের উপসর্গ নিয়ে রোগীরা হাসপাতালে গেলেও সংখ্যায় ছিল কম। বরং সে তুলনায় এবার হাসপাতালে যারা ভর্তি হচ্ছেন তাদের মধ্যে দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন এমন রোগীর সংখ্যা বেশি। অর্থাৎ তারা হয়তো আগে একটি ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
এখন তারা হয়তো অন্য একটি ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত। ফলে যে উপসর্গগুলো নিয়ে তারা হাসপাতালে আসছেন-সেগুলো প্রথাগত ডেঙ্গু উপসর্গের মতো নয়। আর একে বলা হচ্ছে, ‘কমপ্লিকেটেড ডেঙ্গু সিনড্রোম বা এক্সটেনডেড ডেঙ্গু সিনড্রোম।’ আর এ উপসর্গগুলো কোনোভাবেই অবহেলা করার সুযোগ নেই।
দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়া : তিন-চার দিন ধরে ডায়রিয়ায় ভুগছেন কিন্তু সেটি ভালো হচ্ছে না। এমন উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে। বর্তমানে ডেঙ্গুর নতুন যেসব উপসর্গ দেখা যাচ্ছে তার মধ্যে এটি বেশ উল্লেখযোগ্য।
জ্বর না থাকা ও বমি : হাসপাতালে এমন সব ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন যারা এ মৌসুমে জ্বরে আক্রান্তই হননি। অর্থাৎ জ্বর না হলেও পরীক্ষার পর তারা ডেঙ্গু আক্রান্ত বলে জানা গেছে। এ ছাড়া গরমের কারণে অনেকে হয়তো দুয়েক দিন হালকা জ্বরে ভুগেছেন কিন্তু সেটি পাত্তা দেননি। কিন্তু পরে সেটি মারাত্মক ডেঙ্গুতে পরিণত হয়েছে।
প্রচণ্ড মস্তিষ্কে প্রদাহ : প্রচণ্ড মস্তিষ্কে প্রদাহ অনেকটা মেনিনজাইটিসের সমস্যার মতোই। এতে প্রচণ্ড মাথাব্যথা দেখা দেয়। অল্প জ্বরের পর কারও যদি প্রচণ্ড মাথাব্যথা থাকে, ঘাড় শক্ত হয়ে যায়, হাত-পা শক্ত হয়ে যায় কিংবা প্রচণ্ড খিঁচুনি দেখা দেয় ও হাত-পা ফুলে যায়। তাহলে দেরি না করে ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো উচিত।
বুকে এবং পেটে পানি জমা ও ব্যথা : শরীরের বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষ করে বুকে এবং পেটে যদি পানি জমে যায়, তাহলে দেরি না করে হাসপাতাল কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অসহ্য রকমের পেট ব্যথাও ডেঙ্গুর কারণ হতে পারে।
ডেঙ্গু হলে বাড়িতে যা করবেন : ইউনাইটেড হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আফসানা বেগমের মতে ডেঙ্গু হলে বাড়িতে কিছু করণীয় কাজ রয়েছে। যেমন-পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে। ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস, খাবার স্যালাইন। ডেঙ্গুজ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ আটটি প্যারাসিটামল খেতে পারবেন। কিন্তু কোনো ব্যক্তির যদি লিভার, হার্ট এবং কিডনিসংক্রান্ত জটিলতা থাকে, তাহলে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন, ক্লোফেনাক, আইবুপ্রোফেনজাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর সময় এ জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
যা করা যাবে না : ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে প্লেটলেট এখন আর মূল বিষয় নয়। প্লেটলেট হিসাব নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। প্লেটলেট কাউন্ট ১০ হাজারের নিচে নামলে বা শরীরের কোনো জায়গা থেকে রক্তপাত হলে প্রয়োজন বোধে প্লেটলেট বা ফ্রেশ রক্ত দেওয়া যেতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতি খুবই কম দেখা যায়। অনেকে বলেন, পেঁপে পাতার জুস ইত্যাদি খেলে প্লেটলেট বাড়ে। আসলে এ সবের কোনো ভূমিকা নেই। জ্বর কমে যাওয়ার পর সংকটকাল পেরিয়ে গেলে আপনা থেকেই প্লেটলেট বাড়তে শুরু করে। জ্বরের শেষের দিকে রক্তচাপ কমে যেতে পারে অথবা মাড়ি, নাক, মলদ্বার দিয়ে রক্তপাত হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে তাই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করণীয় : ডেঙ্গু রোধে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাসহ পাঁচদফা নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর মাউশি।
নির্দেশনাগুলো হলো-খেলার মাঠ ও ভবনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
মাঠ বা ভবনে জমে থাকা পানি দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য যেসব ফুলের টব রাখা হয়েছে, সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। এডিস মশার প্রজননস্থলে যাতে পানি জমতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকরা ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায় নিয়ে প্রত্যহ শিক্ষার্থীদের জানাবেন।
