Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

কোন আলো লাগল চোখে...

Icon

মানসুরা সিদ্দিক

প্রকাশ: ০৬ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

একজন কবির প্রভাব কেবল তার কবিতায়ই থাকে না, কবিতা ছাড়িয়ে তা বিস্তৃত হতে পারে আরও বহুদূর। কখনো গানে, কখনো জীবনযাপনে, কখনো বা পোশাকেও উঠে আসে তার একাংশ। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবির জীবনাবসানেরও শতবর্ষ হয়ে এলো প্রায়, অথচ তার লেখা এখনো প্রাসঙ্গিক। নানা গল্প-উপন্যাসে তার বর্ণনা দেওয়া বিভিন্ন সাজ-পোশাক এখনো ভালোবেসে পরছেন নারীরা। কেবলই কি নারী, পুরুষরাও পিছিয়ে নেই এক্ষেত্রে। বাঙালির চিরাচরিত সাজই যেন ফুটে ওঠে রবীন্দ্রনাথের বর্ণনায়। তার গল্পের নায়িকাদের সৌন্দর্যের বর্ণনা দেখে এখনো অনেক তরুণী গোপনে বুকে ঈর্ষা লালন করেন! মনে হয়, ওভাবে সাজলে আমাকেও দেখতে অমনই মায়াবতী লাগবে হয়তো।

রবিঠাকুরের গল্পের নায়িকারা সাজ-পোশাকে উগ্র নয়, তাতে বাড়তি চাকচিক্যও নেই। যা আছে তা কেবল নম্র, চক্ষু শীতলকারী এক আহ্বান যেন। যাকে দেখলে বিনীত হতে ইচ্ছা হয়, মনে হয় কোমল ব্যক্তিত্বের প্রতীক। গল্পের নায়িকাদের এভাবেই সাজিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। তার সময়ে নারীদের সাজ মানেই ছিল আভিজাত্য। বাড়তি সাজ ছিল না বললেই চলে। সাজের ক্ষেত্রে পরিমিতবোধই তাদেরকে অনন্য সুন্দর করে তুলত। শুধু পোশাকই নয়, এর পাশাপাশি গয়না, চুল বাঁধার ধরন, এমনকি কথা বলার ভঙিতেও ছিল রুচির ছোঁয়া। ঘরে-বাইরে উপন্যাসের চরিত্র বিমলা। যিনি রাজবাড়ির বউ, একজন প্রগতিশীল নারী। একসময় নাম লেখান স্বদেশি আন্দোলনে। উপন্যাসে তার সাজ-পোশাকের বর্ণনা এভাবে এসেছে-‘সেদিন সকালে মাথা ঘষে আমার সুদীর্ঘ এলোচুল একটি লাল রেশমের ফিতে দিয়ে নিপুণ করে জড়িয়েছিলুম। দুপুরবেলায় খাবার নিমন্ত্রণ, তাই ভিজে চুল তখন খোঁপা করে বাঁধার সময় ছিল না। গায়ে ছিল জরির পাড়ের একটি সাদা মাদ্রাজি শাড়ি, আর জরির একটুখানি পাড়-দেওয়া হাত-কাটা জ্যাকেট।’ এভাবেই উঠে আসে তখনকার নারীদের আধুনিক সাজের বৃত্তান্ত।

চারুলতার কথা মনে আছে? রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্প ‘নষ্টনীড়’ এর চরিত্র। একবার তার সাজ-পোশাকের কথা মনে করুন। সব সময়েই কেমন গোছানো আর প্রশান্তিদায়ক। চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে একটু ভারী ধাঁচের গয়না, মাথায় খোঁপা আর খোঁপায় গুঁজে রাখা ফুল কিংবা কাঁটা, লেইস বসানো ব্লাউজ, শাড়ির প্রশস্ত পাড়-সব কেমন চেনা চেনা লাগছে না? বাঙালি নারীর সাজ যে আমরা এভাবেই কল্পনা করি! সাজে আভিজাত্য ও কোমলতার সংমিশ্রণ রবিঠাকুরের গল্পের নারীদের বেলায় চোখে পড়ে বেশ। পোশাকে প্রাধান্য পেয়েছে হালকা সব রং। আর হালকা রং মানেই চোখের আরাম, হৃদয়ে প্রশান্তি। যা এখনকার ফ্যাশনেও সমসাময়িক। অনেক ফ্যাশন হাউজই রবিঠাকুরের লেখা থেকে ধারণা ধার করে পোশাক তৈরি করে থাকে। অনেক শাড়ি, থ্রিপিস, পাঞ্জাবিতে তার ছাপ ফুটে ওঠে। নারীর সাজ-পোশাকে শাড়ির পাশাপাশি ব্লাউজের কারুকাজও নজরকাড়া। কুরুশকাঁটার লেইস, ফ্রিল বা পাইপিং এ পোশাকের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তোলে। কাপড় হিসাবে বেছে নেওয়া হয় আরামদায়ক সুতি, মটকা, সিল্ক, মসলিন ইত্যাদি। কলার তোলা ব্লাউজই বেশি দেখা যায়, তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। থ্রি কোয়ার্টার হাতার সামনে ফ্রিল করা ডিজাইন তো এখনকার নারীদেরও পছন্দের শীর্ষে। এর সঙ্গে শাড়ি হিসাবে সিল্ক, হাফসিল্ক, তাঁত, কোটা, অ্যান্ডিকটন কিংবা কটন শাড়ি মানিয়ে যাবে বেশ।

এখনকার মতো তখন এত ভারি মেকআপ কিংবা প্রসাধনীর সহজলভ্যতা ছিল না ঠিকই, তবে যা ছিল তা এখনো বলতে গেলে চলনসই। রবিঠাকুরের বর্ণনায় যতটুকু উঠে এসেছে, ততটুকু সাজই সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলতে যথেষ্ট। চুলে বড় খোঁপা কিংবা বেণি, আর তার ভাঁজে গুঁজে দেওয়া রুপার কাঁটা আপনাকে আরও অনন্য করে তুলবে না? রুপার গয়নার সৌন্দর্য ম্লান হওয়ার প্রশ্নই আসে না! হাতে নানা ধরনের চুড়ি, বালা, কানে দুল কিংবা ঝুমকা; গলায় চেইন কিংবা মালা, পায়ে শখের নূপুর এটুকু সাজই তো নারীর জন্য যথেষ্ট। মূলত বাঙালি নারীর চিরকালীন সাজের লুকানো আভিজাত্যই উঠে এসেছে রবীন্দ্রনাথের লেখায়। যার সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায় আমাদের শেকড়ের।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম