Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

আবার এলো যে বৈশাখ

Icon

হাবীবাহ্ নাসরীন

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আবার এলো যে বৈশাখ

যদি জানতে চান আজ বাংলা ক্যালেন্ডারের কোন মাসের কত তারিখ, তবে এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়, খুব কম বাংলাদেশিই এর সঠিক উত্তর দিতে পারবেন। যেহেতু বাংলা ক্যালেন্ডার ধরে খুব একটা চলতে হয় না, তাই মনে রাখার দায়ও কারও নেই। তাই বলে কি সত্যিই সারা বছর ভুলে থাকা যায়? আবহাওয়ার ধরন আর বিভিন্ন ফল, ফুল, সবজির উপস্থিতি দেখে ঋতুর পরিবর্তন টের পাওয়া যায়। আর টের পাওয়া যায় বিশেষ কয়েকটা দিন। সেসব দিনের মধ্যে পহেলা বৈশাখ অন্যতম। বাংলা ক্যালেন্ডারের অন্য তারিখগুলো আপনার মনে না থাকলেও এ দিন মন থেকে মোছা যাবেই না। প্রায় সব দেশেই নিজেদের নতুন বছর উদযাপন করা হয়ে থাকে। আমরাও তার ব্যতিক্রম নই। নববর্ষ পালনে যে নিজ নিজ দেশের ঐতিহ্য প্রাধান্য পাবে সে কথা সবারই জানা।

ইতিহাস বলছে, পহেলা বৈশাখ পালন শুরু হয় মুঘল সম্রাট আকবরের সময় থেকে। সেসময় বাংলা চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সব খাজনা, মাসুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হতো। এরপর তার ঠিক পরদিন অর্থাৎ বৈশাখ মাসের এক তারিখে ভূমির মালিকরা নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদের বিভিন্ন মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করতেন। আয়োজন করা হতো নানা উৎসবের। পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে এ আয়োজনই সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। যা ধীরে ধীরে রূপ নেয় পহেলা বৈশাখ উদযাপনে।

আমাদের পহেলা বৈশাখ উদযাপনের সঙ্গে হালখাতা শব্দটি শুরু থেকেই যুক্ত। এ দিনে হালখাতা তৈরির রেওয়াজ বেশ পুরোনো। হালখাতার অর্থ হলো একটি নতুন হিসাব বই খোলা। বাংলা বছরের শুরুর দিনটিতে দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া হলো এটি। পুরোনো বছরের হিসাব বই বন্ধ করে, নতুন হিসাব বই খোলা হয় এ দিনে। এ রীতি শুধু গ্রামের নয়, শহরেরও। হালখাতা খোলার দিনে বিক্রেতারা তাদের ক্রেতাকে বিভিন্ন রকম মিষ্টান্ন ও ঐতিহ্যবাহী খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করেন। তবে এ প্রথা এখন অনেকটাই আড়ালে চলে যাচ্ছে। কিছু কিছু দোকান বিশেষ করে স্বর্ণের দোকানে হালখাতা খোলার উদযাপন এখনো চোখে পড়ে।

যতই শহুরে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হই না কেন, আমাদের নাড়ি পোঁতা রয়েছে সেই গ্রামীণ ভিটাতেই। তাই তো মন বারবার ফিরে যেতে চায় নিজের গ্রামে। বাংলা নববর্ষের সঙ্গেও তাই গ্রামের মানুষের সংযোগটাও বেশি। এ দিনের নির্ভেজাল আনন্দ উৎসব সবচেয়ে বেশি টের পাওয়া যায় গ্রামেই। নববর্ষে নতুন অথবা পরিচ্ছন্ন জামাকাপড় পরে একে অন্যের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া, সামর্থ্য ও রুচি অনুযায়ী বাড়িঘর সাজানো, নানা পদের লোভনীয় খাবারের আয়োজন আপনার কাছে শহুরে আধুনিক জীবনযাপনের অংশ মনে হলেও এর শুরুটা হয়েছে কিন্তু গ্রাম থেকেই। গ্রামে তো নববর্ষ উপলক্ষ্যে বড় বড় মেলারও আয়োজন করা হয়। সেসব মেলায় কী থাকে না! বাতাসা, নিমকি, মোয়া, নাড়ু, মুড়কি, পিঠাপুলি থেকে শুরু করে নানা পদের মুখরোচক খাবার। নাগরদোলা, নানা রকম খেলনা, ঘর সাজানোর নানা পণ্য বিনোদনের অনেক ব্যবস্থাই থাকে সেসব মেলায়। বিশেষ করে শিশুদের জন্য বৈশাখী মেলা অনেক বেশি আকর্ষণীয়। অনেক গ্রামে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হয় নানা ধরনের খেলা কিংবা সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতারও।

গ্রামের সঙ্গে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের সম্পর্ক গভীর হলেও দেশের প্রাণকেন্দ্র রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সম্পর্কও কিন্তু কম গভীর নয়। ইট-পাথরের এ ধূসর শহরেও কখনো কখনো এক টুকরো গ্রাম নেমে আসে। বিশেষ করে বছরের বিশেষ কিছু দিনে। পহেলা বৈশাখ হলো তেমনই একটি দিন। এ দিন নগরীর রমনার বটমূলে বসে বিভিন্ন আয়োজন। এ দিন অনেকেই নববর্ষ উদযাপনে শামিল হতে উপস্থিত হন। এই দিনে গান, কবিতা আর আনন্দ শোভাযাত্রায় চলে উদযাপন। পান্তা ভাতের সঙ্গে বিভিন্ন ভর্তা এবং মাছ ভাজাও বিক্রি হয় দেদার। বসে বাহারি সব আয়োজন নিয়ে বৈশাখী মেলাও। শহুরে জীবনেও একদিনের জন্য ফিরে আসে বৈশাখের আনন্দ।

বৈশাখ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম