Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

প্রকৃতি

নগর নিসর্গে

Icon

হাসনাত মোবারক

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এ বছর বর্ষায় পুরো দেশ ছিল টালমাটাল পরিস্থিতিতে। বিশেষ করে নগর ঢাকার বেশিরভাগ রাস্তা যখন-তখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে বিঘ্ন ঘটেছে যানবাহন চলাচলে। এতে শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগের অন্ত ছিল না। কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য ওই কয়দিন হাতে সময় নিয়ে বের হয়েছি। কখনো অফিসের গাড়ি পৌঁছাতে বিলম্ব হয়েছে, নিরাপদ স্থান হিসাবে অপেক্ষা করেছি পিজি হাসপাতালের ছোট্ট বাগানে। বাগানের সোনাপাতি ফুল থেকে মধুপায়ী পাখিদের মধুপান করার দৃশ্য দেখে একঘেয়েমি এবং দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে। ফুল-পাখি ও প্রজাপতি দেখে অপেক্ষাও মধুর হয়ে উঠেছে কখনো কখনো। একদিন তো বন্ধু ভেবে হঠাৎ কাছে এসে দাঁড়াল পাতি চিত্রিত ডানার এক ফড়িং। কী অপরূপ সুন্দর সে ফড়িং!

আবার কোনো কোনো দিন রিকশাওয়ালা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পাশে নামিয়ে দেয়। এ প্রতিষ্ঠানটির লাগোয়া অল্প একটু ফাঁকা জায়গায় রয়েছে। সেখানে গজিয়ে উঠেছে বেশকিছু লতানো গাছ এবং বাহারি কিছু ফুলগাছ। হঠাৎ দেখি বাঘের গায়ের রঙের মতো ফুটে থাকা দুটি ফুল যেন কাছে ডাকছে। কী আকর্ষণীয় চাহনি তার! খুব কমই চোখে পড়েছে এ গাছটি। চাবুকের মতো চ্যাপটা পাতা। কাছে গিয়ে দেখি দুটি ফুলেই ছয়টি করে পাপড়ি। আরও কয়েকটি কলি ফোটার অপেক্ষায়। ফুলের ছবি তুলে নিলাম।

অলৌকিক কাণ্ড। দুই তিন দিন পর গিয়ে দেখি গাছটিতে ফুল দুটো আর নেই। সংগ্রহে থাকা কিছু বইপত্র ঘেঁটে বাঘের গায়ের মতো ফুলগাছটির নাম বের করতে হিমশিম খেলাম। ফুল ধরে গুগল লেন্সে অনুসন্ধান করেও বাংলায় উল্লেখ করার মতো কোনো তথ্য পেলাম না। তবে ইংরেজিতে বেশকিছু আর্টিকেল পাওয়া গেল। দেখতে বাঘের মতো ফুলটির নাম ‘লেপ্যারড লিলি’ বাংলায় চিতা লিলি হিসাবে পরিচিত। ফুলটি কমলা, লাল, নীলসহ আরও অনেক রঙের রয়েছে। ইরিডেসি গোত্রের এ ফুলটির আয়ু মাত্র একদিন। গ্রীষ্মের শেষের দিকে এ গাছটি বেড়ে ওঠে। বসন্তে রোপণ করা হয়। বীজ এবং শিকড় থেকেও গাছটি লাগানো যায়। খুব অল্প সময়েই গাছটি বড় হয়। উদ্ভিদটি বহুবর্ষজীবী। এটি পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় একটি গাছ এবং উত্তর আমেরিকাতেও দেখা যায়। এ ফুলগাছটির নামের সঙ্গে লিলি থাকলেও এটি সত্যিকারের লিলি নয়। কিন্তু ব্ল্যাকবেরি লিলি নামে পরিচিত। এটি আগে বেলামকান্দা চিনেনসিস নামে পরিচিত ছিল।

চিতা লিলি বা ব্ল্যাকবেরি লিলির পাশেই আরেকদিন চোখে পড়ল তারার মতো ছোট ছোট সাদা ফুল। ভ্রম হলো কালোকেশী গাছ ভেবে। কাছে গিয়ে পরিষ্কার হলো; এ তো বহুল পরিচিত কেশরাজ বা কালোকেশর নয়! এর পাতায় হালকা কাটার আবরণ। ফুলের ধরনও ভিন্ন। কী নাম হতে পারে এর। তথ্যের সন্ধান করতে থাকি। কিছু সময় পর দেখি একটি ডেয়ো পিঁপড়ে গাছটির পাপড়ির ওপর বসে আয়েস করে মধু আরোহণ করছে। ছবি তুলে নিয়ে ফিরি। সন্ধান করে দেখি নাম রিচার্ডিয়া স্ক্যাবরা। যাকে সাধারণত রুক্ষ মেক্সিকান ক্লোভার বা ফ্লোরিডা পুসলে বলা হয়। এটি রুবিয়াসি পরিবারের একটি প্রজাতি। এটি বিস্তৃত উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং মধ্য কেনিয়ার মতো পূর্ব আফ্রিকান দেশের উষ্ণ অঞ্চলের স্থানীয় উদ্ভিদ। উপকূলীয় ভূমিতে অনেকটা অনাদরে জন্মে বর্ষজীবী এ গাছটি। টেপমূল ও কাণ্ড শাখাযুক্ত, খাড়া, মাংসল, খুব লোমযুক্ত এবং ২০-৫০ সেমি লম্বা। এ ছাড়া পাতাগুলো মখমল এবং ডাঁটাবিহীন, বিপরীতভাবে সাজানো, আয়তাকার থেকে ল্যান্সের মতো বা ডিম্বাকার। ২-৪ সেমি লম্বা এবং ১-১.৫ সেন্টিমিটার চওড়া। পুষ্পবিন্যাসে সাদা ফুলের মাথা, যা চারটি পাতার স্তূপ দ্বারা বিভক্ত। ভেষজগুণ সমৃদ্ধ এ উদ্ভিদটির ফুল একদম নিখুঁত এবং পাপড়ির সংখ্যা পাঁচ।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম