Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

ছাত্রলীগের মিছিলে ওসির সহায়তা

আলোচনায় কাশিমপুর থানা পুলিশের কর্মকাণ্ড

Icon

গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) অধীন কাশিমপুর থানা পুলিশের নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগকে মিছিল করতে বাধা না দেওয়া, ঘুস নিয়ে আসামি ছেড়ে দেওয়া, থানায় আটক রেখে আসামিকে নির্যাতন, নানা স্থানে জুয়ার আসর বসানো, হত্যা মামলার ভয় দেখিয়ে আসামিদের কাছ থেকে টাকা আদায়, মাদক ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে সখ্য-এ সবই যেন আগের হাসিনা যুগের স্টাইলেই চলছে সেখানে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাশিমপুর থানার ওসির দায়িত্ব নেওয়ার পর পুলিশি ক্ষমতা অপব্যবহার করে সাইফুল ইসলাম যা ইচ্ছা তাই করছেন। তার অপকর্ম ও বিতর্কিত কিছু ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশের পর কথা হয়, গাজীপুর বারের আইনজীবী দেওয়ান মেহেদী হাসানের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে জানান, ২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর তার আত্মীয়ের সঙ্গে পারিবারিক একটা ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ দিতে কাশিমপুর থানায় গিয়েছিলেন। ওসি সাইফুল তার অভিযোগ আমলে না নিয়ে উলটো ওই আইনজীবীকেই গ্রেফতার করেন। দিনভর নানা নাটকীয়তার পর এক লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে এবং স্ট্যাম্পে মুচলেকা দিয়ে রাত ২টায় থানা থেকে তিনি মুক্তি পান। এই আইনজীবীর বাসা টঙ্গীর চেরাগ আলীতে। অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন অপরাধে যাদের কাশিমপুর থানা পুলিশ গ্রেফতার করে অন্য মামলায় জড়ানোর ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেন ওসি সাইফুল। অতি সম্প্রতি কাশিমপুর থানাধীন চক্রবর্তী এলাকার ব্যবসায়ী লুৎফর মৃধাকে তার নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করেন একই থানার এসআই জাহাঙ্গীর। গ্রেফতারের পর আরও ৭টি মামলায় জড়ানোর ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নেন ওসি সাইফুল। কাশিমপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শরীফ বেপারী এবং কাশিমপুর থানার ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শরীফ মোল্লাকে গ্রেফতার করে ওসির নির্দেশে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন করে ছেড়ে দেওয়া হয়।

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ২৬ জানুয়ারি দুপুরে কাশিমপুর থানাধীন লতিফপুর টু বিগ বস রোডে একটি হোন্ডা মিছিল বের করে। এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, অগ্রভাগে থেকে মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সারদাগঞ্জ হাজী মার্কেট এলাকার আব্দুর রহিমের ছেলে রাশিদুল হাসান বাবু, সারদাগঞ্জ কোনাপাড়া এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে রবিন আহাম্মেদ এবং বারেন্ডা এলাকার তমাল ও জুয়েল। তারা সবাই স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা। তারা বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগ নেতার পরিচয় দিয়ে এলাকায় পোস্টারও সাঁটিয়েছেন। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ওসি সাইফুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেই তারা ওই হোন্ডা মিছিল বের করেছিল। শুধু তাই নয়, ওসি কাশিমপুর থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে জুয়ার আসর বসিয়ে প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।

২৫ জানুয়ারি সারদাগঞ্জ এলাকার রোজিনা বেগম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তার স্বামী শাহ আলমকে থানায় ১০ দিন আটকে রেখে নির্যাতনের পর একটি ডাকাতি মামলায় আদালতে প্রেরণ করেছে। তার স্বামী একজন ভাঙারি ব্যবসায়ী। ৯ ডিসেম্বর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে সড়কে কাফনের কাপড় পরে কাশিমপুর গোবিন্দবাড়ি এলাকার ৪৮টি পরিবারের দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ ওসি সাইফুল ইসলামের শাস্তি ও অপসারণ দাবি করে মানববন্ধন করেছেন। মানববন্ধনে তাদের অভিযোগ ছিল, ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর জমিতে ওসি সাইফুল ইসলাম অবৈধভাবে তাদের প্রতিপক্ষকে বাউন্ডারি ওয়াল দিতে সহায়তা করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাশিমপুর থানা এলাকার এক ব্যবসায়ী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, পতিত স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের আমলে পুলিশের যে নৈতিক অবক্ষয় হয়েছিল জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পরও অনেকে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। তিনি মনে করেন, ওসি সাইফুল সামাজিকভাবে পুলিশের ইমেজ নষ্ট করছে। পুলিশ আবারও অপরাধী হিসাবে নাগরিকদের কাছে বিবেচিত হোক, তিনি তা চান না।

এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা হয় ওসি সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, অভিযোগ অনেকেই করতে পারে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সত্য নয়। ছাত্রলীগের মিছিলের বিষয়ে তার জানা নেই। মাদক দমন নয়, নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছেন। আগে জুয়ার আসর থাকতে পারে এখন নেই। অনেক জুয়াড়িকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম