Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

ভ্রমণ

মিরসরাইয়ে ঝরনা ও লেকের সৌন্দর্য

Icon

আজহার মাহমুদ

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মিরসরাইয়ের পাহাড় রেঞ্জটি একটি ঝরনার ঝুরিবিশেষ। এই একটি এলাকায় যত ঝরনা আছে, চিন্তা করা কঠিন হয়ে যায় মাঝে মধ্যে। ঝরনার পাশাপাশি আছে ঝরনা ট্রেইল বা স্থানীয় ভাষায় ছড়া, আর শুদ্ধভাবে বলতে গেলে ঝিরিপথ। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঝরনায় পানি বেশি থাকে, তাই পর্যটকরাও এ সময় এসে বেশ আনন্দ পান। ঝরনার পানিতে শরীর ভেজাতে পর্যটকরা দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন। আপনি চাইলে ঘুরে আসতে পারেন চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের এ সাত ঝরনায়। নিচে সেসব ঝরনার বর্ণনা দেওয়া হলো।

খৈয়াছড়া ঝরনা

মিরসরাইয়ের সবকটির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ঝরনা হলো খৈয়াছড়া। যার আছে আটটি স্তর। এরই মধ্যে এ ঝরনা দেশ-বিদেশে আলোচিত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা আসছেন এ নয়নাভিরাম ঝরনা দেখতে। এ ঝরনায় যাওয়ার জন্য প্রথমেই মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া বাজারের কাছে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে নামতে হবে। সেখান থেকে ১০০ টাকা সিএনজি অটোরিকশা ভাড়ায় খৈয়াছড়া ঝরনার ঝিরির কাছে আসতে পারবেন। আর যদি সম্পূর্ণ পথ ট্র্যাকিং করে যেতে চান, তবে স্থানীয় যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে পথের সন্ধান পাবেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েতে নেমে পূর্বদিকে গ্রামের রাস্তা ধরে মিনিট দশেক হাঁটার পর রেললাইন পাবেন। রেললাইন পার হয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট হাঁটলে ঝিরির দেখা পাবেন। জঙ্গলের ভেতর দিয়ে ঝিরিপথ ধরে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক হাঁটলে খৈয়াছড়া ঝরনার কাছে পৌঁছে যাবেন। পথে আরও অসংখ্য পর্যটকের সন্ধান পাবেন, তাই পথ হারানোর ভয় নেই। বিশেষ প্রয়োজনে ঝিরি পথের শুরুর জায়গা থেকে গাইড নিতে পারবেন।

নাপিত্তাছড়া ঝরনা ও ট্রেইল

এখানে মূলত তিনটি ঝরনা রয়েছে। এগুলো হলো- কুপিকাটাকুম, মিঠাছড়ি এবং বান্দরকুম বা বান্দরিছড়া। ঝরনাগুলোতে যাওয়ার যে ঝিরিপথ রয়েছে, সেটিকে নাপিত্তাছড়া ট্রেইল বলে। এ ঝরনায় যেতে প্রথমে আপনাকে মিরসরাইয়ের নয়দুয়ারিবাজারে নামতে হবে। নয়দুয়ারি বাজারে নেমে সেখান থেকে স্থানীয় গাইড নিয়ে অথবা নিজেই নাপিত্তাছড়া ঝরনায় চলে যেতে পারেন। নয়দুয়ারি থেকে হেঁটে যেতে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট সময় লাগবে।

মহামায়া লেক ও ঝরনা

মহামায়া লেক বাংলাদেশের অন্যতম কৃত্রিম হ্রদ। এ লেকের টলটলে পানি আর পাহাড়ের মিতালি ছাড়াও এখানে পাহাড়ি গুহা, রাবার ড্যাম ও অনিন্দ্য সুন্দর ঝরনা রয়েছে। বোটে চড়ে লেকে ঘোরাঘুরির পাশাপাশি চাইলে পাহাড়ের গা ঘেঁষে নেমে আসা ঝরনার শীতল পানিতে ভিজে শরীর ও মনকে অপার্থিব প্রশান্তি দিতে পারেন। মহামায়া লেকে আছে কায়াকিং করার সুবিধা এবং চাইলে তাঁবুতে রাতে ক্যাম্পিং করে থাকতে পারবেন। মহামায়া লেকে আসতে হলে প্রথমে আপনাকে মিরসরাইয়ের ঠাকুরদিঘি বাজারে নামতে হবে। ঠাকুরদিঘি থেকে জনপ্রতি ১৫ টাকা সিএনজি অটোরিকশা ভাড়ায় চলে যেতে পারবেন মহামায়া ইকোপার্কের মেইন গেটে অথবা সিএনজি অটোরিকশা রিজার্ভ করে (ভাড়া ৮০ থেকে ১২০ টাকা) চলে আসবেন মহামায়া ইকো পার্ক। এ ইকো পার্কের ভেতরেই মহামায়া লেকের অবস্থান।

বাওয়াছড়া লেক ও ঝরনা

বাওয়াছড়া লেকের চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে যে কেউ মনোমুগ্ধ হবেন; যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা কোনো নিখুঁত ছবি। ঝরনার পানি আছড়ে পড়ার শব্দ এখানে নূপুর ধ্বনির মতোই মধুর। দুপাশের উঁচু পাহাড় থেকে পানি অবিরাম লেকে গড়িয়ে পড়ার দৃশ্য অপূর্ব প্রশান্তি এনে দেবে। সেই সঙ্গে পাহাড়ি সবুজের ফাঁকে পাখির কলতান মন কেড়ে নেয়। ভরা পূর্ণিমা রাতে বাওয়াছড়া লেক ক্যাম্পিংয়ের জন্য আদর্শ জায়গা। এ লেকে যেতে হলে আপনাকে মিরসরাই উপজেলার ছোট কমলদহ বাজারে নামতে হবে। সেখান নেমে দেড় কিলোমিটার পূর্ব দিকে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত বাওয়াছড়া লেক।

বোয়ালিয়া ঝরনা ও ট্রেইল

ঝরনা ও ঝিরিপথ বোয়ালিয়া ট্রেইলকে করেছে বহুগুণ দর্শনীয়। এক রাস্তায় আপনি পাবেন তিনটি ঝরনার দেখা। বোয়ালিয়া ট্রেইলে আছে বোয়াইল্যা, বাউশ্যা, অমরমানিক্য ঝরনা। দুই দিকে উঁচু পাহাড় আর মাঝখানে গিরিপথ, পাথুরে দুর্গম ঝিরি-যার দুপাশে গহিন জঙ্গল বোয়ালিয়া ট্রেইলকে করেছে এডভোরাস। এ ট্রেইলে যেতে হলে প্রথমে আপনাকে মিরসরাই বাজারে নামতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি আটোরিকশায় যেতে হবে ব্র্যাক পোলট্রি ফিডের কারখানায়। এরপর বামে গেলেই পাবেন ঝরনার পথ। এ ছাড়া স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা নিতে পারেন যে কোনো সময়।

সোনাইছড়ি ঝরনা ও ট্রেইল

মিরসরাই এলাকায় সবচেয়ে সুন্দর ট্রেইল হচ্ছে সোনাইছড়ি। ঝরনার সঙ্গে ঝিরিপথের সঙ্গে ছোট ছোট গুহা আর খুম আপনাকে দেবে প্রকৃতির দারুণ সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ। এ ট্রেইলে যেতে হলে প্রথমে আপনাকে মিরসরাইয়ের হাদি ফকিরহাট বাজারে নামতে হবে। সেখান থেকে হাদি ফকিরহাট জামে মসজিদের গলি ধরে হেঁটে অথবা সিএনজি অটোরিকশায় বড়পাথর যেতে হবে। সেখান থেকে শুরু করবেন ট্রাকিং।

রূপসী ঝরনা ও ট্রেইল

রূপসী ট্রেইলে প্রথম ঝরনা দর্শনে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন। এ ঝরনার পথ ধরে এগোলেই ভেতরে পাবেন দুটি পথ। দুটো পথ যেমন গহিনে, তেমনি অসাধারণ; সেই সঙ্গে দুটো পথেই দেখা মিলবে চমৎকার দুটি ঝরনা। রূপসী ঝরনার অনিন্দ্য সুন্দর রূপের কারণে স্থানীয়রা একে রূপসী ঝরনা নাম দিয়েছে। আঁকাবাঁকা গ্রামীণ সবুজ-শ্যামল মেঠোপথ পার হয়ে পাহাড়ের পাদদেশে গেলেই শোনা যাবে ঝরনার পানি গড়িয়ে পড়ার অপরূপ নূপুর ধ্বনি। দুই পাশে সুউচ্চ পাহাড়। শাঁ শাঁ শব্দে উঁচু পাহাড় থেকে অবিরাম শীতল পানি গড়িয়ে যাচ্ছে ছড়া দিয়ে। এ ঝরনায় যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে মিরসরাইয়ের বড়দারোগাহাট বাজারে নামতে হবে। এরপর সিএনজি অটোরিকশাযোগে বড়দারোগাহাট বাজারের উত্তর পাশের ব্রিকফিল্ড সড়ক দিয়ে পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত যেতে হবে। সেখান থেকেই ঝরনার উদ্দেশে হাঁটা শুরু করবেন।

সতর্কতা

ঝরনায় দুর্ঘটনা এড়াতে প্রশাসন পর্যটকদের জন্য যে নির্দেশনা দিয়েছে, তা অবশ্যই মানতে হবে। এ নির্দেশনা না মানলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনারও ঝুঁকি আছে। এ ছাড়া ঝরনায় গোসল করতে গিয়ে ওপর থেকে লাফ দেওয়া, পানিতে বেশিক্ষণ না থাকাই শ্রেয়। বিশেষ করে লাফ দিয়ে দুর্ঘটনার শিকার অনেকেই হয়েছে। এ ছাড়া বর্ষার সময় পাহাড়ের চূড়া পিচ্ছিল থাকে। তাই পাহাড়ের চূড়া থেকে পড়েও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় ওঠা থেকে বিরত থাকবেন।

থাকা-খাওয়া-যাতায়াত

ঝরনায় যাতায়াতের রাস্তা ওপরে বলা আছে, চট্টগ্রামের একে খান-অলংকার থেকে মিরসরাইয়ের বাস যে কোনো সময় পাবেন। আপনার পছন্দের ঝরনার স্থানে নেমে যাবেন। আর ঢাকা থেকে বাসে অথবা ট্রেনেও আসতে পারেন মিরসরাই। আপনার পছন্দের ঝরনার লোকেশনে বাসের সুপারভাইজারকে বললে নামিয়ে দেবে। একইভাবে দেশের যে কোনো স্থান থেকে আসতে পারবেন ভ্রমণপিপাসুরা। এ ছাড়া মিরসরাইয়ে থাকা-খাওয়ার জন্য ভালো মানের হোটেল-রেস্টুরেন্ট রয়েছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম