Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

শুভ্রমায়া কাশফুলের হাতছানি

Icon

মেজবাহ মুকুল

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নির্মল আকাশ দেখতে দেখতেই মেঘের ঘনঘটা। তার মাঝে সাদাকালো মেঘের আবরণে সোনালি সূর্যের উঁকিঝুঁকি। হুট করে নামে বৃষ্টি। আবার নিমিষেই চলে যাওয়া। এ হুটহাট বৃষ্টি এসে নিমিষেই চলে যাওয়া-এ ধরনের বৃষ্টিকে গ্রামের মানুষ বলে, ‘ছাগল তাড়ানো বৃষ্টি’। এমনই স্বভাব শরৎ ঋতুর। ছয় ঋতুর মধ্যে শরৎ একটু ভিন্ন স্বভাবের। পুরোদমে স্পষ্টভাষী বলা যেতে পারে। বর্ষা শেষে নিজেকে মেলে ধরে অকৃপণভাবে। নীলাকাশে পেঁজা তুলার মতো সাদা মেঘের ভেলা উড়িয়ে। সবুজের বুকে কাশবনে বাতাসে কাশফুল দোলা দিয়ে শরৎ তার আগমনের বার্তা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়। শরৎ বলতে মানুষ কাশফুলই বোঝে। ঘ্রাণহীন হলেও কাশফুলের অপরূপ শুভ্রতা যে কারও মনেই মুগ্ধতা ছড়ায়। কাশফুলের নজরকাড়া শুভ্রতা সহজেই সবার দৃষ্টির প্রধান আকর্ষণ হয়ে ওঠে।

নদীর ধার, মাঠে-ঘাটে, জলাভূমি, চরাঞ্চল, পাহাড় কিংবা দীর্ঘ বালুচরে লিকলিকে শরীরে অবহেলিতভাবে বেড়ে ওঠা ছন গোত্রীয় এ ঘাস উদ্ভিদটি তার মোহনীয় শুভ্রতা ছড়িয়ে যায়। প্রকৃতিতে তখন একটা সাজ সাজ রব দেখা দেয়। দেখে মনে হয় শতশত হ্যালির ধূমকেতু আজ নেমে এসেছে পৃথিবীতে। সে যেন তার শুভ্রসমুদ্রে ডুবিয়ে দিতে আমাকেই হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকছে।

রোমানিয়ার আদি নিবাসী ছন গোত্রীয় চিরল পাতার উদ্ভিদটির দুপাশ বেশ ধারাল। প্রাচীনকাল থেকেই কাশফুল এ দেশে শুভ্রতা ছড়িয়ে আসছে। এ কাশফুলের শুভ্রতা ও শরৎকালের কথা বাংলাসাহিত্যে এসেছে নানাভাবে। শরৎ ও কাশফুলের বন্দনায় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় লিখেছেন-‘কাশফুল মনে সাদা শিহরণ জাগায়, মন বলে কত সুন্দর প্রকৃতি, স্রষ্টার কি অপার সৃষ্টি।’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘আজিকে তোমার মধুর মুরতী/ হেরিনু শরত প্রভাতে/ হে মাত বঙ্গ শ্যামল অঙ্গ/ ঝরিছে অনল শোভাতে।’

মহাকবি কালিদাস শরৎ বন্দনায় বলেছিলেন ‘প্রিয়তম আমার, ‘ঐ চেয়ে দেখ, নব বধূর ন্যায় সুসজ্জিত শরৎকাল সমাগত।’ তিনি ‘ঋতুসংহার’ কাব্যে আরও লিখেছেন ‘কাশ ফুলের মতো যার পরিধান, প্রফুল্ল পদ্মের মতো যার মুখ, উন্মত্ত হাঁসের ডাকের মতো রমণীয় যার নূপুরের শব্দ, পাকা শালি ধানের মতো সুন্দর যার ক্ষীণ দেহলতা, অপরূপ যার আকৃতি সেই নববধূর মতো শরৎকাল আসে।’ এতসব কবিতা পড়তে পড়তে অগোচরেই কাশফুলের প্রেমে পড়ে যাই আরও বেশি।

আকাশে সাদা মেঘের খুনসুটি আর ভূমিতে কাশফুলের দিগন্তজোড়া দোলা দেখতে তাই মন ছুটে যায় কাশবনে। কাশফুলের শুভ্র মায়ায়। বছরের এ সময়টি তাই কাশবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে মানুষের ভিড় যেন মিলনমেলায় পরিণত হয়। বন্ধু স্বজন পরিবার নিয়ে অনেকেই বেড়াতে আসেন এ কাশবনে। তবে গ্রামে নয় এ শহরেই আছে কাশবন। নগর জীবনের ব্যস্ততার ফাঁকে মনকে প্রফুল্ল রাখতে ঘুরতে যেতে পারেন কাশবনে।

ঢাকার আশপাশে কোথায় কোথায় কাশবন-

৩০০ ফিট সড়ক

কাশফুল আর রেস্তোরাঁর জন্য সর্বাধিক পরিচিত ৩০০ ফুট সড়ক। তবে রেস্তোরাঁগুলো সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হলেও কাশবন, নদী এবং বিস্তৃত খোলা প্রান্তরের সৌন্দর্য আগের মতোই অটুট রয়েছে।

দিয়াবাড়ি

কাশবনের সৌন্দর্য উপভোগ ও ফটোসেশনের জন্য একটি আদর্শ জায়গা দিয়াবাড়ি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখানে বিনোদনপ্রেমীদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। আর কাশবনের পাশে নদীর তীরের হিমেল বাতাস আলোড়িত করে দর্শনার্থীদের।

আফতাবনগর

রামপুরা ব্রিজঘেঁষা জহুরুল ইসলাম সিটির ভেতর দিয়ে সামনে এগোলেই কাশবনের আরেক মহাসমুদ্র চোখে পড়ে। ঢাকার এত কাছে আফতাবনগরের এ কাশবন জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে সৌন্দর্যপ্রেমীদের কাছে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।

মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ

নদীর তীরবর্তী বালুময় প্রান্তরে শরতে কাশফুলের মেলা বসে। আর বুড়িগঙ্গা তীরের মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ কাশফুলের তেমনি এক রাজ্য। এছাড়া বসিলা সড়ক ধরে এগিয়ে ওয়াশপুরের বিভিন্ন ফাঁকা জমিতে কাশফুলের সমারোহ দেখা যায়।

হযরতপুর

কেরানীগঞ্জের হযরতপুরের কালিগঙ্গা নদীর তীরের বিস্তীর্ণ ভূমিতে শরতের শোভা কাশফুল ফোটে। বছিলা সেতু অতিক্রম করে আটিবাজার পার হয়ে আরও কিছু দূরেই হযরতপুর। খেয়া নৌকায় নদী পার হলে দেখা মিলবে কাশবনের।

মায়াদ্বীপ

মেঘনায় অবস্থিত মায়াদ্বীপ। এ দ্বীপে কাশফুলের সৌন্দর্য দেখার পাশাপাশি নদীকূলের মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন। গুলিস্তান থেকে বাসে চড়ে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা হয়ে বৈদ্দের বাজার এসে সেখান থেকে মেঘনার ঘাট হয়ে ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করে মায়াদ্বীপ যাওয়া যায়।

যমুনার চর

মানিকগঞ্জের আরিচার পুরোনো ফেরিঘাট থেকে ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে চলে যেতে পারেন যমুনার বুকে জেগে ওঠা চরের কাশবনে। গাবতলী থেকে অল্প টাকা ভাড়ায় শুভযাত্রা, লাক্সারি পরিবহনের বাসে সরাসরি আরিচা যাওয়া যায়।

ধলেশ্বরী নদী

ধলেশ্বরী নদীর দুই তীরে আছে কাশফুলের মহাসমারোহ। ঢাকা থেকে মাওয়া সড়ক দিয়ে যাওয়ার পথে কুচিয়ামারা এলাকার নদীতেও কাশফুল দেখা যায়।

পদ্মা নদী

শরতে পদ্মা নদীর আশপাশে অনেক স্থানেই কাশফুল ফোটে। শুভ্র এ ফুলের সৌন্দর্য আহরণে চলে যেতে পারেন মাওয়ার শিমুলিয়া ঘাটে। সেখান থেকে নৌকা ভাড়া করে নদীতে ঘুরোঘুরির সঙ্গে সঙ্গে খুঁজে নিন কাশবনের চর।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম