Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

বর্ষাযাপন

বর্ষার বৃষ্টি প্রকৃতিতে নিয়ে আসে সজীবতা। গাছপালা এ সময় যেন নতুন প্রাণ ফিরে পায়। তাই এ বর্ষাতেই আপনার শখের বাগানটির সুরক্ষায় যত্নবান হোন। সেই সঙ্গে লাগাতে পারেন নতুন কিছু গাছও

Icon

ঘরেবাইরে ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০১৮, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এসেছে বর্ষা। বর্ষা মানে বৃষ্টির পানিতে ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দেয়া কেয়া, কেতকী, জুঁই, অলকানন্দ, কামিনী, কাঁঠালচাঁপা। দিগন্তজোড়া মাঠে থই থই করা অথৈ পানি। টিনের চালে ঝুমঝুম শব্দে ঝরে পড়া বৃষ্টির ছন্দ। বৃষ্টির রিনিঝিনি শব্দে প্রেমিক হৃদয় গেয়ে ওঠে,

‘আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিনে,

জানি নে, জানি নে কিছুতে কেন

যে মন লাগে না’।

বর্ষার দিনে টিনের চালে ঝাপুরঝুপুর, পুকুর জলে রিনিঝিনি বৃষ্টির ছন্দ প্রভাবিত করে মানুষের মনকে। বর্ষা বন্দনায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন,

‘পাগলা হওয়ার বাদল দিনে

পাগল আমার মন জেগে ওঠে’।

বর্ষা যেমন প্রকৃতিকে সজীব করে তোলে, তেমনি জীবনকেও করে তোলে উৎসবমুখর। আর সেটি ফুটে ওঠে আমাদের চিন্তা-চেতনা, এমনকি সাজ-পোশাকেও। বর্ষায় বদলে যায় পোশাকের ধরন। বৃষ্টির ছন্দে বদলে যায় দৈনন্দিন রুটিনের টুংটাং ঘড়ির কাঁটা। কিংবা উপভোগ নয়, বর্ষার একরাশ বিড়ম্বনা নিয়ে চলতি পথে চলতে হয় ব্যস্ত মানুষগুলোকে। অথচ বিড়ম্বনা নয়, একটু মনোযোগী হলে কাজের মাঝেও বর্ষাকে আপনি উদযাপন করতে পারেন উৎসবমুখর দিন হিসেবে।

এ সময় কর্মক্ষেত্রের জন্য বেছে নিন সিল্ক, জর্জেট শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ প্রভৃতি। সিনথেটিক কাপড়ের শার্ট কিংবা টি-শার্টও এ সময়ের জন্য উপযোগী। কারণ এ সব ফেব্রিকের পোশাক ভিজলেও খুব দ্রুত শুকিয়ে যায়। বর্ষার শাড়িতে খুব ভারি কাজের চেয়ে হালকা কাজ অনেক বেশি মাধুর্য ছড়ায়। এ সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরতে পারেন সিল্ক, হাফসিল্ক শাড়ি। ক্লাস কিংবা বন্ধুদের আড্ডায় নীলের ছোঁয়া আছে এমন টিউনিক, প্যান্টটপ, কুর্তি বেশ মানাবে। বর্ষার মানে নীল আকাশের ছবি। তাই এই সময় মেঘলা দিনে সেজে উঠতে পারেন নীলাম্বরী সাজে। কিংবা সবুজ, ধূসরসহ প্রকৃতির যে কোনো রঙে। সাজ-পোশাকের মতো আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও বর্ষা আসে যেন নীল বার্তা নিয়ে। প্রিয় মানুষটির কাছে লেখা চিঠিটা যখন সযতনে ঠাঁই নেয় নীল খামে তখন প্রেয়সীর নীল আঁচল কিংবা জানালাজুড়ে নীল পর্দার ছুটোছুটি মনে করে দেয় বৃষ্টির কথা।

বর্ষার সাজ প্রসঙ্গে বিউটি এক্সপার্ট আফরোজা পারভীন বলেন, ‘বর্ষার প্রকৃতির সঙ্গে নীল রঙটা এক ভিন্ন আবেদন তৈরি করে। তাই এ সময়ের সাজে নীলের ছোঁয়া মনকাড়ে। সাজের ক্ষেত্রে প্রথমেই কমপ্যাক্ট পাউডার দিয়ে বেইজ করুন। এ সময় ওয়াটার প্র“ফ প্রসাধন ব্যবহার করুন। নয়তো হঠাৎ বৃষ্টিতে পুরো সাজটাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এমন সাজের সঙ্গে মানাবে মুক্তা, রূপা কিংবা সিলভার রঙা গহনা। খোলা চুল, বেণি কিংবা খোঁপার বাঁধনে বেঁধে নিন চুল। সঙ্গে বাড়তি মাত্রা যোগ করবে বর্ষার যে কোনো ফুল।

বর্ষাকালে ঝুম বৃষ্টিতে ভেজার মজাই আলাদা কিন্তু মজাটা মাটি হয় তখনই, যখন রাস্তায় জমে থাকা কাদা-পানি পায়ে লেগে ফুসকুড়ি, চুলকানির মতো নানা ধরনের চর্মরোগ দেখা দেয়। তাই বর্ষাকালে ঘরে ফিরে হাত, পা, মুখের যত্ন নিন। যত্ন নিন চুলেরও। বর্ষায় পা ঢাকা থাকে এমন জুতা পরুন। একদম ফ্ল্যাট কিংবা হাইহিলের চেয়ে মাঝারি জুতা বর্ষা উপযোগী। চামড়ার জুতা, ব্যাগের পরিবর্তে রেস্কিন কিংবা প্লাস্টিকের জুতা, ব্যাগ পুরুন। মোবাইল, ট্যাব, আইপ্যাড সুরক্ষিত রাখতে ওয়াটারপ্রুফ কভার লাগিয়ে নিন। আর অবশ্যই ছাতা কিংবা রেইনকোট সঙ্গে রাখুন।

বর্ষার বৃষ্টি প্রকৃতিতে নিয়ে আসে সজীবতা। গাছপালা এ সময় যেন নতুন প্রাণ ফিরে পায়। তাই এ বর্ষাতেই আপনার শখের বাগানখানির সুরক্ষায় যত্নবান হউন। সেই সঙ্গে লাগাতে পারেন নতুন কিছু গাছও।

শুধু কি কাজ করলেই হবে। বর্ষাবিলাসও করতে পারেন মাঝে মধ্যে। বর্ষার কথা মনে হতেই মাথায় আসে খিঁচুড়ির কথা। ঝুম বৃষ্টিতে ছুটির দিনে ঘরে খিঁচুড়ির আয়োজন করতে পারেন। সঙ্গে রাখুন বেগুন ভাজি, ভর্তা আর আচার। অঝোর ধারায় বৃষ্টিস্নাত বেলায় চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে

সঙ্গে চোখ বুলাতে পারেন প্রিয় কোনো বইয়ের পাতায়। চাইলে ঘুরে আসতে পারেন কাছে-দূরে কোথায়। চলতিপথে পথের পাশ থেকে প্রিয়জনের জন্য কিনে নিতে পারেন কদম, কাঁঠালচাঁপা। কিংবা সঙ্গীকে সঙ্গে নিয়ে একটি বিকাল কাটাতে পারেন রমনার গাছগাছালির ছায়ায়। আর সেই বিকাল আপনার হৃদয়ে নাচন তুলে জানান দিবে বিড়ম্বনা নয়, এতো বর্ষাবিলাস।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম