Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

বাজেট বাস্তবায়নে সচিবদের নির্দেশ

মার্চের মধ্যে ৬০ শতাংশ ব্যয় বাধ্যতামূলক

অনুসরণ করতে হবে কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মার্চের মধ্যে ৬০ শতাংশ ব্যয় বাধ্যতামূলক

অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ এই ৯ মাসে বাজেটের টাকার ন্যূনতম শতকরা ৬০ ভাগ ব্যয় করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাকে। নির্ধারিত সময়ে তা করতে ব্যর্থ হলে শেষ ৩ মাস অর্থাৎ এপ্রিল-জুন এই সময়ে চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড় স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। সরকারের অর্থ ব্যয়ে দুর্নীতি, অনিয়ম, অপচয় ও অপব্যবহার প্রতিরোধ করতে এ নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এছাড়া কৃচ্ছ সাধনের লক্ষ্যে অর্থ ব্যয়ে যেসব খাতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সেগুলো যথাযথ অনুসরণ করতে বলা হয়েছে ওই নির্দেশনায়। পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পণ্য, সেবা, কার্যক্রম ও বুদ্ধিভিত্তিক সেবা কেনার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সময়ভিত্তিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের পাঠানো ওই নির্দেশনায় বলা হয়, মন্ত্রণালয়গুলো সুষ্ঠুভাবে বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারছে না। দেখা যাচ্ছে বছরের শেষদিকে টাকা খরচ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাচ্ছে, অথচ বছরের শুরুতে ধীরগতিতে অর্থ ব্যয় হয়। এর ফলে সরকারের সীমিত সম্পদের অপব্যবহার, অপচয় এবং নানা অনিয়মের সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া আয় ও ব্যয়ের মধ্যে এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হচ্ছে, যা মোকাবিলা করতে গিয়ে অপরিকল্পিত ঋণ গ্রহণ করতে হচ্ছে সরকারকে। এ ধরনের ঋণজনিত ব্যয়ের দায়ভারও বহন করতে গিয়ে আর্থিক শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। এ পরিস্থিতি এড়াতে অর্থবছরের শুরুতে বাজেট বাস্তবায়নে প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে অর্থ বিভাগ।

জানতে চাইলে সাবেক অর্থ সচিব (সিনিয়র) মাহবুব আহমেদ যুগান্তরকে জানান, বছরের ৯ মাসের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ অর্থ ব্যয়ের বাধ্যবাধকতা ভালো। তবে খেয়াল রাখতে হবে কোটা পূরণ করতে গিয়ে সরকারের অর্থ যেনতেনভাবে ব্যয় না করে। এক্ষেত্রে অর্থ বিভাগ থেকে সুষ্ঠু ব্যয় হচ্ছে কিনা সেটি মনিটরিংয়ে রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, শেষ দিকে মন্ত্রণালয়গুলো তড়িঘড়ি ব্যয় করা দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি গড়ে উঠছে। এর ফলে ব্যয়ের গুণগত মান নষ্ট ও অপচয় বেশি হয়। এতে অনিয়ম করার সুযোগ তৈরি হয়। 

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিদায়ি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বাজেট বাস্তবায়ন হার জুলাই থেকে মার্চ এই ৯ মাসে হয়েছে পরিচালন ব্যয় ৬২.১ শতাংশ এবং উন্নয়ন বাজেট ২৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। শেষ ৩ মাসে পরিচালন ব্যয়ের ৩৮ শতাংশ এবং উন্নয়ন ব্যয় ৭৫ শতাংশ খরচ করতে হয়। ফলে শেষ সময়ে টাকা খরচের একটি বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের। অর্থ বিভাগের নির্দেশনায় বলা হয়, সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় কম হয়। বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, মেরামত সংরক্ষণ, নির্মাণ ও পূর্তকাজ, মালামাল ক্রয় ও সংগ্রহের মতো কাজ অর্থবছরের শেষ দিকে করা হয়। ফলে সরকারি ব্যায়ের গুণগত মান ঠিক রাখা যায় না। যে কারণে বছর শেষে অপরিকল্পিত ঋণের দায় গ্রহণ করতে হয়। সেখানে বলা হয়, চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা প্রতি ৩ মাস অন্তর ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা তৈরি করতে হবে। এছাড়া প্রত্যেক মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে সব ধরনের ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করতে হবে। আর অর্থবছরের শুরুতে মেরামত ও সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া এমনভাবে শুরু করতে হবে যেন প্রত্যেক কোয়ার্টারে কাজের বিল ভারসাম্যপূর্ণভাবে পরিশোধ করা যায়; শেষ কোয়ার্টারে এসে বিল পরিশোধের চাপ সৃষ্টি না হয়।

এছাড়া সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসাবে বিভিন্ন কর্মসূচি থেকে উপকারভোগীদের ভাতা, অনুদান বা সুবিধাদি বিভিন্ন নীতিমালা অনুযায়ী বছরের বিভিন্ন সময় প্রদান করা হয়ে থাকে। যে সব মন্ত্রণালয়/বিভাগ/প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষা সেবা প্রদান করা হয় তাদের ক্ষেত্রে উক্ত কর্মসূচিগুলোর নীতিমালা অনুসারে ব্যয় পরিকল্পনা করতে হবে।

এছাড়া ইআরডি সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের সম্ভাব্য অঙ্ক তুলে ধরে একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের। এছাড়া রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে বলা হয়, প্রতি ৩ মাসের জন্য রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া এনবিআর কর, এনবিআরবহির্ভূত কর ও কর ব্যতীত প্রাপ্তির ক্ষেত্রে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।

অর্থ বিভাগ মনে করে, বাজেট নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়নের জন্য আগাম পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। সেটি করতে পারলে অপরিকল্পিতভাবে সরকারের ঋণ গ্রহণ এড়ানো সম্ভব হবে। পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ঋণজনিত ব্যয় হ্রাস করা যাবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম