Logo
Logo
×

প্রতিমঞ্চ

ধুলোয় ধোঁয়াশা জীবন

Icon

এম এস আই খান

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০১৯, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ধুলোয় ধোঁয়াশা জীবন

নগরবাসীকে নাক-মুখ ঢেকে চলতে হলেও কর্তৃপক্ষের মুখ তাতে কতটা মলিন? এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছেন-  

ধুলা নিয়ন্ত্রণ ছাড়া নির্মাণ কাজের অনুমতি নয়

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান যুগান্তরকে বলেন, বায়ু দূষণের জন্য সুনির্দিষ্ট করে বা আলাদা করে কোনো আইন নেই। তবে বাতাস যেহেতু পরিবেশের অংশ কাজেই পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের অধীনে বাতাস দূষণ নিয়ন্ত্রণটা পরিবেশ বিভাগের দায়িত্ব।

কিন্তু দেখা যাচ্ছে বায়ু দূষণ যেসব ক্ষেত্র থেকে হচ্ছে যেমন- ইটভাটা, সেটা পরিবেশ অধিদফতর নিয়ন্ত্রণ করলেও তাকে পোড়ান ইটের বিকল্প বের করতে হবে। সেটা এখনও পর্যন্ত বের করেছে সরকারের এসবিআরআই (ক্ষুদ্র ব্যবসা রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ)। কিন্তু অতিসম্প্রতি সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, ২০২৫ সাল নাগাদ পোড়ান ইট থেকে বাংলাদেশ সম্পূর্ণ সরে আসবে। সেই সিদ্ধান্তটা আসলে শক্ত করে বাস্তবায়ন করতে হবে।

ঢাকা শহরে গাছপালা একেবারেই কম। যত পারা যায় সবুজায়ন করতে হবে। যত নির্মাণ হচ্ছে কোনো নির্মাণের অনুমোদন দেয়া যাবে না যত ক্ষণ পর্যন্ত ধূলা নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে। আর একটা হচ্ছে গাড়ির পেট্রলে সালফারের পরিমাণ। গাড়ির পেট্রলের মান কি হবে এটা বিএসটিআই, বিআরটিএ এবং পরিবেশ বিভাগ মিলে ঠিক করে দেবে। আমার মনে হয় যদি এই কয়টা কাজ করা যায় এবং সিটি কর্পোরেশন যদি নিয়মিত ধুলা নিয়ন্ত্রণে যেখানে নির্মাণ হচ্ছে, রাস্তা কাটা হচ্ছে সেসব জায়গায় বিশেষ তদারকি করে তাহলে শহরের বায়ু দূষণকে একটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আমরা আনতে পারব। এ সংক্রান্ত আইনের খসড়া পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে এখন অপেক্ষমাণ আছে।

ধূলি দূষণের ফলে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান যুগান্তরকে বলেন, ধূলি দূষণ মূলত বায়ু দূষণেরই একটা অংশ। সামগ্রিকভাবে বায়ু দূষণ শীতকালে বাড়ে। আর বর্ষাকালে কমে। বর্ষাকালে বৃষ্টির কারণে চারপাশ ভেজা থাকে সে কারণে দূষণ কম হয়। আর শীতকালে শুষ্ক থাকার কারণে ধুলা ছড়িয়ে যায়। শীতকালে কাজের পরিমাণও বেশি হয় এবং ধুলাও বাতাসেও বেশি ভাসে। শুষ্ক সময়ে ইটভাটা চালু হয় এবং নির্মাণ কাজ অনেক বেশি হয়। নতুন ভবন নির্মাণ বা পুরনো ভবন ভাঙার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন না করা। পুরনো ভবন ভাঙার আগে যদি পানি দিয়ে ভিজিয়ে নেয়া হয় তাহলে ধুলা এত বেশি পরিমাণে ছড়ায় না। চারপাশে চটের বেড়া দিয়েও ধুলা ছড়িয়ে পড়া কমান যেতে পারে। এছাড়াও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করার পর দ্রুত মাটি-বালু না সরান, রাস্তা পরিষ্কার না করা, ময়লা-আবর্জনা রাস্তায় ফেলা, ওয়াসার কাজ, গ্যাসের পাইপ সংস্কার, ফ্লাইওভারের কাজ ইত্যাদি নানা কাজ করার ক্ষেত্রে নিয়ম না মেনে করার ফলে দূষণ ছড়াচ্ছে। বর্ষাকালে এ কাজগুলো করলে ধুলা ছড়াবে না কিন্তু খোঁড়াখুঁড়ির ফলে কাদা জমে মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। তাই এ জাতীয় কাজের জন্য শুষ্ক মৌসুমই উত্তম সময়। কিন্তু নিয়ম মেনে কাজগুলো করলে দূষণ ছড়াবে না।

অনেকের সর্দি-কাশি লেগেই থাকছে, নানা ধরনের রোগ ছড়াচ্ছে। ধুলার সঙ্গে নানা ধরনের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ায় জনস্বাস্থ্যের সরাসরি ক্ষতি হচ্ছে। বয়স্ক এবং শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ ধূলি দূষণ থেকে। ফলে ওষুধ ও চিকিৎসা খাতে বেশি খরচ হচ্ছে। পরিবারপ্রতি গড়ে পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে ধূলি দূষণের ফলে। যেখানে ধূলি দূষণ কম সেখানে ঘনঘন ঘর, মেঝ, আসবাবপত্র পরিষ্কার করতে হয় না।

কিন্তু আমাদের এখানে প্রতিদিন ঘর মুছতে হচ্ছে, কাপড় পরিষ্কার করতে হচ্ছে। এর মাধ্যমে বহু পরিমাণে অতিরিক্ত শ্রমঘণ্টা ব্যয় হচ্ছে। যে এলাকায় ধুলার পরিমাণ বেশি সেখানে একটা কাপড় একবার পরার পরই ময়লা হয়ে যাচ্ছে। ফলে অতিরিক্ত পানি খরচ হচ্ছে, অতিরিক্ত ডিটারজেন্ট যাচ্ছে, ঘনঘন কাপড় ইস্ত্রি করতে হচ্ছে। একটা কাপড় ঘনঘন ধৌত করলে দ্রুত কাপড়টি ফ্যাকাশে হয়ে যায়, ফলে নতুন কাপড় কিনতে হয়। ধুলা জমে আসবাবপত্র দ্রুত নষ্ট হচ্ছে, যন্ত্রপাতি অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে।

ধোঁয়াশা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম