Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

দেশে থ্যালাসেমিয়ার অজ্ঞাত বাহক এক কোটি ১০ লাখ

Icon

জাহিদ হাসান

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দেশে থ্যালাসেমিয়া শনাক্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। আর এর অজ্ঞাত বাহক রয়েছেন ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ। থ্যালাসেমিয়া নিয়েই প্রতিবছর ৭ হাজার শিশু জন্ম নিয়ে থাকে। সচেতনতার অভাবে জিনগত এই রক্তরোগ নীরবে ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু এখনো এ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের তেমন ধারণা নেই। কেবল আক্রান্ত রোগীরাই চরমভাবে এর মাশুল দিচ্ছে। এক থ্যালাসেমিয়া বাহক অন্য বাহককে বিয়ে না হলে এতে আক্রান্ত শিশু জন্ম নেবে না বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

এ পরিস্থিতিতে আজ বুধবার (৮ মে) দেশে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস-২০২৪’। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য-‘প্রতি প্রাণের ক্ষমতায়ন এবং অগ্রগতিকে আঁকড়ে ধরার মাধ্যমে সবার জন্য ন্যায়সঙ্গত ও সহজলভ্য থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসা।’

চার বছরের শিশু সোনিয়া রাজধানীর থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। হাসপাতাল থেকে তাকে দেওয়া হয়েছে সুন্দর ছোট্ট একটা খেলনা। তার মাথার ওপরই লাল-সাদা বেলুনে সাজানো ছাদ। কিন্তু এর কিছুই সোনিয়াকে স্পর্শ করছে না; তার মাঝে শিশুসুলভ কোনো চাঞ্চল্য নেই, নেই উচ্ছ্বাস। দোহার থেকে আসা সোনিয়ার মা শিখা বেগম বলেন, প্রতিমাসে মেয়েকে রক্ত নিতে হয়। সোনিয়ার ‘এবি পজিটিভ’ গ্রুপের রক্ত পাওয়া যাচ্ছিল না বলে সে অনেকটা নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। সোনিয়ার মতো এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে তিন শতাধিক রোগী।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২৫০ মিলিয়ন। বাংলাদেশে প্রায় ১০ থেকে ১২ ভাগ মানুষই থ্যালাসেমিয়ার বাহক। বিশ্বে প্রতিবছর ১ লাখ শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এই রোগে রক্তে অক্সিজেন পরিবহনকারী হিমোগ্লোবিন কণার উৎপাদনে ত্রুটি থাকে। অর্থাৎ ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিন জিনের কারণে থ্যালাসেমিয়া হয়ে থাকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তরা সাধারণত রক্তে অক্সিজেন স্বল্পতায় ভুগে থাকেন। এতে আক্রান্তদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম থাকে। একই সঙ্গে রক্তের মাধ্যমে শরীরে অক্সিজেন ও পুষ্টি পরিবহন ব্যাহত হয়। তখন শরীরের বৃদ্ধি কমে যায় এবং বিভিন্ন হাড়ের গঠনে বিকৃতি দেখা দিতে পারে। রোগীর শরীরে বারবার রক্ত নিয়ে এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। এক্ষেত্রে শরীরে অতিরিক্ত আয়রন জমা হতে থাকে এবং লিভার, হৃৎপিণ্ডসহ বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। বাবা-মা দুজনেই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলেই সাধারণত সন্তান এতে আক্রান্ত হয়।

আসগর আলী হাসপাতালের রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মনজুর মোর্শেদ বলেন, থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধযোগ্য রোগ। বিশ্বে ৮ থেকে ৯ কোটি মানুষ এর বাহক হলেও তারা অসুস্থ নন। এটি জিনগত রক্ত রোগ। জিনের ক্রটির কারণে হিমোগ্লোবিন ভেঙে যায়। এই হিমোগ্লোবিন ভেঙে যাওয়ার ওপর ভিত্তি করে সিভিয়ার ও নন-সিভিয়ার থ্যালাসেমিয়া শনাক্ত হয়।

তিনি বলেন, জন্মের কয়েক মাস থেকে দুই বছরের মধ্যে থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। শিশু যদি ঠিকমতো খেতে না পারে, তাকে দেখতে ফ্যাকাসে লাগে, তার বৃদ্ধি কম হয়, ঘন ঘন সংক্রামক ব্যাধি হয়, দুর্বল থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের মহাসচিব ডা. মো. আব্দুর রহিম বলেন, বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। ২০০৮ সালে আড়াইশ রোগী নিয়ে এই হাসপাতালের যাত্রা শুরু হলেও এখন সাত হাজার রোগী এই হাসপাতালের সুবিধাভোগী।

তিনি বলেন, শুধু অসচেতনতার কারণে প্রতিবছর প্রায় ৭ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। সচেতনতা বাড়িয়ে প্রতিরোধই এ রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র পথ।

এদিকে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করা হয়। পরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে হোসাফ টাওয়ারে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট বিশেষায়িত ‘থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন হাসপাতালে’র উদ্বোধন করা হয়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম