Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

এ সময়ে ছেলেদের সাজ-পোশাক

Icon

এ.কে. রাসেল

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পৃথিবীতে ঢিলেঢালা ও আরামদায়ক পোশাকের ট্রেন্ড চলছে। কেবল নারীর ফ্যাশনে নয়, পুরুষের ফ্যাশনেও ওভারসাইজ বিষয়টি সমাদৃত। একটা সময় ছিল, যখন নিজ মাপের চেয়ে এক-দুই সাইজ বড় পোশাক পরলে মানুষ হাসাহাসি করত। সময়ের বিবর্তনে এখন সেটিই হয়ে গেল ফ্যাশন। বিশেষ করে করোনার সময় মানুষ ঘরবন্দি জীবনে বেশ হাঁপিয়ে উঠেছিল। সে সময় সাদরে গ্রহণ করেছে ঢিলেঢালা পোশাক। আঁকড়ে ধরেছে ‘ক্যাজুয়াল ইজ কমফোর্ট’ টার্মটিকে। এখন ফ্যাশনিস্তাদের কাছে সহজে নিজেকে মেলে ধরা যায়, স্টাইলিংয়ে সাত-পাঁচ ভাবতে হয় না। এমন ধরনের পোশাক বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। গরমে ঢিলেঢালা, পাতলা, ফিনফিনে পোশাকই আরামদায়ক। এবারের গরম গত সব বছরকে ছাড়িয়ে গেছে। এমন আবহাওয়ায় অনেকে হিট স্ট্রোকের কবলে পড়েছেন। প্রচণ্ড গরমে নারীর মতো পুরুষেরও চাই সঠিক পোশাক ও অনুষঙ্গ। ভ্রমণে, আড্ডায় বোহেমিয়ানা ভ্রমণ, বন্ধুদের সঙ্গে হ্যাংআউট, আড্ডায় হাওয়াই শার্ট, রংচঙা টি-শার্ট, পোলো শার্ট ইত্যাদি পরতে পারেন। জগারস, ডেনিম, ট্রাউজারের সঙ্গে মানানসই এ ধরনের পোশাক। সমুদ্রে গেলে থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্টের সঙ্গে টি-শার্ট, মাথায় হ্যাট পরে বোহো স্টাইল করতে পারেন। পাহাড়ে কিংবা অরণ্যে বেড়াতে গেলে শর্টসের সঙ্গে টি-শার্ট, পায়ে স্নিকার্স, মাথায় হ্যাট পরতে পারেন। গলায় গামছা কিংবা আরামদায়ক কোনো কাপড় রাখতে পারেন। এতে ঘাম মুছতে সুবিধা হবে। তবে অতিরিক্ত গরমে পাহাড়ে ওঠা কিংবা দুর্গম এলাকায় ঘুরতে না যাওয়াই ভালো। বিপদের আশঙ্কা থাকে।

প্যান্টের ধারা যেমন চলছে : প্যান্ট নির্ভর করে ব্যক্তিগত রুচির ওপর। কেউ ন্যারো কাট, বুট কাট, কেউ ঢোলা প্যান্ট পরেন। এখন বেশি চলছে মোবাইল প্যান্ট, ঢোলা প্যান্ট এগুলো। ট্রাউজার ট্রেন্ডে আছে। ট্রাউজারের সঙ্গে টি-শার্ট ও স্লিপার্স পরে যে কোনো জায়গায় সহজেই চলে যাওয়া যায় বলে এগুলো সবাই বেছে নেন। জানান আনিস কাজী।

তিনি বলেন, ‘আমরা গরমের জন্য ডেনিম, টুইল, মোবাইল প্যান্ট, ট্রাউজার সবই করছি। সবার রুচি এক নয়। তাই সবার রুচি-অভিরুচির কথা মাথায় রেখে প্যান্ট করছি। প্রাধান্য দিচ্ছি স্প্যান্ডেক্স কাপড়। এগুলো টানলে বড় হয়। পরে আরাম পাওয়া যায়।’ ছেলেরা ঘরে এখন লাইট ওয়েট শর্টস পরতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এর মধ্যে বারমুডা, কটন প্যান্ট, লিনেন প্যান্ট, জগারস, ওয়াইড লেগ প্যান্ট ইত্যাদি চলছে। বাইরে কিংবা অফিসের জন্য ছেলেরা ডেনিম, কটন ও লিনেন প্যান্ট বেছে নিচ্ছেন।

পোশাকের সঙ্গে কেমন জুতা : ফরমাল পোশাকের সঙ্গে মানানসই জুতা ডার্বি বা স্যান্ডেল, অক্সফোর্ড অথবা ব্রৌগেস বেছে নিন। বেল্টের রঙের সঙ্গে মিল রেখে জুতা বাছাই করতে পারেন। কালো, বাদামি রঙের জুতা ফরমাল লুকে ভালো মানায়। লোফারও ফরমাল লুকের সঙ্গে পরা যায়। সে ক্ষেত্রে জুতার রংটা যেন জুতসই হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। সেমি ফরমাল লুকের জন্য ব্রৌগেস, ডার্বি, লোফার, ব্রৌগেস স্ট্র্যাপ বেছে নিন। ক্যাজুয়াল আউটফিটের জন্য বেছে নিতে পারেন মানানসই স্পোর্টস স্নিকার্স, লোফার, স্যান্ডেল ইত্যাদি।

অনুষঙ্গে যা জরুরি : ছেলেদের ফরমাল লুকের জন্য অনুষঙ্গের দরকার পড়ে না। তবে ক্যাজুয়াল ও বোহো লুকের সঙ্গে অনুষঙ্গ মানাবে বেশ। স্টাইল নির্ভর করবে আপনার রুচি-অভিরুচির ওপর। গরমে বাইরে গেলে রোদচশমা সঙ্গে নিন। নয়তো কড়া রোদে তাকাতে সমস্যা হবে। চোখ সংকুচিত করে কড়া রোদে তাকালে চোখের চারপাশ কুঁচকে যায়। এতে বয়সের ছাপ দ্রুত পড়ে। বাইরে যাওয়ার আগে ত্বকের ধরন বুঝে সানস্ক্রিন ক্রিম লাগিয়ে নিন। বাইরে বের হলে পছন্দের টুপি যেমন-ক্যাজুয়াল হ্যাট, বেজবল হ্যাট, পানামা হ্যাট ইত্যাদি সঙ্গে নিতে পারেন। বিশেষ করে ভ্রমণে গেলে এ ধরনের হ্যাট আপনার ত্বককে রোদ থেকে বাঁচাবে। হাতে ব্রেসলেট কিংবা ব্রেসলেট বনাম ঘড়ি পরতে পারেন।

দিনভর অফিসে : ব্যাংক ও কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠান ছাড়া বিভিন্ন অফিসে এখন আরাম ও ক্যাজুয়াল পোশাককেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আপনার অফিসের ধরন, ড্রেসকোড বুঝে পোশাক নির্বাচন করুন। দিনভর আরামে থাকতে ক্যাজুয়াল, সেমি ফরমাল লুকের সঙ্গে মানায় এমন পোশাক বেছে নিতে পারেন। সাইফ শুভ জানান, এখন সারা বিশ্বে ক্যাজুয়াল ও কমফোর্টেবল পোশাক সমাদৃত। কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠান ছাড়া অনেকেই এখন স্যুট, টাই, ব্লেজার পরে অফিস করেন না। মডার্ন কালচারে এটি নেই। উন্নত বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও অনেক অফিস পোশাকে ক্যাজুয়াল ধারাকেই বেছে নিচ্ছেন।

আপনার অফিসে যদি পোশাকের কড়াকড়ি থাকে, তবে সাদা, নীল ও যে কোনো হালকা রঙের শার্টের সঙ্গে ধূসর, ছাই, নীল, কালো রঙের ফরমাল প্যান্ট বেছে নিতে পারেন। শার্টের রঙের সঙ্গে প্যান্টের রঙের মিল রাখতে পারেন। এতে বেশ মার্জিত লাগবে। স্ট্রাইপ ও টেক্সার্ড শার্টের সঙ্গে এক রঙের প্যান্ট ভালো মানায়। বেল্টের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে জুতা পরুন। শার্টের রঙের সঙ্গে কনট্রাস্ট করে টাই পরুন। ফরমাল পোশাকের সঙ্গে ফিটিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফিটিং ভালো না হলে দেখতে ভালো লাগবে না। গরমে অনেকেই স্যুট পরতে চান না। যদি পরতেই হয়, তবে সামার ফ্রেন্ডলি ব্লেজার বেছে নিতে পারেন।

প্রচণ্ড গরমের কথা মাথায় রেখে দেশীয় পোশাকের ব্র্যান্ড ইজি, রিচম্যান, জেন্টাল পার্ক, দর্জি বাড়ি, অঞ্জন্স, কে ক্র্যাফট, রঙ বাংলাদেশসহ অনেকেই নিয়ে এসেছে পোশাক। ইজি ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার তৌহিদ চৌধুরী জানান, গরমে ফ্যাশনের কথা মাথায় রেখে কে-ক্র্যাফট নিয়ে এসেছে কমফোর্টেবল ক্যাজুয়াল শার্টের বৈচিত্র্যময় আয়োজন। এ শার্ট তরুণ, যুবক ও মধ্য বয়সিদের জন্য। ক্যাজুয়াল শার্টগুলো যে কোনো পুরুষকে ক্যাজুয়ালি ক্ল্যাসি লুক দেবে। তিনি জানান, গরমকে মাথায় রেখে প্রিমিয়াম কটন, জ্যাকার্ড কটন, টু-টোন, ভয়েলের মতো আরামদায়ক কাপড়ে শার্টগুলোকে বেশ দৃষ্টিনন্দনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। রঙের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল রঙের পাশাপাশি লাইট শেডের মধ্যে শার্টগুলোতে আছে ভিন্নতা। ডিজাইনে মানানসই ফ্লোরাল, ট্রপিক্যাল, ট্রাইবাল, টেরাকোটা, মান্ডালা ছাড়া আরও অন্যান্য প্রিন্টের ব্যবহার হচ্ছে। গরমে প্রাধান্য পাচ্ছে ভিসকস, কটন ফেব্রিকের কাপড়। গরমে এ ধরনের ফেব্রিক দিয়ে হাফ শার্ট, হাওয়াই শার্ট বানিয়েছি। হালকা রংগুলোকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। এ ধরনের শার্টগুলোতে একটু ঢিলেঢালা, সামার ফ্রেন্ডলি প্রিন্ট, আরাম ইত্যাদি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

হাফহাতার দাপট : প্রচণ্ড গরমের কারণে এখন হাফহাতার পোশাক চলছে। ছেলেরা টি-শার্ট, লিনেন ও ভিসকসের হাফ শার্ট বেছে নিচ্ছেন। যারা হাফ শার্ট পরছেন, তারা এর সঙ্গে কিউবান কলার বেশি বেছে নিচ্ছেন। ফেব্রিকের ক্ষেত্রে আরামদায়ক কটন লিনেন ও রিমি কটনের পোশাক।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম