বন্ধ হচ্ছে পিপলস লিজিং
আমানতকারীদের অর্থ দ্রুত ফেরতের আশ্বাস
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০১৯, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ব্যাপক দুর্নীতি ও ঋণ অনিয়মে ধুঁকতে থাকা নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডকে (পিএলএফএসএল) অবসায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে। বাংলাদেশে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের এ সিদ্ধান্ত এটাই প্রথম। হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে অবসায়নের প্রক্রিয়া কার্যকর হবে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটির আমানতকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি অবসায়ন হলেও আইন ও বিধি অনুযায়ী সব আমানতকারীর অর্থ দ্রুত ফিরিয়ে দেয়া হবে। তাই আমানতকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ আলম এবং মহাব্যবস্থাপক মো. শহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশে অবসায়নে যাচ্ছি। আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় এটি করা হচ্ছে। আদালতের নির্দেশনার আলোকেই আমানতকারীদের অর্থ বুঝিয়ে দেয়া হবে। পিপলস লিজিংয়ের আমানতের চেয়ে সম্পদের পরিমাণ বেশি আছে। প্রতিষ্ঠানটির আমানতের পরিমাণ ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। এর বিপরীতে সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। এ কারণে আমানতকারীদের শঙ্কার কিছু নেই।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে তদন্ত ক?রে প্রতিষ্ঠানটির বি?ভিন্ন অনিয়মের তথ্য জানা যায়। পরিচালনা পর্ষদের অ?নেক সদস্যের অনিয়ম পাওয়া যায়। পরে বাংলা?দেশ ব্যাংক চি?ঠি দিয়ে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর অ?নেক চেষ্টা করেও প্রতিষ্ঠানটির উন্নতি করা যায়নি। তাই আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় প্র?তিষ্ঠানটি অবসায়ন করার জন্য ২১ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চি?ঠি দিই। ২৬ জুন মন্ত্রণালয় অবসায়ন কর?তে অনুমতি দেয়। প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নের জন্য আদালতে যাওয়ার উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই মধ্যে একজন আইনজীবীও নিয়োগ দেয়া হয়েছে।’
পিপলস লিজিংয়ের মতো অন্য যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংকটে রয়েছে, তাদেরকে অবসায়ন করা হবে কি না- জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম বলেন, ‘আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করার দায়িত্ব বাংলা?দেশ ব্যাং?কের। এ জন্য যা যা করা দরকার, আইন অনুযায়ী তা করা হচ্ছে। আমানতকারী ও শেয়ার?হোল্ডার?রা যেন বিপদে না পড়েন, সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সজাগ রয়েছে।’ পিপলস লিজিং অপসারণ করা হলে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত পেতে কত সময় লাগতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর থেকেই আমরা কাজ শুরু করেছি। নিয়োজিত আইনজীবীও এ বিষয়ে কাজ করছেন। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা এই কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারব। তবে যে?হেতু আমরা আদাল?তে গিয়েছি। তাই এখন এটা আদালতের বিষয় হ?য়ে দাঁ?ড়িয়েছে। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমানতকারীর অর্থ যত দ্রুত সম্ভব ফেরত দেয়ার চেষ্টা করব।’
আমানতকারীর শতভাগ অর্থ ফেরত দেয়া হ?বে কি না- জান?তে চাই?লে তিনি বলেন, এটার সিদ্ধান্তও দেবে আদালত। বিকল্প উপায়ে বা প্রশাসক বসিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ঠিক করা যেত কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে শাহ আলম বলেন, ‘অবসায়ন হচ্ছে সর্বশেষ ধাপ। অবসায়নের আগে অন্য যেসব উপায় আছে তার সবই প্রয়োগের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি।’ অবসায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে শেয়ারহোল্ডারদের ফান্ড সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা নিয়ে তিনি বলেন, ‘এরকম কোনো আশঙ্কা নেই। প্রতিষ্ঠানটিতে এখনও বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক রয়েছেন।’
আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনের ২২(৩) ধারা অনুযায়ী, আমানতকারীর স্বার্থ রক্ষায় যে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবসায়নের জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই আইনের ২৯ ধারায় বলা হয়েছে, কোম্পানি আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, হাইকোর্ট বিভাগ বাংলাদেশ ব্যাংকের আবেদনের ভিত্তিতে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের জন্য আদেশ দিতে পারবে।
একই আইনের ৮ ধারায় যে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংককে দেয়া হয়েছে। আইনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন কারণে যে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করতে পারবে। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে- আমানতকারীদের স্বার্থহানি হয় এমনভাবে ব্যবসা করা, দায় পরিশোধে অপর্যাপ্ত সম্পদ, অবসায়ন বা কার্যক্রম বন্ধ, লাইসেন্স পাওয়ার জন্য মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য সরবরাহ ইত্যাদি। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, অবসায়ন হওয়া প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীর অর্থ কোন উপায়ে ফেরত দেয়া হবে, সে বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনে কিছু বলা নেই। এক্ষেত্রে আদালত যে উপায়ে অর্থ পরিশোধ করতে বলবেন, তা কার্যকর হবে। তবে সাধারণভাবে সম্পদ বিক্রি এবং সরকারের সহায়তার আলোকে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেয়া হয়। এজন্য প্রথমে প্রতিষ্ঠানের দায় ও সম্পদ নিরূপণ করা হয়। এরপর একটি স্কিম ঘোষণা করা হয়। যেখানে নির্দিষ্ট মেয়াদ উল্লেখ করে কোন পরিমাণ আমানত কবে নাগাদ পরিশোধ করা হবে তার উল্লেখ থাকে। তবে সংবাদ সম্মেলনে এ ধরনের কোনো স্কিম গঠনের ঘোষণা আসেনি।
