Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

শিক্ষা সফরের ৪ বাসে ডাকাতি শ্লীলতাহানি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন, টাঙ্গাইল

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এবার টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে শিক্ষা সফরগামী চার স্কুল বাসে ডাকাতি হয়েছে। এ সময় ডাকাতরা লুট করার পাশাপাশি তিন ছাত্রীরও শ্লীলতাহানি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে পুলিশ সুপার ডাকাতির বিষয়টি স্বীকার করলেও শ্লীলতাহানির বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। মঙ্গলবার ভোরে উপজেলার সাগরদীঘি ইউনিয়নের লক্ষণের বাধা এলাকায় এ ডাকাতি হয়।

জানা যায়, ময়মনসিংহ বিভাগের ফুলবাড়িয়া উপজেলার সোয়াইতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা শিক্ষা সফরের জন্য চারটি বাস নিয়ে নাটোরের গ্রিনভ্যালি পার্কের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে বাস চারটি ঘাটাইল উপজেলার সাগরদীঘি ইউনিয়নের লক্ষণের বাধা এলাকায় পৌঁছালে রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে ১০ থেকে ১২ জনের ডাকাত দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাসে থাকা শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে। ডাকাতরা নগদ দেড় লাখ টাকা, দেড় ভরি স্বর্ণ, ১০টি স্মার্টফোন নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় মারধরের শিকার হয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর সাখাওয়াত হোসাইন রবিন ও অভিভাবক শহিদুল্লাহ তালুকদার। এ সময় তিন ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করা হয় বলেও জানিয়েছেন ডাকাতিকালে বাসে থাকা এক অভিভাবক। তিনি জানান, রাতের বেলা বাস চলছে দ্রুতগতিতে। হঠাৎ তিনিসহ অন্যরা খেয়াল করেন সড়কের মাঝে গাছের গুঁড়ি ফেলে রাখা হয়েছে। তিনি বুঝে ফেলেন এটি ডাকাতদের কাজ। সতর্ক করেন সবাইকে। বন্ধ করে দেওয়া হয় গাড়ির জানালা এবং গেট। কিছু বুঝে উঠার আগেই ১০-১২ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আঘাত শুরু করে গাড়িতে। ডাকাতরা পেছনের গাড়ি থেকে তাদের মালামাল লুট করা শুরু করে। এ সময় তিন ছাত্রীর শ্লীলতাহানিও করা হয়। পরে ৯৯৯-এ কল করা হয়। অল্প সময়ের মধ্যে পুলিশ আসে ঘটনাস্থলে। ততক্ষণে যাত্রীদের মালামাল লুট করা শেষ।

স্থানীয় ইউপি সদস্য লিয়াকত হোসেন বলেন, মাঝেমধ্যেই ওই স্থানে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। বুধবারও একই স্থানে ডাকাতি হয়। এ ঘটনায় সোয়াইতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ খলিলুর রহমান বাদী হয়ে ঘাটাইল থানায় অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ১৮০ যাত্রী নিয়ে চারটি বাস নাটোর যাওয়ার সময় ঘাটাইলে ডাকাতির কবলে পড়ে। এ নিয়ে মামলা হয়েছে। খুব দ্রুতই ডাকাতদের গ্রেফতার করা হবে।

চলন্ত বাসে শ্লীলতাহানির মূল হোতা রিমান্ডে : ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় গ্রেফতার মূল হোতা আলমগীর হোসেনকে ৬ দিন এবং তার ভাই রাজীব হোসেনকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতের বিচারক দুজনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে সোমবার রাতে নেত্রকোনার পূর্বধলার সাধুপাড়া গ্রাম থেকে আলমগীর এবং তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আশুলিয়া থানার ধানসোনা এলাকা থেকে রাজীব হোসেনকে গ্রেফতার করে টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এই দুজন মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানার আমতলী গ্রামের খোরশেদ শেখের ছেলে। তাদের কাছে থাকা লুণ্ঠিত টাকা, মোবাইল সেট, গহনা, জাতীয় পরিচয়পত্র ও এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে দুজনকে গ্রেফতারের তথ্য জানান। পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

মিজানুর রহমান বলেন, এর আগে শনিবার সকালে শহিদুল ইসলাম মুহিত, মো. সবুজ ও শরিফুজ্জামান শরীফ নামে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। তদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুই ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ডাকাতির পরিকল্পনাকারী হলো আলমগীর হোসেন। আর তার সেকেন্ড ইন কমান্ড হলো শহিদুল ইসলাম মুহিত।

১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ইউনিক রয়েল আমরি ট্রাভেলস নামক বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের ওপর যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে। বাসটি ঢাকা থেকে রাজশাহী যাচ্ছিল। বাসের যাত্রীদের ভাষ্যমতে, রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে বাসটি ছাড়ে। ১২টার দিকে ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে। এরপর প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা ধরে বাসটিকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে ডাকাতির পাশাপাশি দুই নারীর শ্লীলতাহানি করা হয়। এ ঘটনায় ২১ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় মামলা হয়েছে।

ধর্ষণের ঘটনা সঠিক নয়-স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় : রাজশাহীগামী বাসটিতে ধর্ষণের ঘটনা সঠিক নয় বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার থেকে প্রাপ্ত এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ক্লিপে বাসটির এক নারী যাত্রীর বক্তব্য বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে। ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, বাসটির এক নারী যাত্রী বলছেন, ‘বাসটিতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, তবে ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

শাস্তির দাবিতে মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি পালন : এদিকে দেশজুড়ে অব্যাহতভাবে নারী ও শিশু ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষকদের শাস্তি দাবিতে টাঙ্গাইলে মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবের সামনে নারী ও শিশু যৌন নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ এ কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে বক্তব্য দেন, সমাজকর্মী মুঈদ হাসান তড়িৎ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ফাতেমা রহমান বিথী, শিক্ষার্থী তাওহীদা ইসলাম স্বপ্নীল, প্রেমা সরকার প্রমুখ।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম