Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

তুমি যে বন্ধু আমার...

Icon

হাবীবাহ্ নাসরীন

প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দুই বন্ধুর অমর কোনো কাহিনি নিয়ে বন্ধু দিবসের সূচনা হয়নি। তাহলে বন্ধু দিবস এলো কী করে? সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যেই এর প্রচলন শুরু হয়েছিল। ১৯৩০ সালে এ কাজটি করেছিলেন বিশ্বখ্যাত উপহারসামগ্রী ও কার্ড বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান হলমার্কের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জয়েস হলে। তিনি প্রতি বছর ২ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধুত্ব দিবস উদযাপনের বিষয়টি সামনে আনেন। এদিন কার্ড আদান-প্রদানের মাধ্যমে বন্ধু দিবস পালন করার চল শুরু হয়। অবশ্য জয়েস হলের সে প্রচেষ্টা অতটা সফল হয়নি। ১৯৪০ সাল নাগাদ মানুষ বুঝতে পারে, এটা কোনো মহৎ উদ্দেশ্য নয়, বরং হলমার্কের কার্ড ব্যবসা বাড়ানোর ফন্দি। এরপর থেকে বন্ধু দিবস উদযাপন এক রকম বন্ধই হয়ে যায়।

কিন্তু জয়েস হলের এ উদ্যোগ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এক সময় ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে। তবে এ দিবস উদযাপনের ব্যাপারটি প্যারাগুয়ের চিকিৎসক র‌্যামন আর্থেমিও ব্রেচর ১৯৫৮ সালের ২০ জুলাই বিশ্বব্যাপী বন্ধু দিবস পালনের প্রস্তাব দেন। এরপরই বিশ্বব্যাপী ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে বন্ধুত্ব, ঐক্য ও ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে গঠন করা হয় ‘বন্ধুত্ব ক্রুসেড’। পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান ৩০ জুলাইকে বন্ধু দিবস ঘোষণা করেন। জাতিসংঘ জুলাইয়ের ৩০ তারিখ বন্ধু দিবস পালন করলেও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আগস্টের প্রথম রোববার বন্ধু দিবস হিসাবে পালিত হয়।

তুমুল প্রেম ভেঙে যায়, তীব্র ভালোবাসার মানুষটিও পরিণত হতে পারে কঠিন শত্রুতে। কিন্তু বন্ধু? বন্ধু আজীবন বন্ধুই থাকে। যে বন্ধুত্ব ভেঙে যায় তা আসলে কখনো বন্ধুত্ব ছিলই না। এমনই শ্বেত-শুভ্র এ সম্পর্ক যে কোনো ধূসরতাই তাকে ছুঁতে পারে না। তাই তো বহু বছর পরও বন্ধুর মুখটি দেখলে ঠিক সেই পুরোনো দিনের মতোই হাসি-আনন্দে মেতে ওঠা যায়। বন্ধু মানেই যে দুঃখ ভুলে থাকা! মানুষ যতই একা বাঁচার আকাক্সক্ষা করুক না কেন, অন্তত একজনও বন্ধু না থাকলে তার বেঁচে থাকাটা অর্থহীন হয়ে ওঠে। সুন্দর জীবন আর সুন্দর পৃথিবীকে অনুভব করতে হলেও যে নিজেকে বুঝতে পারার মতো একজন বন্ধু প্রয়োজন!

বছর ঘুরে আবারও এলো বন্ধু দিবস। এ দিবস নিয়ে নানাজনের নানা মত, অভিমত। কেউ এ দিবস পালনের পক্ষে তো কেউ আবার বিপক্ষে। বাংলাদেশ ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আগস্ট মাসের প্রথম রোববার পালন করা হয় বন্ধু দিবস। এই দিনে কী হয়? কী আর হবে! বন্ধুত্ব কি কোনো নিয়ম, বাঁধনের ধার ধারে! তবু হয়তো কেউ কেউ বন্ধুকে চমকে দেওয়ার জন্য বিশেষ কোনো উপহার পাঠিয়ে দিনটিকে আরেকটু সুন্দর করে দেন। যদি উপহার না-ও দেওয়া হয়, যদি বন্ধু দিবস পালন না-ও করা হয়, তাই বলে কি বন্ধুত্বের সৌন্দর্য এতটুকুও ম্লান হবে? বন্ধুত্ব আসলে এতটাই সমুজ্জ্বল যে একে ম্লান করা সম্ভব নয়।

বন্ধু হতে পারে পরিবারের বাইরে কিংবা পরিবারের মধ্যেও। বন্ধু হতে পারে বোন, বন্ধু হতে পারে মা-বাবা, বন্ধু হতে পারে ভাই কিংবা অন্য যে কেউ। বন্ধুত্বের কোনো সীমানা থাকে না-না দেশ, না ধর্ম, না বয়সের। শুধু নিজের কথাগুলো মন খুলে বলার মতো কাউকে পেলে অথবা তার কথাগুলো হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারলে আমরা বুঝতে পারি, এই তো আমার বন্ধু! নিজের ব্যর্থতায় সেও আমার মতোই সমান কষ্ট পায়, আমার আনন্দে তার মুখেও ঝলমল করে ওঠে হাসি। বন্ধুর মতো এমন পরমজন আর কজন আছে! যে কোনো সম্পর্কই সুন্দর রাখার জন্য তাতে বন্ধুত্ব থাকা আবশ্যক। এমনকি ভালোবাসার সম্পর্কেও বন্ধুত্ব না থাকলে তা ধীরে ধীরে সৌন্দর্য হারাতে থাকে।

খুব মন খারাপের দিনে বন্ধুদের কথা মনে করলে দেখবেন আপনার মন আপনাআপনিই অনেকটা ভালো হয়ে গেছে। আর কোনো বন্ধুর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলতে পারলে তো কথাই নেই! সব ঝেড়ে মুছে চলে যায় যেন। অসুখের দিনে তপ্ত কপালে বন্ধুর হাতখানা, বড় দুঃসময়ে নুয়ে আসা কাঁধ ধরে রাখা বন্ধুটি স্রষ্টার বড় উপহারের একটি। যে সম্পর্ক কড়ি দিয়ে কেনা যায় না, কপাল গুণে পেতে হয়। বন্ধুত্বে থাকে না কোনো স্বার্থের লেনদেন। যেন তার ভালোটুকুই নিজের ভালো, যেন ভালোবাসতে পারাটাই সবচেয়ে বড় স্বার্থ সেখানে! তাই তো বন্ধুত্ব করতে হয় সুন্দর হৃদয়ের মানুষের সঙ্গে। কারণ কলুষিত হৃদয়ের মানুষরা আর যাই হোক, কখনো কারও বন্ধু হতে পারে না। তারা শুরু থেকেই কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে আসে। আর একটা সময় সেই মুখোশ খুলে পড়েই। তখন বন্ধু রূপের সেই মানুষের বিভৎস রূপ আপনার সামনে চলে আসে আর আপনি ভাবতে শুরু করেন বন্ধুত্ব বলে আসলে কিছু নেই। কিন্তু এ যে আপনারই ভুল! ভুল মানুষকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করলে তার দাম তো দিতে হবেই। তাই নিজের অসতর্কতার দায় বন্ধুত্বের ওপর চাপাবেন না। বরং সচেতন থাকুন, সঠিক মানুষটিকে বেছে নিন।

মনের মতো বন্ধু না পেলে একাই থাকুন না হয়। গাছ, পাখি কিংবা বইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন। মনের কথা বলুন নিজের সঙ্গে। তবু ভুল মানুষকে জীবনে জায়গা দেবেন না। কারণ একজন ক্ষতিকর মানুষ আপনার পুরো জীবনটাকে এলোমেলো করে দিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। সেই এলোমেলো জীবন গুছিয়ে নেওয়ার জন্য একটা জীবন বড় কম সময়। বন্ধুত্বের ক্ষমতা এতটাই শক্তিশালী! তাই নিজেকে ভালোবাসুন সবার আগে। যে নিজেকে ভালোবাসে, কেবল সে-ই অন্যকেও ভালোবাসতে পারে। বন্ধু হিসাবে নিজেকেও গড়ে তুলুন। যেন আপনাকে বন্ধু হিসাবে পেয়ে কারও জীবন পূর্ণ হয়ে উঠতে পারে!

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম