|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রকৃতির সবচেয়ে স্নিগ্ধ কন্যা বর্ষা। ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির জলে নেয়ে প্রকৃতিও যেন হয়ে ওঠে আরও সতেজ। তপ্ত গরমের শেষে আকাশে মেঘের গম্ভীর গর্জন যেন আশার বাণী শোনায়। বৃষ্টি আসে। ভিজে যায় পথ, ঘাট, মাঠ, প্রান্তর। বর্ষায় গ্রামের ছবিটি যেমন মাধুরী দিয়ে আঁকা হয়, শহরে ঠিক তার ভিন্ন চিত্র। ঠাসা দালান-বাড়ির ভিড়ে একটুকু সবুজ নেই কোথাও। বৃষ্টির সৌন্দর্য আসবে কোথা থেকে! এখানে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা, ঠিকভাবে ঘরে ফিরতে পারার চিন্তা! তবু মানুষের মন তো! শৈশব-কৈশোরে ফেলে আসা কোনো এক বর্ষার স্মৃতি সেখানে উঁকি দেবেই। যখন বৃষ্টি এলেই ভিজতে নামার স্বাধীনতা ছিল! টাপুর-টুপুর পদ্মপুকুরে স্মৃতির নৌকা দোল খায়। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফিরে আসতে হয় শহুরে জীবনের বাস্তবতায়।
এখন বর্ষা মানে আরও বেশি সচেতন থাকা। বর্ষা মানে নিজের আর পরিবারের প্রতি আরেকটু বেশি খেয়াল রাখা। বড় হতে হতে বর্ষার মানেও বদলে যেতে থাকে।
বর্ষাকালে ঘরে বসে থাকার তো জো নেই। বাইরে বের হতেই হবে। নানা কাজে বাইরে বের হলেন আর হুট করে বৃষ্টি চলে এলো। তখন মুহূর্তেই ভিজে গিয়ে বর্ষার ঘাড়ে দোষ চাপানো যাবে না। কারণ বর্ষাকালে বৃষ্টি তো হবেই। সেজন্য আপনাকেই বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে প্রস্তুতি নিয়ে বের হতে হবে। প্রথমত বর্ষাকালে পরতে হবে এমন পোশাক, যা পানি ধরে রাখে না বা সহজেই শুকিয়ে যায়। এ সময় জর্জেট বা সিল্কের কাপড় দিয়ে তৈরি পোশাক পরা বেশি ভালো। কারণ এ ধরনের পোশাক পানিতে ভিজলেও আবার দ্রুতই শুকিয়ে যায়। এরপর আসা যাক সঙ্গে কী রাখবেন সে প্রসঙ্গে। এ সময় সঙ্গে আর কিছু রাখুন বা না রাখুন, ছাতা অবশ্যই রাখতে হবে। অনেকেই ছাতা রাখাটাকে বাড়তি বোঝা মনে করেন। এমনটা করাই যাবে না। বৃষ্টি বলে-কয়ে আসবে না। সে আসবে তার মনমর্জিমতো। বৃষ্টির এ হঠাৎ আক্রমণ থেকে বাঁচতে তাই বর্ষাকালে বাইরে বের হলে ছাতা সঙ্গে রাখতেই হবে।
বর্ষার সঙ্গে স্নিগ্ধতার সম্পর্ক। এ সময় পোশাকের রঙের দিকেও একটু নজর দিন। একটু ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া আবার বৃষ্টি ঝরে পড়ার মন ভোলানো দৃশ্য তো সারা বছর দেখতে পাওয়া যায় না। বাড়িতে ফিরে আরাম করে এক কাপ গরম কফি খেতে খেতে বৃষ্টি দেখার লুকানো ইচ্ছা তো আমাদের সবারই রয়েছে। বৃষ্টির স্নিগ্ধতা তাই তুলে আনতে পারেন আপনার পরিধানেও। এ সময় আরামদায়ক কাপড় তো বেছে নেবেনই, সেইসঙ্গে চোখের আরাম হয় এমন সব রঙের কাপড় বেছে নিন। বর্ষার সঙ্গে নীল, ধূসর নীল, সবুজ, আকাশি রঙের বেশ সখ্য। এসব প্রশান্তিদায়ক রং বেছে নিতে পারেন পোশাকের ক্ষেত্রে। যারা একটু উজ্জ্বল রং পছন্দ করেন, তাদের জন্য কমলা, গোলাপি, গাঢ় সবুজ রংগুলো বেশি মানানসই হতে পারে। শখ করে দুই-একদিন শাড়ি পরলে ঠিক আছে। তবে প্রতিদিন পরতে যাবেন না। কবে কোনদিন পানি-কাদায় মাখামাখি হয়ে বাড়ি ফিরতে হবে, বুঝতেও পারবেন না। বরং এ সময় পরুন এমন পোশাক যেগুলো সহজে পানিতে ভিজে যাওয়ার ভয় নেই। অর্থাৎ জামার দৈর্ঘ্য পা পর্যন্ত না হয়ে কিছুটা ওপরের দিকে হলে ভালো হয়।
শুধু পোশাক নয়। বর্ষায় খেয়াল রাখতে হবে খাবারের দিকেও। এ সময় পানির মাধ্যমে নানা জীবাণু ছড়ানো সহজ হয়ে যায়। তাই বাইরের খোলা খাবার পুরোপুরি বর্জন করতে হবে। নয়তো সেসব খেয়ে পেটের অসুখ বাধাতে সময় লাগবে না! এ সময় ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। বৃষ্টির বিকালে ভাজাভুজির জন্য মনটা কেমন করলে ঘরেই অল্পস্বল্প তৈরি করে খান। সপ্তাহে এক-আধদিন খেতেই পারেন, তবে এটা আবার প্রতিদিনের অভ্যাস করে ফেলবেন না যেন। বিভিন্ন ধরনের শাক পুষ্টিকর হলেও বর্ষাকালে সেগুলো না খাওয়াই ভালো। কারণ তা ভালো করে পরিষ্কার করা না হলে জীবাণু থেকে যাওয়ার ভয় থাকে। এ সময় নিজের পাশাপাশি খেয়াল রাখুন বাড়ির অন্য সদস্যদের। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুদের যত্ন নিন। সুস্থতা ও সতেজতায় বর্ষার দিনগুলো হয়ে উঠুক আরও সুন্দর, আরও ভালোলাগার।
