Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন

আলোচনা গান কবিতা চিত্রকর্মে বেদনার রং

Icon

সাংস্কৃতিক রিপোর্টার

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শুক্রবার ছিল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিজয়ের মাত্র দুদিন আগে বুদ্ধিজীবীদের রক্তে বাংলার মাটি রঞ্জিত হয়েছিল। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত, রাজাকার, আলবদর ও আল শামসদের নিয়ে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ চালায়। এদিন বাঙালি জাতি শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারায়। দিবসটিতে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা আয়োজনে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। তাদের আয়োজনে আয়োজনে ফুটে ওঠে বেদনার রং।

শিল্পকলা একাডেমি : শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, নাচ, গান, আবৃত্তি ও আলোক প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় শিল্পকলা একাডেমি। সকাল ৮ থেকে ১০টা পর্যন্ত মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মতিসৌধে আবৃত্তি পরিবেশন করেন বাচিকশিল্পীরা। এতে আশরাফুল আলম, শিমুল মোস্তাফা, আহ্কামউল্লাহ্ প্রমুখ অংশ নেন। এর আগে একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর উপস্থিতিতে মিরপুর ও রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। সন্ধ্যায় একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণের সাংস্কৃতিক পর্বে নৃত্য গীত পরিবেশন করেন শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ‘মরণসাগর পারে তোমরা অমর’ গানটির সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে শিল্পীরা। এরপর বাঁশি বাজিয়ে শোনান মো. মনিরুজ্জামান। একক কণ্ঠে মোহনা দাস গেয়ে শোনান ‘নয়ন ছেড়ে গেলে চলে’। সমবেত কণ্ঠে ‘সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে’ গানটি পরিবেশন করেন একাডেমির শিল্পীরা। সবশেষে ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা’ গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করা হয়।

বাংলা একাডেমি : শহীদদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও বক্তৃতানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করে বাংলা একাডেমি। সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বুদ্ধিজীবী সমাধিস্থল, মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এবং রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী কার্যক্রমের সূচনা হয়। বিকাল ৪টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ‘বুদ্ধিজীবীর দায়’ শীর্ষক একক বক্তৃতা দেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। কবি আসাদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তৃতা করেন একাডেমির ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।

রামেন্দু মজুমদার বলেন, পাকিস্তান আমলজুড়ে আমাদের বুদ্ধিজীবীরা তাদের মেধা ও শ্রমে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চিন্তার বিকাশ ঘটিয়েছেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং বাঙালি সংস্কৃতি একটি জনগোষ্ঠীকে সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শ থেকে ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদী চেতনার দিকে ধাবিত করেছেন। ভাষা আন্দোলন, রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম- এ সবকিছুতে বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন অগ্রভাগে। একাত্তরে তাই এ দেশের কৃতী বুদ্ধিজীবীরা পাক হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসরদের বর্বরতা ও নৃশংসতার শিকার হয়েছেন।

কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষের মিলিত সংগ্রামে আমরা পাকিস্তানি উপনিবেশের কাঠামো ভেঙে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাংলা ভাষা-সাহিত্য এবং বাঙালি সংস্কৃতি যে রাজনৈতিক আন্দোলনের দুর্বার সাথী হতে পেরেছে- তার নেপথ্যে ছিল এদেশের বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা। তাদের স্মৃতির প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হলে সমন্বয়বাদী বাঙালি বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তার চর্চা করতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর : শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে স্মৃতিচারণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। ‘মানবাধিকার থেকে বিজয় দিবস’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী উৎসবের অংশ হিসেবে নানা আয়োজন চলছে। শুক্রবার সকালে এ উপলক্ষে চিত্রকলা ও ভাস্কর্য প্রদর্শনী ‘তারুণ্যের স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষা’ উদ্বোধন করা হয়। ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ- ইউডার চারুকলা বিভাগের ৭১ শিক্ষার্থীদের ৭১টি কাজ নিয়ে এ প্রদর্শনী সাজানো হয়েছে। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন শহীদ বুদ্ধিজীবী প্রকৌশলী রশীদউদ্দীনের মেয়ে রোকাইয়া হাসিনা নিলি ও শহীদ সেলিনা পারভীনের পুত্রবধূ কাজী দ্রাকসিন্দা জেবীন এবং পৌত্র শ্রয়ণ জওহর ও সুনন্দন জওহর। আগামী ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রদর্শনী চলবে। বিকালে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ‘এসডিসি এবং শিক্ষার সর্বজনীনতা ও গুণশীলতা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন ড. মেঘনা গুহ ঠাকুরতা ও জগজ্জীবন বিশ্বাস। দলীয় আবৃত্তিতে অংশ নেয় স্বরকল্পনা এবং দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে ছায়ানট ও মাতুয়াইল সঙ্গীত একাডেমি।

এছাড়াও মিরপুরের জল্লাদখানা বধ্যভূমি স্মৃতিপীঠেও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আয়োজনে তিন দিনের অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণ ও প্রদীপ প্রজ্বলনের আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ। ঢাবির টিএসসির ‘স্মৃতি চিরন্তনে’ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা অংশ নেয়। বিজয় দিবস উদযাপনে ‘স্মৃতির বিজয়’ শিরোনামের অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে অনুষ্ঠান সাজানো হয়। রোববার বিজয় দিবসে তিনদিনের এ আয়োজন শেষ হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম