Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

বর্ষার ফুল রেইন লিলি

Icon

চয়ন বিকাশ ভদ্র

প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সকালে হাঁটতে গিয়ে ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্র তীরের এক নার্সারিতে রেইন লিলির দেখা পেলাম। বেশ খানিকটা জায়গাজুড়ে ঘাসের মতো গাছের ডগায় ফুল ফুটে আছে, সুন্দর দৃশ্য। ছবি তুলে ফেললাম ঝটপট।

রেইন লিলি হচ্ছে রজনীগন্ধা-জাতীয় লিলি পরিবারভুক্ত গাছ। উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Zephyranthes rosea এবং ইংরেজি নাম rosy rain lily, fairy lily, rose yephyr lily, pink rain lily, magic lily, grass lily ইত্যাদি। এ ফুলগাছের গোড়ায় অনেকটা পেঁয়াজাকৃতির কাণ্ড হয়ে থাকে বলে এর জনপ্রিয় বাংলা নাম পেঁয়াজ ফুল। এটি চন্দ্রতারা ফুল, ঘাসফুল নামেও পরিচিত।

এরা শুধু বর্ষায় ফোটে, তাই এর নাম রেইন লিলি। বিশেষ করে ভারী বৃষ্টির পর একে সজীব দেখায়। সব লিলিই ভুঁইফোঁড় শ্রেণির। কারণ এ ধরনের ফুল, গাছের ডাল থেকে হয় না, মাটি ফুঁড়ে ফুলের স্টিক বা ডাঁটা বেরোয়। ঊর্ধ্বমুখী পুষ্পদণ্ড লম্বায় প্রায় ৮-১২ ইঞ্চি হয়ে থাকে। এদের ফুল সাদা, হলুদ, বেগুনি ও গোলাপি রঙের হতে পারে। আমাদের দেশে বেশি দেখা যায় গোলাপি রঙের ফুলটি। সাদার ওপর খয়েরি ডোরা আঁকা একটি প্রজাতিও পাওয়া যায়।

রেইন লিলিতে এক ধরনের শুয়োপোকা হয় ঝাঁকে ঝাঁকে। পাতা খেয়ে শেষ করে ফেলে। এগুলো এক প্রকার মথের ক্যাটারপিলার। তার নাম লিলি মথ। এ লিলি মথের লার্ভাগুলো শালিকের প্রিয় খাদ্য।

রেইন লিলির পেঁয়াজাকৃতির কাণ্ড বিষাক্ত টক্সিন বহন করে যা হাঁস-মুরগিসহ গৃহপালিত পশুর পীড়ার কারণ হতে পারে, আবার মানুষের বমি এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

ক্যারিবীয় ও ক্রান্তীয় অঞ্চলসহ প্রায় বিশ্বজুড়ে এর দেখা মিলে। রেইন লিলি অন্যান্য লিলি প্রজাতির তুলনায় শীত কম সহ্য করতে পারে এবং প্রচণ্ড শীত ও দীর্ঘ খরার সময় তারা সুপ্ত থাকে। যেনতেন যত্নে ফোটা এ ফুলের উজ্জ্বল বর্ণচ্ছটা মুগ্ধ করে।

নিঃসন্দেহে বর্ষায় ফোটা ফুলের মাঝে রেইন লিলি অন্যতম এক ফুল। নাম শুনে সহজেই বুঝে নেওয়া যায় এটি বর্ষার ফুল। বহুবর্ষজীবী হওয়াতে একবার লাগালে অনেক বছর ধরে ফুল পাওয়া যায়। বছরের প্রায় ৯ মাস ঘাপটি মেরে বসে থাকলেও বর্ষায় অপরূপ যৌবনা হয়ে ওঠে ফুলটি। রেইন লিলি গোলাপি, সাদা আর হলুদ রঙের হয়ে থাকে। তেমন কোনো যত্ন নেই। তবে সমৃদ্ধ, সমানভাবে আর্দ্র এবং ভালো মাটি প্রদান করতে হবে। কড়া রোদের আলোতে অথবা উজ্জ্বল স্থানে রাখুন। ছায়াতে রাখা হলে ফুলের পরিমাণ অনেক কমে যায়। যদি উজ্জ্বল আলোতে রাখা হয় তবে নিয়মিতভাবে প্রায় বর্ষাকালজুড়ে ফুল ফোটে। এটি সাধারণত বালব থেকে দ্রুত বংশ বিস্তার করে আবার বীজ থেকেও চারা গজানো যায়। তবে বীজের চারা থেকে ফুল পেতে এক-দুবছর সময় লেগে যেতে পারে। খরায় টেকে ও রক্ষণাবেক্ষণে অপেক্ষাকৃত কম সময় লাগে। লিলির কন্দ থেকে তৈরি হয় মূল্যবান পারফিউম অয়েল। পুষ্পপ্রেমীদের একচিলতে বারান্দা কিংবা বাগান সাজাতে এরা বেশ জনপ্রিয়। মাঘের শেষে প্রতিটা লিলির গামলার মাটি বের করে অল্প জৈবসার মিশিয়ে আবারও বালবগুলো নতুন করে বুনে দিতে হবে।

এর আদিনিবাস দক্ষিণ আমেরিকা। উচ্চতা মাত্র ১৫ থেকে ২৫ সেমি। অন্য অনেক সবুজের সঙ্গে মিলে মিশে থাকে। রেইন লিলি রেইন ফ্লাওয়ার, ফেয়ারি লিলি, জেফির লিলি, ম্যাজিক লিলি, আটামাসকো লিলি নামেও পরিচিত। বর্ষার ফুল হলেও এ ফুল গ্রীষ্ম থেকে ফোটা শুরু হয়। শরৎ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ফুলটি সন্ধ্যায় বুজে যায়। দিনের আলোয় আগের অবস্থায় ফেরে। আকর্ষণীয় হলেও, ঘাসফুলের জন্য তেমন যত্নের প্রয়োজন হয় না। অযত্নে অবহেলায় বেঁচে থাকে। গোলাপি ঘাসফুলের ছবিটি সম্প্রতি ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের জয়নুল সংগ্রহশালার সামনে থেকে তুলেছি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম