Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

প্রকৃতি

হেমন্তের বর্ণিল ফুল

Icon

চয়ন বিকাশ ভদ্র

প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিশ্বকবি তার কবিতায় লিখেছেন-‘আজি হেমন্তের শান্তি ব্যাপ্ত চরাচরে/জনশূন্য ক্ষেত্র মাঝে দীপ্ত দ্বিপ্রহরে/শব্দহীন গতিহীন স্তব্ধতা উদার/রয়েছে পড়িয়া শ্রান্ত দিগন্ত প্রসার/স্বর্ণশ্যাম ডানা মেলি।’ সকালের শিশিরভেজা ঘাস আর হালকা কুয়াশা, মাঠের পাকা সোনালি ধান নিয়ে এসেছে হেমন্ত। হেমন্তের শিশিরভেজা

প্রকৃতিতে ফুলের সংখ্যা অনেকটা সীমিত। হেমন্তকালে ফোটা কয়েক প্রজাতির ফুলের পরিচিতি তুলে ধরেছেন-চয়ন বিকাশ ভদ্র

হিমঝুরি

হিমঝুরির বৈজ্ঞানিক নাম Millingtonia hortensis, এটি Fabaceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ। এটি সুউচ্চ চিরসবুজ গাছ। আদিনিবাস মিয়ানমার। এ গাছের ডালপালা ছড়ানো-ছিটানো, আগা নিচের দিকে নুয়ে থাকে। ডালের মাথায় অসংখ্য মঞ্জরিতে বিক্ষিপ্তভাবে ফুল ফোটে। নলাকার সাদা ফুলের মাথায় পাঁচটি ছোট পাপড়ির একেকটি ফুল শুভ্র পাপড়ির মতো। আর নিচের দিকের ফুলগুলো ঝুলে থাকে। ফুল সরু, লম্বা। এর বীজ হালকা ও পাখাযুক্ত বলে বায়ুর মাধ্যমে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এর ইংরেজি নাম ‘ইন্ডিয়ান কর্ক ট্রি’। মাধুর্যে অপূর্ব হওয়া সত্ত্বেও গাছটি ঢাকায় বেশ দুষ্প্রাপ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান গ্রন্থাগারের সামনে, শিশু একাডেমির বাগানে এবং বলধা গার্ডেনসংলগ্ন খ্রিষ্টান কবরস্থানে কয়েকটি গাছ রয়েছে। হিমের দিনে সাদা হিমের মতোই যেন ফুলগুলো ঝরে পড়ে। সৌন্দর্যমুগ্ধ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একে ডেকেছেন হিমঝুরি নামে। হিমঝুরি রাতে ফোটে এবং গন্ধ বিলায়।

দেবকাঞ্চন

দেবকাঞ্চন মাঝারি আকারের গাছ। এটি আট থেকে দশ মিটার উঁচু হয়। মাথা ছড়ানো। ফুল সুগন্ধি, সাদা বা বেগুনি। হেমন্তে সারা গাছজুড়ে ডাঁটায় ফুল ফোটে। পাপড়ি পাঁচটি, অসমান ও লম্বাটে, মুক্ত। শুঁটি শিমের মতো। চৈত্রমাসে নিষ্পত্র গাছে ঝুলন্ত ফলগুলো সশব্দে ফেটে বীজ ছড়ায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Phanera purpurea, এটি Fabaceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ। ইংরেজিতে এর সাধারণ নামগুলো হচ্ছে Hong Kong orchid tree, purple bauhinia নামে পরিচিত। হিমালয়ের পাদদেশ ও আসাম দেবকাঞ্চনের আদি নিবাস। এর পাতা রক্তকাঞ্চনের চেয়ে আকারে একটু বড় গাছটিও। ফুল ছয় থেকে আট সেন্টিমিটার চওড়া, পাপড়ির সংখ্যা পাঁচটি। ফুলে মিষ্টি সৌরভ। সেই সৌরভে মুগ্ধ হয়ে কীটপতঙ্গ উড়ে আসে। তাতেই পরাগায়ন। দেবকাঞ্চন ফুল অসমান, লম্বাটে পাপড়ির মতো। এ সময় পাতাও থাকে অল্প। ঢাকায় রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, সংসদ ভবনসংলগ্ন বিজয় সরণি, আজিমপুর রোড ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের পাশে দেবকাঞ্চন গাছ রয়েছে। শীতের মাঝামাঝি পর্যন্ত ফুল থাকে। বীজ থেকে সহজেই এর চারা উৎপন্ন করা যায়। কুয়াশার চাদর জড়ানো হেমন্তে শিশিরভেজা দেবকা নের শোভা চোখজুড়ানো। কার্তিক মাসে দেবকাঞ্চন গাছে ফুল ফুটতে শুরু করে, পাতার ফাঁকে ডালগুলো ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। হালকা বেগুনি ছাড়াও এর পাপড়ি মৃদু রক্তিম, গোলাপি বা সাদাটে হতে পারে।

রাজ অশোক

রাজ অশোকের বৈজ্ঞানিক নাম Amherstia nobilis, এটি Fabaceae পরিবারের Caesalpiniaceae উপগোত্রের উদ্ভিদ। এর স্থানীয় অন্যান্য নাম সোকরে, মিয়ানমার ফুল। রাজ অশোক মাঝারি আকৃতির বৃক্ষ, সাধারণত আট থেকে দশ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। রাজ অশোক বেশ দুর্লভ। ঢাকায় বলধা গার্ডেনের সাইকি ও সিবিলি অংশে সব মিলিয়ে পাঁচ থেকে ছয়টি গাছ আছে। সিবিলিতে একটি নতুন গাছ লাগিয়েছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেন। এছাড়া সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণেও রাজ অশোক দেখা যায়। পোশাকি নাম আমর্হাস্টিয়া হলেও বাংলা ‘রাজ অশোক’ নামকরণ করেন নিসর্গী ও বলধা গার্ডেনের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রয়াত শ্রী অমৃতলাল আচার্য। গাছের উপরিভাগে কাণ্ড ও ডালপালা থেকে মঞ্জরিদণ্ড বের হয়। হাতখানেক লম্বা মঞ্জরিদণ্ডে বিপরীত সজ্জায় চার-পাঁচটি ফুল থাকে। পুষ্পদণ্ডের গোড়ার ফুলটি প্রথমে ফোটে, তারপর ক্রমেই পরের কলিগুলো ফোটে। প্রস্ফুটনকাল হেমন্ত থেকে শীত অবধি। বড় পাপড়িটির মাথার মাঝখানে সাদা ও লালে খুব সুন্দর করে চিত্রিত। কৃষ্ণচূড়ার একটি পাপড়িও অনেকটা এ রকম। এর আদিনিবাস মিয়ানমার।

লতা পারুল

লতা পারুল কাষ্ঠল লতানো গুল্ম। এর বৈজ্ঞানিক নাম Manosa alliacea, এটি Bignoniaceae পরিবারের উদ্ভিদ। এটি ইংরেজিতে Garlic vine এবং বাংলায় নীল পারুল নামে পরিচিত। পাতায় রসুনের মতো গন্ধ থাকে। ফুল হালকা বেগুনি, অনেক বড় বড় থোকায় ফোটে। দল ফানেলাকার, পাতা যৌগিক, পত্রক আয়তাকার, চার থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার লম্বা, মসৃণ। শীর্ষের পত্রক প্রায়ই আকর্ষীতে পরিণত।

সোনাপাতি

সোনাপাতির বৈজ্ঞানিক নাম Tecoma gaudichaudi, এটি Bignoniaceae পরিবারের উদ্ভিদ। আরেক নাম গৌরিচৌরি। এটি চিরসবুজ ঝোপালো গাছ, চার মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। পাতা যৌগিক, আট থেকে পনেরো সেন্টিমিটার লম্বা হয়, পত্রক দুই থেকে তিনটি। ফুল বড় বড় থোকায় ঘনসন্নিবিষ্ট হয়ে ওঠে। ফুল গ্রীষ্ম, বর্ষা ও হেমন্তকালে ফুটলেও প্রায় সারা বছর পাওয়া যায়। ঞবপড়সধ-এর আরেকটি জনপ্রিয় প্রজাতি হচ্ছে Tecoma stans।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম