|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মৃৎ অর্থ মাটি, শিল্প অর্থ সৃষ্টিশীল কাজ। দুটো শব্দ মিলে তৈরি করে মাটির তৈরি সৃষ্টিশীল কাজ। মৃৎশিল্পী শব্দটি আমাদের অতিপরিচিত এবং প্রাচীনকাল থেকে বয়ে আসছে। মৃৎশিল্পী বাঙালির ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশজুড়ে। প্রাচীনকালে পুরো সভ্যতার বেশিরভাগ অংশ ছিল মৃৎশিল্পীদের দ্বারা প্রভাবিত। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এটি আজ কবি আল-মাহমুদের নোলক কবিতার পঙ্ক্তির মতো হয়ে গেল (আমার মায়ের সোনার নলক হারিয়ে গেছে শেষে, হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে)। এখন প্রযুক্তির ছোঁয়াতে এটি মানুষের কাছে দুর্লভ বস্তু হয়ে গেছে। তবে এর একটু দেখা মেলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ‘শারদীয় দুর্গাপূজার’ সময়। পূজাতে বিভিন্ন প্রতিমা তৈরি এবং বিভিন্ন মাটির পাত্র এবং খেলনার জিনিস তৈরির কাজে এখনো মৃৎশিল্পের ব্যবহার রয়েছে। আর তাতে বেঁচে আছে মৃৎশিল্পের প্রাণটুকুও। পূজাতে আরও দেখা যায়, মাটির তৈরি শখের হাঁড়ি, টেরাকোটা, পুতুল, মাছ, পেয়ালা, ফুলদানি ইত্যাদি। এগুলো মৃৎশিল্পের নিদর্শন। এসব মাটির জিনিসপত্র এতটা সৌন্দর্যবর্ধন করে, যা অন্যান্য প্লাস্টিকের বা ধাতব প্রকৃতির তৈরি জিনিসের চেয়ে আলাদা। রং করা এসব মৃৎশিল্পের জিনিসের কদর সব শ্রেণিপেশার মানুষের রয়েছে। পূজাসহ বিভিন্ন উৎসবে এসব জিনিসের চাহিদা ভালোই থাকে। তবে পূজাতে মৃৎশিল্পের জিনিসপত্রের উপস্থিতি বেশি থাকে; যা কিনা পূজার সৌন্দর্য এবং আকর্ষণীয়তা বৃদ্ধি করে। ছোট শিশুরা ব্যস্ত থাকে এসব মৃৎশিল্পের জিনিসপত্র ক্রয় করার জন্য। তাদের পাশাপাশি বয়স্ক লোকজনও এসব জিনিসপত্র ক্রয়ে আগ্রহী থাকতে দেখা যায়।
মাটির সৃষ্টিশীল এসব কাজের জন্য দরকার পরিষ্কার এঁটেল মাটি। এ মাটি বেশ আঠালো, তাই যে কোনো জিনিস দিয়ে তৈরি করা যায়। এ ছাড়া কাঠের চাকা, চুলা, ছোটখাটো কিছু যন্ত্রপাতি এ কাজে ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি কুমারদের হাতের নৈপুণ্য ও কারিগরি দক্ষতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। মৃৎশিল্প তৈরিতে এর কারিগরদের অনেক বেশি শ্রমের দরকার হয়।
কিন্তু শ্রম অনুসারে তারা উপযুক্ত পারিশ্রমিক পায় না। বঞ্চিত হয় নিজেদের প্রাপ্য অর্থ থেকে। কারণ, অতিরিক্ত দামে দুর্লভ বস্তু কেউ এখন নিতে চায় না।
তথ্য অনুসারে, পূজাতে একটি প্রতিমা বানাতে বাঁশ, কাঠ, খড়, সুতা, রং, মাটি ইত্যাদি লাগে। দীর্ঘ পরিশ্রমের পর একটি প্রতিমা তৈরি হয়। এতে অনেক অর্থ ব্যয় মৃৎশিল্পীদের। পরবর্তী সময়ে এসব প্রতিমা উচ্চদামে বিক্রি করতে হয়। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, কিছু উৎসব ছাড়া সারা বছর আর কোনো কাজে ব্যস্ত থাকার সুযোগ হয় না এসব মৃৎশিল্পীর। তাই সময়ের বিবর্তনে তাদের হাতের নৈপুণ্যতা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
