Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

প্রকৃতি

হেমন্তের বাহারি ফুল

Icon

চয়ন বিকাশ ভদ্র

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সকালের শিশিরভেজা ঘাস আর হালকা কুয়াশা, মাঠের পাকা সোনালি ধান নিয়ে এসেছে হেমন্ত। বিশ্বকবি তার কবিতায় লিখেছেন-হিমের রাতে ওই গগনের দীপগুলিরে/হেমন্তিকা করল গোপন আঁচল ঘিরে।/ঘরে ঘরে ডাক পাঠালো/ দীপালিকায় জ্বালাও আলো/জ্বালাও আলো, আপন আলো,/ সাজাও আলোয় ধরিত্রীরে।

কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এ দুমাস হেমন্ত। এ ঋতুতে ফোটে গন্ধরাজ, শিউলি, কামিনী, হিমঝুরি, দেব কাঞ্চন, রাজ অশোক, ছাতিম, সোনাপাতি, লতাপারুল, বকফুল ইত্যাদি। হেমন্তের শিশিরভেজা প্রকৃতিতে ফুলের সংখ্যা অনেকটা সীমিত। গতবছর হেমন্তের ফুল নিয়ে একটা লেখায় হিমঝুরি, দেব কাঞ্চন, রাজ অশোক, সোনাপাতি লতাপারুলের কথা উল্লেখ করেছিলাম। এবার অন্য ৪টি ফুলের পরিচিতি উল্লেখ করছি। হেমন্তে ফোটা কয়েক প্রজাতির ফুলের পরিচিতি তুলে ধরা হলো।

গন্ধরাজ

গন্ধরাজ আমাদের দেশে সব মানুষের কাছে অতিপরিচিত একটি ফুল। এ ফুল মিষ্টি ও তীব্র সুগন্ধের জন্য বেশ জনপ্রিয়। সুগন্ধে সেরা বলে এর নাম গন্ধরাজ। এর আদিনিবাস চীন। গন্ধরাজের বৈজ্ঞানিক নাম Gardenia jasminoides, এটি Gentianales বর্গের Rubiaceae পরিবারের বহুবর্ষজীবী একটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। গুলচন্দ, বুঙ্গা চায়না, গার্ডেনিয়া প্রভৃতি নামেও পরিচিত। এ ফুলের ইংরেজি নামটি এসেছে বিখ্যাত আমেরিকান প্রকৃতিবিদ ড. আলেকজান্ডার গার্ডেনের নাম অনুসারে।

শিউলি

শিউলি ছোট বৃক্ষ বা গুল্ম। এর বৈজ্ঞানিক নাম Nyctanthes arbor-tristis, এটি Oleaceae পরিবারের উদ্ভিদ। ইংরেজিতে এ ফুলকে বলা হয় ‘Night-flowering Jasmine’। সংস্কৃত ভাষায় এ ফুল নালাকুমকুমাকা, হারসিঙ্গারাপুষ্পক, সুকলাঙ্গি, রাজানিহাসা, মালিকা, অপরাজিতা, বিজয়া ইত্যাদি নামে পরিচিত। সুগন্ধি এ ফুলে রয়েছে পাঁচ থেকে সাতটি সাদা বৃত্তি ও মাঝে লালচে-কমলা টিউবের ফুলগুলো রাতে ফোটে, সুগন্ধ ছড়ায় এবং সকালে ঝরে যায়। শরৎ ও হেমন্তকালের শিশিরভেজা সকালে ঝরে থাকা শিউলি অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য তৈরি করে। শিউলি ফুল শরৎকালের অন্যতম অনুষঙ্গ। এ ফুলের বোঁটাগুলো শুকিয়ে গুঁড়া করে পাউডার করে হালকা গরম পানিতে মেশালে চমৎকার রং হয়।

বকফুল

বকফুল গাছ ছোট, পাতাঝরা বৃক্ষ। বকপাখির মতো আকৃতি হওয়ায় হয়তো এর নামকরণ করা হয়েছে বকফুল। এর বৈজ্ঞানিক নাম Sesbania grandiflora, এটি Fabaceae গোত্রের Papilionoideae উপগোত্রের উদ্ভিদ। ফুলের রং বকের মতো সাদা বলেই হয়তো এর নামকরণ করা হয়েছে বকফুল। এ দেশে তিন রঙের বকফুল দেখা যায়-সাদা, লাল, গোলাপি। লাল রঙের বকফুলের জাত এসেছে থাইল্যান্ড থেকে। এজন্য একে থাই বকফুল বলা হয়। বকফুল সবজি হিসাবে খাওয়া হয়। সাধারণত না ফোটা ফুল সবজি হিসাবে খাওয়া হয়।

হাসনাহেনা

হাসনাহেনা একটি বাহারি কাষ্ঠল গুল্ম। এর বৈজ্ঞানিক নাম Cestrum nocturnum, এটি Solanaceae পরিবারের উদ্ভিদ। এর প্রচলিত নাম হাসনাহেনা, রাতের রানি। হিন্দি এবং উর্দুতে এ ফুলের নাম ‘রাত কি রানি’। হাসনাহেনার ইংরেজি নাম Queen of the night, Night blooming Jasmine। ফুল সরু, নলাকার, সরল, মসৃণ এবং একটু লম্বাকৃতির, দলমণ্ডল পাঁচ লোবযুক্ত। পাপড়ি সবুজাভ-সাদা হয়। ছোট ছোট অসংখ্য ফুল রাতেরবেলা চারদিক আমোদিত করে তোলে। রাতে ফুল থেকে কড়া, শক্তিশালী, মিষ্টি সুবাস বের হয়। হেমন্তে ফুল ফোটে। হিন্দি এবং উর্দুতে এ ফুলের নাম ‘রাত কি রানি’। গাছটি বেশ কষ্টসহিষ্ণু। তবে পানি জমে এমন জায়গায় এ উদ্ভিদটি না লাগানোই ভালো। ঘরের আশপাশে এবং বাগানের বেড়া হিসাবে এ গাছ লাগানো যায়।

ছাতিম

ছাতিমের বৈজ্ঞানিক নাম Alstonia scholaris, এটি Apocynaceae পরিবারের বৃক্ষ। ইংরেজিতে গাছটি Devil's tree নামে পরিচিত। এ হেমন্তে ছাতিমের গন্ধে মুখরিত হয়ে থাকে চারপাশ। ছাতিমের ডালপালা ছড়ানোর বৈশিষ্ট্যটি অন্য গাছে নেই। এর সরল উন্নত কাণ্ড কিছুদূর ওপরে হঠাৎ শাখা-প্রশাখার একটি ছাতার মতো পল্লব সৃষ্টি করে, আবার একলাফে অনেক দূরে উঠে আবার একটি পাতার আবরণের ধাপ তৈরি করে। এর পত্র বিন্যাস আবর্ত। এক আবর্তে ৫-৭টি পাতা থাকে। পাতা বল্লমাকার। এর ফুল সবুজাভ সাদা বর্ণের, গন্ধযুক্ত ও গুচ্ছবদ্ধ। শরৎ থেকে হেমন্তে ফুল ফোটে। ফল ৩০ সেমি. লম্বা, কিছুটা বাঁকা, চ্যাপ্টা ও গাছে ঝুলে থাকে। ছাতিমের নাম সপ্তপর্ণী, সুপর্ণক, মদ্গন্ধ, সপ্তচ্ছদ ইত্যাদি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর প্রমাণপত্রের প্রতীকস্বরূপ এ সপ্তপর্ণী পাতা প্রদান করা হয়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম