চীনের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর
ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত
ট্রাম্পকে ধন্যবাদ প্রধান উপদেষ্টার * বাংলাদেশসহ সব দেশ পাবে এ সুবিধা * কার্যকর থাকছে ১০ শতাংশ শুল্ক
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
চীন বাদে সব দেশের ওপর আরোপিত পালটা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার থেকে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী এ শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। চীন এ সুবিধার বাইরে থাকবে। উলটো চীনের আমদানি করা পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করে তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী এবং বিনিয়োগকারীদের সমালোচনার পর ট্রাম্পের এ ঘোষণা দেন। এতে দেশে দেশে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবসান ঘটবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বুধবার ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ৯০ দিনের জন্য পালটা শুল্ক স্থগিত করেছি। এই ৩ মাসের জন্য ১০ শতাংশ পালটা শুল্ক কার্যকর থাকবে। ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর মার্কিন শেয়ারবাজারে রীতিমতো উল্লাস দেখা যায় বলে জানিয়েছে সিএনএন।
নতুন পালটা শুল্ক ৩ মাসের জন্য স্থগিত করায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড পেজে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া দিয়ে শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করায় আপনাকে ধন্যবাদ মিস্টার প্রেসিডেন্ট। আপনার বাণিজ্য এজেন্ডাকে সহযোগিতা করার জন্য আপনার প্রশাসনের সঙ্গে আমরা কাজ চালিয়ে যাব।
প্রসঙ্গত, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপরও ৩৭ শতাংশ পালটা শুল্ক আরোপ করে। এরপর শুল্ক ইস্যুতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। চিঠিতে ৩ মাসের জন্য বাংলাদেশের ওপর আরোপিত ৩৭ শতাংশ শুল্ক প্রস্তাব স্থগিত রাখার আহ্বান জানান তিনি। এর আগে ট্রাম্প স্যোশাল ট্রুথে জানান-যারা শুল্ক কমানোর অনুরোধ জানিয়ে হোয়াইট হাউজের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তাদের সঙ্গে শিগগিরই আলোচনা শুরু হবে। এরপর গত রাতে ৯০ দিনের জন্য নতুন শুল্ক স্থগিতের ঘোষণা আসে।
এদিকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে ট্রাম্প নমনীয় হলেও চীনের ওপর আরোপিত শুল্ক ১০৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বুধবার ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ৯০ দিনের জন্য পালটা শুল্ক স্থগিত করেছি। ট্রাম্প লিখেছেন, ‘প্রকৃত অবস্থার ভিত্তিতে ৭৫টির বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এসব প্রতিনিধির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ, অর্থ বিভাগ ও ইউএসটিআর (যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি) রয়েছে। দেশগুলো বাণিজ্য, বাণিজ্য বাধা, শুল্ক, মুদ্রা কারসাজি ও অশুল্ক বাধাসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সমাধানে পৌঁছাতে সমঝোতা আলোচনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।’ ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ট্রাম্প অসাধারণ সাহস দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বের সব দেশকে জানিয়েছিলাম-পালটা ব্যবস্থা না নিলে তোমরা পুরস্কৃত হবে। সুতরাং, যারা আলোচনায় আসতে চায়, আমরা তাদের কথা শুনতে প্রস্তুত।
বেসেন্ট বলেন, এই পদক্ষেপ ইঙ্গিত দেয় যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাণিজ্যকে গুরুত্ব দেন এবং আমরা সৎভাবে আলোচনা করতে চাই। বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক জানান, ট্রাম্প যখন ট্রুথ সোশ্যালে এই বার্তাটি লিখছিলেন, তখন তিনি এবং বেসেন্ট তার সঙ্গে ছিলেন।
লুটনিক বলেন, স্কট বেসেন্ট এবং আমি প্রেসিডেন্টের পাশে বসে ছিলাম, যখন তিনি তার প্রেসিডেন্সির সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ট্রুথ পোস্টটি লেখেন। বিশ্ব এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত, কিন্তু চীন ঠিক উলটো পথে হাঁটছে।
ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর মার্কিন শেয়ারবাজারে রীতিমতো উল্লাস দেখা যায় বলে জানিয়েছে সিএনএন। ডাউ সূচক একলাফে ২২০০ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে গেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং নাসডাক সূচক ৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। গত সপ্তাহে ট্রাম্প যে উচ্চ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন, তা বাজারে ধস নামিয়েছিল।
এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র চীনের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল। এখন নতুন সিদ্ধান্তের ফলে চীনা পণ্যে শুল্কহার আকাশচুম্বী হয়ে গেছে। ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর আরও ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার এক দিনের মাথায় ৪ এপ্রিল চীনও সমান হারে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে।
ট্রাম্প সরকার ভারতের পণ্যের ওপর ২৬ শতাংশ, পাকিস্তানের পণ্যের ওপর ২৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ, শ্রীলংকার পণ্যে ৪৪ শতাংশ, তাইওয়ানের পণ্যে ৩২ শতাংশ, জাপানের পণ্যে ২৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যে ২৫ শতাংশ, থাইল্যান্ডের পণ্যে ৩৬ শতাংশ, সুইজারল্যান্ডের পণ্যে ৩১ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ৩২ শতাংশ, মালয়েশিয়ার পণ্যে ২৪ শতাংশ, কম্বোডিয়ার পণ্যে ৪৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের পণ্যে ১০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার পণ্যে ৩০ শতাংশ, ব্রাজিলের পণ্যে ১০ শতাংশ, সিঙ্গাপুরের পণ্যে ১০ শতাংশ, ইসরায়েলের পণ্যে ১৭ শতাংশ, ফিলিপাইনের পণ্যে ১৭ শতাংশ, চিলির পণ্যে ১০ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ, তুরস্কের পণ্যে ১০ শতাংশ, কলম্বিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ, মিয়ানমারের পণ্যে ৪৪ শতাংশ, লাওসের পণ্যে ৪৮ শতাংশ এবং মাদাগাস্কারের পণ্যের ওপর ৪৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের পালটা শুল্ক আরোপের এই ক্যাম্পেইনে নিশানায় ছিল বাংলাদেশও। ট্রাম্প বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
