আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণ
ফেনসিডিল সিরাপ নয় মাদক
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ মে ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ফেনসিডিলকে মাদক হিসাবে উল্লেখ করে তা পরিবহণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের এক পূর্ণাঙ্গ রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে। আদালত বলেছেন, মানুষের প্রাণ বাঁচানোর জন্য ওষুধ, আর এই ওষুধকে যদি অপব্যবহার করা হয়, তার পরিমাণ বাড়ানো হয়, কেমিক্যাল পালটে দেওয়া হয়, তাহলে সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। এজন্য সমাজ তথা-জাতিকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন আদালত। আদালত আরও বলেন, হাইকোর্ট বিভাগ বিবেচনা না করে আইনের ত্রুটি করেছে।
ফেনসিডিল এক সময় কাশির সিরাপ হিসাবে ব্যবহৃত হতো। পরে মাদক হিসেবে দেশে এর ব্যবহার শুরু হয়। নেশা উদ্রেককারী কোডেইনসমৃদ্ধ ফেনসিডিল ১৯৮০ সাল থেকে দেশে নিষিদ্ধ। এ অবস্থায় ১৯৯৭ সালের ৫ নভেম্বর যশোরের তাহেরপুরের মল্লিকবাড়ির সামনে থেকে ২৫০ বোতল ফেনসিডিলসহ বাদল কুমার পালকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে বাদলের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই মামলায় ২০০০ সালের ১৩ নভেম্বর যশোরের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেন।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে বাদলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। এর বিরুদ্ধে ২০০১ সালে হাইকোর্টে আপিল করেন তিনি। শুনানি নিয়ে ২০০৩ সালের ১২ মার্চ হাইকোর্ট রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ে খালাস পান তিনি। হাইকোর্টের রায়ে ফেনসিডিল বহন বা রাখা আইনের বিধান (১৯৯০ সালের) অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয় উল্লেখ করে তাকে খালাস দেওয়া হয়েছিল।
এর ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে রাষ্ট্রপক্ষ নিয়মিত আপিল করেন। রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের ওপর এ বছরের ১৯ জানুয়ারি শুনানি শেষে ১ ফেব্রুয়ারি এ রায় দেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ। রায়ে বাদল কুমার পালের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখেন সর্বোচ্চ আদালত। হাইকোর্টের রায় বাতিল করে এ রায় দেওয়া হয়। সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি সোমবার ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। রায়টি লিখেছেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অবন্তী নুরুল। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ বলেন, ২১ পৃষ্টার পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত বেশকিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ফেনসিডিলের অন্যতম উপাদান কোডিং, যা মাদক হিসাবে স্বীকৃত।
ফেনসিডিলে কোডেইন ফসফেট আছে। আফিম থেকে উদ্ভূত ‘কোডেইন ফসফেট’, যা ১৯৯০ সালের আইন এবং বর্তমান আইনেও নিষিদ্ধ। যখন মাদক হিসেবে ফেনসিডিলের ব্যবহার করা শুরু হলো, তখন উৎপাদনকারী চক্র এর সঙ্গে সিউডোফেড্রিন ব্যবহার শুরু করে।
বিশ্বজিৎ দেবনাথ আরও বলেন, এ জাতীয় ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীর কল্যাণার্থে (থেরাপিউটিক পারপাস) রোগ উপশম ও নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা যাবে। তবে মাদক হিসাবে যখন নেওয়া হয়, তখন বিভিন্ন রোগসহ এর নেতিবাচক দিকগুলো শুনানিতে উল্লেখ করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিগুলো আপিল বিভাগ গ্রহণ করেছেন। হাইকোর্টের রায়ে ফেনসিডিল রাখা ও বহন বেআইনি তথা শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয় বলা হয়েছিল। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করেছেন।
