প্রকৃতি
হলুদ শাপলা যেন স্বর্ণের আভা
শেখ আব্দুর রহিম
প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সাদা শাপলা, লাল শাপলা ও নীল শাপলার সঙ্গে সবাই কমবেশি পরিচিত হলেও হলুদ শাপলা অনেকের পরিচিতির বাইরে। বর্ণিল রঙের এ ফুলটি বেশিরভাগ মানুষের অজানা ও অচেনা। এমন ফুলের কথা মনে আসতে অনেকের মনে জাগায় বিস্ময়ের ছাপ। নামটি যতই অপরিচিত হোক না কেন এমনি ফুলের দেখা মিলছে দেশের বিভিন্ন বাড়ির ছাদে, পার্কে ও নানা প্রতিষ্ঠানের আঙিনায়।
হালকা হলুদ রঙের পাপড়ি আর গাঢ় হলুদ রঙের পুংকেশর সংবলিত সোনালি আভার এক ফুল হলুদ শাপলা। চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা গাঢ় সবুজ রঙের পাতা ও সবুজাভ কাণ্ড গাছটির সৌন্দর্যে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। ৪-৫টি বৃতি, ১৩-১৫টি পাপড়ি আর ১৫-২০টি পুংকেশর নিয়ে ফুলগুলো দেখতে হলুদ তারার মতো মনে হয়। হাতের তালু সমান বৃতিগুলো ১১-১৪ সেমি হয়ে থাকে। এছাড়া ফুলগুলোতে পুরু রাইজোম এবং লম্বা স্পঞ্জি লতানো স্টোলন থাকে। যেগুলো ছোট ছোট কলার মতো ছোট হলুদ শিকড়ের গুচ্ছ বহন করে। গাছটি চারা থেকে বাড়তে পারে অথবা এর স্টোলন থেকে নতুন অঙ্কুর গজাতে পারে। এর বীজ সবুজ বেরিতে থাকে যা পানির নিচে জন্মায়। গাছটির বড় চ্যাপ্টা পাতাগুলো বাদামি প্যাটার্নিংসহ সবুজ এবং জলের উপরিভাগে ভেসে থাকে। বছরের সব সময় এ শাপলা ফুটতে দেখা যায়। তবে গ্রীষ্মকালীন এ ফুল তুলনামূলক বেশি ফুটে থাকে। সৌন্দর্যে স্বর্গীয় দ্যুতি ছড়ানো এ ফুলগুলো ভোর থেকে শেষ বিকাল পর্যন্ত খোলা থাকে। রাতে বন্ধ হয়। যখন গাছগুলো ভিড় করে, তখন পাতাগুলো জলের ওপরে উঠতে পারে। উদ্ভিদটি মূলত অ্যাকুরিয়াম, চৌবাচ্চা ও পুকুরে আকর্ষণীয় এবং শোভাময় উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।
বর্ণিল রঙের এ মূল নাম Nymphaea mexicana. স্থানভেদে একে হলুদ শাপলা, মেক্সিকান ওয়াটারলিলি থাই শাপলা ও বানানা ওয়াটারলিলি নামে ডাকা হয়। এটি একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ। উদ্ভিদটি প্রথম মেক্সিকোতে আবিষ্কৃত হয়েছিল, যা প্রজাতির নামের জন্য দায়ী। বেশিরভাগ উদ্ভিদপ্রেমীরা ফুলটিকে থাই শাপলা হিসাবে চেনে। কারণ থাইল্যান্ডে ইনডোর প্লান্ট ও গৃহ অভ্যন্তরীণ গাছটির প্রথম চাষ শুরু হয়। পরে ক্রমান্বয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। গবেষকদের মতে, এটি জলাভূমিতে বেড়ে ওঠে এবং সহজেই খাল ও অন্যান্য অগভীর জলপথে আক্রমণ করে। কখনো কখনো এর পরিধির ব্যাপকতা একটি উপদ্রব হয়ে উঠতে পারে।
ভারতে আম্বাল নামের আয়ুর্বেদিক ওষুধ বানাতে এ ফুলকে ঔষধি গাছ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে এ ওষুধ অপরিপাকজনিত রোগের পথ্য হিসাবে কাজ করে আসছে। এছাড়া ফুলটিতে বহুমূত্র রোগের জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধি গুণাগুণ বিদ্যমান।
