Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

সড়কে আট বছরের মধ্যে ২০২২ সালে সর্বোচ্চ মৃত্যু

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গত আট বছরের মধ্যে বিদায়ি ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। বছরটিতে ৬ হাজার ৭৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ৯৫১ জন নিহত ও ১২ হাজার ৩৫৬ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া একই সময়ে রেলপথে ৬০৬ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫৫০ জন। আহত হয়েছেন ২০১ জন। নৌপথে ২৬২ দুর্ঘটনায় ৩৫৭ জন নিহত, ৩৫৭ জন আহত এবং ৭৪৩ জন নিখোঁজ হয়েছেন। সব মিলিয়ে সড়ক, রেল ও নৌপথে বিদায়ি বছরে ৭৬১৭টি দুর্ঘটনায় ১০ হাজার ৮৫৮ জন নিহত এবং ১২ হাজার ৮৭৫ জন আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ২৮.৫৯ শতাংশ আক্রান্ত হয় মোটরসাইকেল। ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরিতে দুর্ঘটনার হার ২৪.৫ শতাংশ। সোমবার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে এ তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

সংগঠনটি জানিয়েছে, ২০২২ সালের ১৫ জুলাই সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। ওইদিন সড়কে ৩৭টি দুর্ঘটনায় ৪৩ জন নিহত হন। আহত হন ৯৭ জন। একদিনেই সড়কে সর্বোচ্চ ৪৪ জন মারা গেছেন ২৯ জুলাই। তবে সবচেয়ে কম ৯টি দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬ সেপ্টেম্বর। ওইদিন ১২ জন নিহত ও ১৩ জন আহত হন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে সড়কে ১৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ দুর্ঘটনা বেড়েছে। আর প্রাণহানি বেড়েছে ২৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ২০২১ সালে ৫৬২৯টি দুর্ঘটনায় ৭৮০৯ জন নিহত, ২০২০ সালে ৪৮৯১টি দুর্ঘটনায় ৬৬৮৬ জন নিহত ও ২০১৯ সালে ৫৫১৬টি দুর্ঘটনায় ৭৮৫৫ জন নিহত হন। সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ার কারণ হিসাবে তিনি বলেন, গত আট বছরে নিবন্ধিত যানবাহনের পাশাপাশি ছোট যানবাহন বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের সংখ্যা ৪ গুণ বেড়েছে। পাশাপাশি ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলার সরকারি আদেশ অমান্য করে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে অবাধে চলাচল করেছে। এ কারণে গত আট বছরের মধ্যে ২০২২ সালে সড়কে সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সড়ক পরিবহণ আইন প্রয়োগ কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ থাকলে দুর্ঘটনা কমবে না। মালিকদের প্রভাবে চলছে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। তারা একপেশে ও একচেটিয়া সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আইন প্রয়োগে প্রভাবশালীদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে। প্রভাবশালী ও সবলদের ওপর আইন প্রয়োগ করছে না পুলিশ। দুর্বলের ওপর আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে। এছাড়া সড়কে চাঁদাবাজি, ছোট যানবাহনের আধিক্যের কারণে সড়ক পরিবহণ নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়ছে। উন্নত দেশে গণপরিবহণকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, আর আমাদের দেশে ছোট যানবাহনকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বড় জনসমাবেশ করার প্রতিযোগিতা করছে। কিন্তু এক বছরে সড়কে যত মানুষ মারা গেছে, সেসব লাশ একসঙ্গে জড়ো করা হলে ওইসব সমাবেশের চেয়ে বড় হতো।

সংবাদ সম্মেলনে সড়ক দুর্ঘটনার ২০টি কারণ উল্লেখ করা হয়। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে-সড়কে দুই ও তিন চাকার গাড়ির সংখ্যা বাড়তে থাকা, বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, রাস্তা নির্মাণে ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধে চলাচল, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা ও বেপরোয়া মনোভাব, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার এবং মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, দুর্ঘটনায় আক্রান্ত গাড়ির মধ্যে ২৮.৫৯ শতাংশ মোটরসাইকেল, ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান ও লরি ২৪.৫ শতাংশ, বাস ১৩.৯৫ শতাংশ, ব্যাটারিচারিত ইজিবাইক, ভ্যান ও রিকশা ১১.৪২ শতাংশ। মোট দুর্ঘটনার ৫২.৫৫ শতাংশই পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়া। এছাড়া ২১.৬১ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৫.৭৯ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে পড়া এবং ৮.৬৩ শতাংশ অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

সংবাদ সম্মেলনে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে ১৩টি সুপরিশ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-সড়ক নিরাপত্তায় বর্তমান সরকারের ইশতেহার বাস্তবায়ন, সড়ক পরিবহণ আইন ও বিধিমালা কঠোরভাবে প্রয়োগ, সড়ক নিরাপত্তা ইউনিট গঠন, এ খাতে বাজেট বাড়ানো এবং অনিয়ম, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি বন্ধ করা।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞ আবদুল হক, সংগঠনের সহ-সভাপতি তাওহিদুল হক লিটন প্রমুখ।

দুর্ঘটনায় ক্ষতি ১৮ হাজার কোটি টাকা-সেভ দ্য রোড : এদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবে সেভ দ্য রোড আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিদায়ি বছরটিতে নৌ-রেল ও সড়কপথে মোট ৫৫ হাজারটি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ১০ হাজার ১০৮ জনের প্রাণহানি হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য পর্যালোচনা করে এই পরিসংখ্যান তৈরি করেছে সংস্থাটি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন, সেভ দ্য রোডের মহাসচিব শান্তা ফারজানা। তিনি বলেন, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন নৌ-রেল ও সড়কপথে গড়ে ১৫১টি দুর্ঘটনায় আহত হন ১৫৬ জন এবং নিহত হন গড়ে ২৭ জন। পুরো বছরে নৌ-রেল ও সড়কপথে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫৫ হাজার। এতে ক্ষতি হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। সব মিলে গত বছর দেশে পথে দুর্ঘটনায় ১০ হাজার ১০৮ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৫৬ হাজার ৯৬৭ জন।

তিনি জানান, সড়কপথ দুর্ঘটনায় নিহত ১০ হাজার ১০৮ জনের মধ্যে-৭৪ জন চালক, ৩৮ জন চালকের সহযোগী, ৪ হাজার ২২ জন নারী, ১ হাজার ১২ জন শিশু, ৮১২ জন শিক্ষার্থী, ৮ জন সাংবাদিক, ২৭ জন চিকিৎসক, ২৫ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং ৫৬ জন রাজনৈতিক নেতা।

সংবাদ সম্মেলনে দুর্ঘটনায় আহতদেরকে ৩ লাখ ও নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম