অর্থ আত্মসাৎ ও জঙ্গি অর্থায়ন
জামায়াতের তিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলা
আদালতে ৮ আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০১৮, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিদেশ থেকে অনুদান এনে অর্থ আত্মসাৎ ও জঙ্গি অর্থায়ন করে আসছিল চাষী কল্যাণ সমিতি, নবধারা কল্যাণ ফাউন্ডেশন ও নব কৃষি প্রাইভেট লিমিটেড। তিনটি প্রতিষ্ঠানই জামায়াতে ইসলামীর। গত ১১ বছরে তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও যুক্তরাজ্য থেকে ৬২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা অনুদান আনে চাষী কল্যাণ সমিতি। এ টাকার সিংহভাগ জঙ্গি অর্থায়ন ও সরকারবিরোধী প্রচারণায় ব্যয় হয়েছে। বাকি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সিআইডির অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। রোববার অর্থ আত্মসাৎ, জঙ্গি অর্থায়ন ও পাচারের সঙ্গে জড়িত ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেফতারকৃতরা জঙ্গি অর্থায়ন, অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের বিষয়টি স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে রমনা থানায় মামলা হয়েছে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, চাষী কল্যাণ সমিতি দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত। সৌদি ও তুরস্ককেন্দ্রিক কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন এ এনজিওকে অর্থ দিচ্ছে। গ্রেফতারকৃত ৮ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
সিআইডি সূত্র আরও জানায়, ১৯৭৭ সালে ‘বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতি’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমীর ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন অবস্থায় ২০১৪ সালে মৃত্যবরণকারী মাওলানা আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯২ সালে সমাজসেবা অধিদফতর এবং ২০০৫ সালে এনজিও ব্যুরো অ্যাফেয়ার্স থেকে নিবন্ধন লাভ করে। গঠনতান্ত্রিকভাবে এটি এনজিওবিষয়ক ব্যুরো হতে অরাজনৈতিক বেসরকারি উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান (এনজিও) হিসেবে অনুমোদিত হলেও প্রতিষ্ঠার পর থেকে এর যাবতীয় কার্যক্রম জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলকে আনুষ্ঠানিক চিঠির মাধ্যমে লিখিতভাবে অবহিত করা হতো। আর জামায়াতে ইসলামীর কৃষিবিদ সদস্যরা নব কৃষি প্রাইভেট লিমিটেড ও নবধারা কল্যাণ ফাউন্ডেশন গড়ে তোলেন। সিআইডির অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৭ সাল থেকে ২০১৮ সাল সময় পর্যন্ত চাষী কল্যাণ সমিতির অ্যাকাউন্টে সর্বমোট ৬২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বিদেশি অনুদান আসে।
জঙ্গি অর্থায়ন : সিআইডি সূত্র জানায়, ২০১২-২০১৬ সালে মোস্তাক আহমেদ খাঁ তুরস্কের ধর্মীয় উগ্রগোষ্ঠী থেকে অর্থ এনে হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় জঙ্গিবাদ বিস্তার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন করেন। পরবর্তীতে মোস্তাক আহমেদ খাঁর নামে মামলা হলে বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতি তুরস্ক থেকে অর্থ এনে জঙ্গিবাদে অর্থায়ন করে।
অর্থ আত্মসাৎ : কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের জামায়াতে ইসলামীর সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদের নির্দেশে বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতির অ্যাকাউন্ট থেকে ৪২ লাখ টাকা নব কৃষি প্রাইভেট লিমিটেডে স্থানান্তর করা হয়। একইভাবে গত বছরের ৩১ আগস্ট চাষী কল্যাণ সমিতির অ্যাকাউন্ট থেকে নব কৃষি প্রাইভেট লিমিটেডের অ্যাকাউন্টে আরও ১০ লাখ টাকা স্থানান্তর হয়।
ভিন্ন খাতে অর্থ ব্যয় : চাষী কল্যাণের নামে বিদেশি অনুদান সংগ্রহ করা হলেও তা চাষীদের কল্যাণে ব্যয় না করে ইচ্ছামতো মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণে কিছু অংশ ব্যয় করা হয়। অবশিষ্ট টাকা মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ বিস্তারে ব্যয় করা হয়। গত রোববার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মু. ফজলুল হক রিকাবদার, হুমায়ুন কবীর, আশরাফুল হক, আসগর হোসাইন, শেখ শাহজাহান কবীর, মনিরুল ইসলাম, আবদুর রউফ, আল মামুন খন্দকারকে গ্রেফতার করে সিআইডি। এ মামলায় পলাতক রয়েছেন- মুহাম্মদ আবদুল করিম, গোলাম রাব্বানী, শেখ জিল্লুর রহমান আজমী, শেখ মুহাম্মদ মাসউদ, ড. মো. সানাউল্লাহ, সিরাজুল হক, এসএম জাকির, নুরুল আমিন ফারুকী, হামিদুর রহমান আযাদ ও মোস্তাক আহমেদ খাঁ।
