প্রকৃতি
তিনটি বাহারি বিদেশি ফুলের কথা
চয়ন বিকাশ ভদ্র
প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
শৌখিন উদ্ভিদপ্রেমিক এবং নার্সারি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে গত কয়েক বছরে অনেক বিদেশি উদ্ভিদ আমাদের দেশে এসেছে এবং জনপ্রিয় হয়েছে। তার মধ্যে অ্যামারাইলিস লিলি, টেকোমা অরেঞ্জ জুবিলি এবং ইমপ্যাশেন্সের সঙ্গে আজ পরিচয় করিয়ে দেব।
অ্যামারাইলিস লিলি : কন্দ জাতীয় এ উদ্ভিদটির প্রজাতির নাম Hyppiastrum reginae ,এটি Amaryllidaceae পরিবারের বিরুৎ। ইংরেজিতে এ উদ্ভিদ Mexican Lily, Amaryllis, South American Amaryllis নামে পরিচিত। অ্যামারাইলিস মানে হচ্ছে ভালোবাসা, সৌন্দর্য এবং দৃঢ়তা। এ উদ্ভিদের আদি নিবাস ভেনেজুয়ালা, পেরু, বলিভিয়া, ব্রাজিল। ফুল ফোটে বসন্তের শেষে। ফাঁপা লম্বা ডাঁটার আগায় একসঙ্গে দু-তিনটি ফুল ফোটে। বড় ফানেল আকৃতি, পাটকিলে, গাঢ় লাল, সাদাসহ নানা রঙের ফুল পাওয়া যায়। ফুল গন্ধহীন। পাতা ১০-১৫ সেমি লম্বা, ৩-৪ সেমি চওড়া। আগের বছরের কন্দ থেকে পরের বছর বসন্তের শেষে আবার পাতা ও পুষ্পদণ্ড গজায় এবং পুষ্পদণ্ডের মাথায় ফুল ফোটে। ফুল বেশিদিন স্থায়ী হয় না। অ্যামারাইলিস লিলির ছবিটি গত ১৭ মার্চ ২৫ ময়মনসিংহের কাচারিঘাটের বাংলাদেশ নার্সারি থেকে তুলেছিলাম।
ইমপ্যাশেন্স : দোপাটি ও ইমপ্যাশেন্স একই গণ ও গোত্রের উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Impatiens walleriana, এটি Balsaminaceae পরিবারের বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। গণের নাম অনুসারে এটি ইমপ্যাশেন্স নামে পরিচিত। এছাড়া এটি ইংরেজিতে Busy Lizzie (British Isles), balsam ইত্যাদি নামে পরিচিত। এ উদ্ভিদের আদি নিবাস পূর্ব আফ্রিকা কেনিয়া থেকে মোজাম্বিক পর্যন্ত। ল্যাটিন নির্দিষ্ট উপাধি একজন ব্রিটিশ ধর্মপ্রচারক Horace Waller (১৮৩৩-১৮৯৬) কে সম্মান করে এর প্রজাতিক পদ walleriana করা হয়েছে। এটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ যা ১৫-৬০ সেমি লম্বা হয়। এর কাণ্ড নরম, পাতা একান্তর। পাতা প্রশস্ত, বল্লমাকৃতির, ৩-১২ সেমি লম্বা এবং ২-৫ সেমি প্রশস্ত। পাতাগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একান্তর হয়, যদিও তারা গাছের ওপরের দিকে বিপরীত হতে পারে। সরল পাতাগুলো ১.৫ থেকে ৬ সেমি লম্বা হয়। পত্রফলক ডিম্বাকার থেকে বিস্মৃত উপবৃত্তাকার, কখনো, কখনো ডিম্বাকার, ২.৫ থেকে ১৩ ইঞ্চি লম্বা এবং ২ থেকে ৫.৫ ইঞ্চি প্রশস্ত হয়। পাতা সবুজ এবং কখনো, কখনো নিচের দিকে দাগযুক্ত বা গোলাপি বা লালচে।
ফুল খয়েরি, লাল, সাদা প্রভৃতি রঙের হয়। ছোট, বহুপ্রতিসম ফুলগুলো প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। ফুলের ব্যাস ২-৫ সেমি, পাপড়ি ৫টি। ফল পাকলে অন্য ইমপ্যাটিয়েন্স প্রজাতির মতো একইভাবে বিস্ফোরিত হয়। নিচের বৃত্তাংশগুলো সামান্য নৌকা আকৃতির এবং হঠাৎ সরু, ২.৮ থেকে ৪.৫ ইঞ্চি লম্বা, সুতার মতো বাঁকা, কিন্তু পেছনে বাঁকা নয়। কাণ্ডগুলো আধা-রসালো এবং গাছের সব অংশ (পাতা, কাণ্ড, ফুল, শিকড়) নরম। ইমপ্যাশেন্সের ছবিটি ৮ জানুয়ারি ২৫ ময়মনসিংহের কাচারিঘাটের বাংলাদেশ নার্সারি থেকে তুলেছিলাম।
টেকোমা ‘অরেঞ্জ জুবিলি’ : টেকোমা অরেঞ্জ জুবিলি সাধারণত ‘এস্পেরানজা’ নামে পরিচিত। এর শংকরের নাম Tecoma x alata ‘Orange Jubilee’, এটি Bignoniaceae পরিবারের উদ্ভিদ। এটি দ্রুত বর্ধনশীল কোমল বহুবর্ষজীবী গাছটি বসন্তে কমলা-লাল ট্রাম্পেট ফুল তৈরি করে। উজ্জ্বল ফুলগুলো হামিংবার্ড এবং অন্যান্য পরাগায়ণকারীদের বাগানে আসতে উৎসাহিত করে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে বাহারি উদ্ভিদ হিসাবে রোপণ করা হয়। মৃদু জলবায়ুতে এটিকে আধা-চিরসবুজ এবং শীতল জলবায়ুতে একটি পত্রঝরা কোমল বহুবর্ষজীবী। শীতল জলবায়ুতে প্রতি বছর এটি কেটে ফেললে নতুন করে বৃদ্ধি পায়। টেকোমা ‘অরেঞ্জ জুবিলি’ পূর্ণ রোদে সবচেয়ে ভালো জন্মায় এবং প্রচুর পরিমাণে প্রতিফলিত তাপ সহ্য করতে পারে। এ দ্রুত বর্ধনশীল এস্পেরানজা একবার প্রতিষ্ঠিত হলে অত্যন্ত খরা সহনশীল হয় এবং বিভিন্ন ধরনের মাটির পরিবেশ সহ্য করতে পারে। এ উদ্ভিদ পোকামাকড় বা রোগ দ্বারা খুব একটা আক্রান্ত হয় না। তাই এটা বাগানের জন্য আকর্ষণীয়। ময়মনসিংহের কাচারিঘাটের খানে মোহাম্মদ আলী নার্সারিতে দুবছর আগে এ উদ্ভিদটির দেখা পাই। ফুলের ছবিটি ১০ মার্চ ২৫ ময়মনসিংহের খানে মোহাম্মদ আলী নার্সারি থেকে তুলেছিলাম।
লেখক : প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ
