|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আপনার ছোটবেলার পিকনিকের স্মৃতি মনে আছে নিশ্চয়ই? বছরের শেষে কিংবা শুরুর সময়টাতে সব ছোটরা মিলে ১০ টাকা কিংবা পাঁচ টাকা চাঁদা তুলে বাজার করে আনা হতো? আর প্রতি ঘর থেকে তোলা হতো চাল, ডাল, ডিম, আলু, পেঁয়াজের মতো উপকরণ। এরপর সবাই মিলে আনাড়ি হাতে হইহই করে রান্না করা। হঠাৎ বড়দের মতো দায়িত্ব পেয়ে গিয়ে, নিজেকেও কেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে হতো! পিকনিক নিয়ে এমন অনেক আনন্দের স্মৃতি জড়িয়ে আছে আমাদের প্রায় সবার ছোটবেলার সঙ্গেই। বড়বেলায় এসে সেই আনন্দ হয়তো কিছুটা ফিকে হয়ে এসেছে সময় আর ব্যস্ততার ভারে, তবে এখনো হারিয়ে যায়নি। এখনো শীতের দিন এলে পিকনিকের আয়োজন করতে চায় মন।
শীত যতই জাঁকিয়ে পড়ুক, পিকনিকের উত্তাপ কিন্তু তার থেকে কম নয়। তাই তো শীতের এ সময়টাতে দেখবেন বছরের সবচেয়ে বেশি পিকনিক করা হয়। অফিসের বার্ষিক বনভোজন বলুন, বন্ধুদের আয়োজন বলুন কিংবা গ্রামে গিয়ে আত্মীয়দের সঙ্গে পিকনিক হয় এ শীতের সময়টাতেই। ডিসেম্বরে যখন ছেলেমেয়েদের স্কুল বন্ধ থাকে, সেই ছুটির সুযোগে পিকনিকের আয়োজন হয় বেশি। আবার ততদিনে শীতটাও পড়তে শুরু করে। গরমের সময়ে তো এতটা আনন্দ নিয়ে আয়োজন করা যায় না, তখন একটুতেই আপনি ঘেমে-নেয়ে ক্লান্ত হয়ে যাবেন। এর বদলে শীতই ভালো। এ সময়ের প্রকৃতি কিছুটা আলস্য বাড়িয়ে দেয় এ কথা সত্যি, ভোরে ঘুম ভেঙে লেপ-কম্বল ছেড়ে উঠতে মন চায় না যেন। তবে পিকনিকের আয়োজন হলে ভিন্ন কথা। অলসতা তাড়ানোর জন্য এর চেয়ে বড় পথ্য আর নেই যেন! যেন পিকনিকের কথা শুনলেই আনন্দে নেচে ওঠে মন!
একটা সময় ছিল যখন পিকনিক বলতে বাড়ির সবাই মিলে পিকনিকের আয়োজন করাকেই বুঝতেন বেশির ভাগ মানুষ। বিশেষ করে শিশুরা এটি বেশি পছন্দ করত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এতে বড়দের অংশগ্রহণও বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে এর পরিধিও। এখন আর কেবল বাড়িতে কিংবা স্কুলে সীমাবদ্ধ নয়, পিকনিক করতে অনেক স্থানেই চলে যাচ্ছেন অনেকে। ঢাকা এবং অন্যান্য বড় শহরে এখন বিভিন্ন পিকনিক স্পট গড়ে উঠছে। সেখানে শীতের সময়টাতে সবচেয়ে বেশি ভিড় লেগে থাকে। শীতের সময়টাতে মানুষের মন একটু বেশিই খুশি খুশি থাকে যেন। এ সময় গরমে অস্থিরতার ভয় নেই, রাত বড় হয় বলে ঘুমও ভালো হয়। সুতরাং মেজাজটাও থাকে নিয়ন্ত্রণে। এমন দিনে পিকনিক হলে আরও আনন্দ বাড়ে, বাড়ে প্রিয়জনদের সঙ্গে আরও বেশি হৃদ্যতা। এমন নির্মল আনন্দের উপলক্ষ্য খুব বেশি কিছুতে তো মেলে না।
এখনকার পিকনিক কেবল দুপুরবেলার খাবারে সীমাবদ্ধ নেই। এখন সারা দিন এমনকি একাধিক দিন ধরেও চলে পিকনিকের আয়োজন। সবাই মিলে কোনো রিসোর্টে গিয়ে চলে আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া। আবার অনেকে পটলাক পার্টিরও আয়োজন করেন। এটি হলো পিকনিকেরই সংক্ষিপ্ত রূপ। সময় স্বল্পতার জন্য অনেক সময় প্রত্যেকে একপদ করে খাবার রান্না করে একসঙ্গে বসে সেসব খাবার খান। আনন্দ আর আড্ডায় মুখরিত হয়ে ওঠে সময়। হতে পারে তা কারও বাসায়, কখনো কারও বাসার ছাদে কিংবা পার্কের নিরিবিলিতে প্রকৃতির সান্নিধ্যে। মানুষ এখনো মানুষের কাছাকাছি থাকতে চায়, প্রিয়জনের ভালোবাসা আর হৃদয়ের উষ্ণতা চায়। তাই তো সুযোগ পেলে পিকনিকের আয়োজন করতে পিছপা হয় না।
পিকনিকের আয়োজনে যুক্ত হয়েছে নতুন আরেকটি রূপ। সেটি হলো বারবিকিউ পার্টি। অবশ্য একে নতুনও বলা যায় না। কারণ আমাদের দেশে বারবিকিউ পার্টির আয়োজন জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে বেশ আগে থেকেই। বন্ধুরা কিংবা আত্মীয়-পরিজন মিলে শীতের রাতে বারবিকিউ পার্টি হলে জমে বেশ। শুধু যে মাংসের বারবিকিউ হয় এমন নয়, বিভিন্ন মাছ দিয়েও করা হয় এ আয়োজন। সবাই মিলে হাতে হাতে কাজ করে সার্থক করে তোলে আয়োজন। এর ফাঁকে ফাঁকে চলে গান, গল্প, আড্ডা। একটি দিন সব ব্যস্ততা ভুলে একটু আনন্দে থাকা। এটি এরপর অনেক দিন সতেজ রাখতে দারুণভাবে কাজ করে। পিকনিক তো কেবল খাওয়া-দাওয়া নয়। খাবার তো সবার বাড়িতেই খাওয়া হয়। কিন্তু সবাই মিলে একত্র হয়ে আনন্দের সঙ্গে খাওয়ার সুযোগ সব সময় হয় না। সে সুযোগটা করে দেয় পিকনিক। এ শীতে হৃদয়ের উষ্ণতা আরেকটু বাড়াতে পিকনিকের আয়োজন করা যেতেই পারে!
