Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

ভ্রমণ

ঘুরে আসুন ৫ সৈকত

Icon

আজহার মাহমুদ

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঘুরে আসতে পারেন চট্টগ্রামের পাঁচ সমুদ্রসৈকত। যেসব সমুদ্রসৈকতের নাম হয়তো কখনো শোনেননি আপনিও। চলুন জেনে নিই সেসব সমুদ্রসৈকত সম্পর্কে।

বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত

চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি ছোট্ট বাজারের নাম বাঁশবাড়িয়া বাজার। এ বাজারের মধ্য দিয়ে সরু পিচ ঢালা পথে মাত্র ১৫ মিনিটে পৌঁছানো যায় বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র উপকূলে। এ সমুদ্রসৈকতের মূল আকর্ষণ হলো, প্রায় আধা কিলোমিটারের বেশি আপনি সমুদ্রের ভেতর হেঁটে যেতে পারবেন। এখানে এসে নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ানো যাবে, আহরণ করা যাবে প্রকৃতির শোভা। ঝাউ বাগানের সারি সারি ঝাউ গাছ ও নতুন জেগে ওঠা বিশাল বালির মাঠ, সব মিলিয়ে এ এক অপূর্ব সৌন্দর্যের পরশ এখানে পাওয়া যাবে।

কাট্টলী সমুদ্রসৈকত

চট্টগ্রাম শহর থেকে কিছুটা দূরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে এ সমুদ্রসৈকতের অবস্থান। পাহাড়তলী থানার দক্ষিণ কাট্টলী এলাকায় এটির অবস্থান। সৈকতটির আরেক নাম হচ্ছে জেলেপাড়া সমুদ্রসৈকত কিংবা কাট্টলী বিচ। জেলেপাড়ার ব্যস্ততায় মুখর একটি জায়গা! জেলেদের কেউ জাল বুনছে, কেউ নৌকা মেরামত, কেউ মাছ ধরা এবং বিক্রি, কেউ আবার মাছ শুকিয়ে শুঁটকি বানানোর কাজে ব্যস্ত। সেই সঙ্গে সন্ধ্যায়/রাতে/ভোরের সময় অল্প দামেই কিনে নিতে পারেন তরতাজা ইলিশ, চিংড়ি কিংবা অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ। শুধু তাই নয়, জায়গাটির নৈসর্গিক সৌন্দর্যেও আপনি বিমোহিত হতে বাধ্য হবেন। একদিকে সমুদ্রসৈকত আর একদিকে গ্রামীণ পরিবেশ অন্য কোনো সৈকতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। দর্শনার্থীরা এখানে ঘুরে বেড়ানো, গাড়ি চালানো, ঘোড়ায় চড়া, স্পিডবোটে চড়ে সমুদ্রের ঢেউ উপভোগ করাসহ প্রায় সব ধরনের আনন্দ পাবেন। সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করাসহ বনভোজন করারও সুযোগ রয়েছে এখানে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থক্ষেত্র হিসাবে এ সৈকতের খ্যাতি রয়েছে। প্রতি বছর ২ চৈত্র বারুনি øান হয়ে থাকে। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য পুণ্যার্থীরা আসেন। চট্টগ্রাম শহর থেকে টোল সড়ক ধরে সহজেই পৌঁছানো যায় এ বিচে। এছাড়া চট্টগ্রামের একমাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাঠ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পাশ দিয়েও এ সৈকতে আসা যায়। এ জায়গাটির নাম সাগরিকা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সাগরের বাতাস, সাম্পান নৌকা, জেলেদের মাছ ধরা আর তাদের জীবনযাপনের চিত্রপট আপনাকে মুগ্ধ করবেই করবে।

গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত

চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত। স্থানীয় মানুষের কাছে এ সৈকত মুরাদপুর বিচ নামে পরিচিত। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে গুলিয়াখালী বিচের দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার। অনিন্দ্য সুন্দর গুলিয়াখালী সৈকতকে সাজাতে প্রকৃতি কোনো কার্পণ্য করেনি। একদিকে দিগন্তজোড়া সাগর জলরাশি আর অন্যদিকে কেওড়া বন সৈকতকে দিয়েছে পূর্ণতা। কেওড়া বনের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের চারদিকে কেওড়া গাছের শ্বাসমূল লক্ষ করা যায়। এ বন সমুদ্রের অনেকটা ভেতর পর্যন্ত চলে গেছে। এখানে পাওয়া যাবে সোয়াম্প ফরেস্ট ও ম্যানগ্রোভ বনের মতো পরিবেশ। গুলিয়াখালী সৈকতকে ভিন্নতা দিয়েছে সবুজ গালিচার বিস্তৃত ঘাস। সাগরের পাশে সবুজ ঘাসের উন্মুক্ত প্রান্তর নিশ্চিতভাবেই আপনার চোখ জুড়াবে। বিচের পাশে সবুজ ঘাসের এ মাঠে প্রাকৃতিকভাবেই জেগে উঠেছে আঁকাবাঁকা নালা। এসব নালায় জোয়ারের সময় পানি ভরে ওঠে। চারপাশে সবুজ ঘাস আর তারই মধ্যে ছোট ছোট নালায় পানিপূর্ণ এ দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। অল্প পরিচিত এ সৈকতে মানুষজনের আনাগোনা কম বলে আপনি পাবেন নিরিবিলি পরিবেশ। সাগরের এত ঢেউ বা গর্জন না থাকলেও এ নিরিবিলি পরিবেশের গুলিয়াখালী সমুদ্রসেকত আপনার কাছে ধরা দেবে ভিন্নভাবেই। চাইলে জেলেদের বোটে সমুদ্রে ঘুরে আসতে পারেন। এক্ষেত্রে বোট ঠিক করতে দরদাম করে নিতে হবে। এ ছাড়াও ক্যাম্পিং করে রাতে থাকতেও পারবেন এখানে।

আকিলপুর সমুদ্রসৈকত

সুনীল আকাশের নয়নাভিরাম দৃশ্য, পাথরের বুকে আছড়ে পড়া ছোট ছোট ঢেউয়ের শব্দ আর চারপাশের সবুজ আবহে নির্মল প্রশান্তির এক সুন্দর জায়গা হলো আকিলপুর সমুদ্রসৈকত। এ জায়গাটি সম্পর্কে চট্টগ্রামের পর্যটকরাও তেমন জানেন না। দিন দিন এ সৈকতের পরিচিতি বাড়ছে। পর্যটকরা আকিলপুর সমুদ্রসৈকতে প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য দেখতে ছুটে আসছে ছুটির দিনগুলোতে। পড়ন্ত বেলায় পাথরে দাঁড়িয়ে সূর্য রক্তিম বর্ণে হেলে যাওয়ার মনোরম দৃশ্য দেখতে আকিলপুর সমুদ্র সৈকত অন্যতম। বাঁশবাড়ীয়া সমুদ্রসৈকত থেকে সোজা বেড়িবাঁধ ধরে দক্ষিণ দিকে এক কি.মি. এগিয়ে গেলে আকিলপুর সমুদ্রসৈকতের দেখা মিলবে। এ দুটি সমুদ্রসৈকত বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়নে অবস্থিত।

খেজুরতলা সমুদ্রসৈকত

চট্টগ্রাম শহরে যে কয়টি সুন্দর বিচ আছে তার মধ্যে সৌন্দর্যের দিক দিয়ে যদি তুলনা করা যায় তাহলে খেজুরতলা অন্যতম। আপনি যদি একবার যান তাহলেই বুঝতে পারবেন কেন এটি সুন্দর। সত্যিকারের সৌন্দর্য দেখতে হলে যেতে হবে খুব ভোরবেলা/পড়ন্ত বিকালে। বিকালের দিকে বিচের সৌন্দর্য দেখার মতো! বাঁধের পাথরে বসে আড্ডা দিতে পারেন কিংবা সবুজ ঘাস-বিছানো তীর ধরে হাঁটতে হাঁটতে উপভোগ করতে পারেন আশপাশের জেলেপাড়ার জনজীবন। আর বন্ধুরা মিলে গেলে ফুটবল নিয়ে গেলে তো কথাই নেই, সাগরপাড়েই বিশাল মাঠের মতো আছে। খেলাধুলার জন্য অতি উত্তম একটা জায়গা। সন্ধ্যার পর সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে বাতাসের হু-হু আওয়াজ আর সাগরজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা শয়ে শয়ে জেলে নৌকার টিমটিমে আলো আর দূর সমুদ্রে স্থবির জাহাজগুলোর সোডিয়াম আলো আপনাকে দেবে অন্যরকম আবহ! চট্টগ্রাম শহরের যে কোনো স্থান থেকে স্টিলমিল বাজারে এসে ইজিবাইক কিংবা রিকশাওয়ালাকে বললেই দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত খেজুরতলা বিচ নিয়ে যাবে।

কীভাবে যাবেন?

চট্টগ্রাম শহর থেকে উপরোক্ত বিচগুলোতে যাওয়া খুবই সহজ। সবই চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা আর চট্টগ্রাম শহরেই অবস্থিত। একেক সৈকতে যেতে একেক ধরনের খরচ হবে। আপনি যদি ঢাকা থেকে আসতে চান তাহলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার পথেই বন্দরনগরী চট্টগ্রামে প্রবেশের আগেই পড়বে সীতাকুণ্ড শহর। ড্রাইভার কিংবা বাসের হেল্পারকে বললে তিনিও আপনাকে আপনার পছন্দের সৈকতের কাছাকাছি নামিয়ে দেবে।

কোথায় থাকবেন?

সীতাকুণ্ডে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে ভালো রেস্টুরেন্টও। তবে চাইলে সারা দিন ঘোরাঘুরি করে রাতে চলে আসতে পারেন চট্টগ্রাম শহরে। এখানে আপনি যে কোনো মানের হোটেল বা রেস্টুরেন্ট পেয়ে যাবেন। থাকা-খাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম শহরে বিভিন্ন মান ও দামের আবাসিক হোটেল-মোটেলের সুব্যবস্থা রয়েছে।

খাবেন কোথায়?

এখন প্রতিটি সমুদ্রসৈকতেই গড়ে উঠেছে ছোট-বড় খাবারের দোকান। তবে আপনি উন্নত মানের খাবার খেতে চাইলে সীতাকুণ্ড শহরে অথবা চট্টগ্রাম শহরে আসতে পারেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম