Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

আশুলিয়ায় ৬ লাশ পোড়ানোর নতুন ভিডিও তদন্ত সংস্থার হাতে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পোড়ানোর একটি নতুন ভিডিও তদন্ত সংস্থার হাতে এসেছে। তাতে কারা কীভাবে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, সে ব্যাপারে একটি ধারণা এসেছে বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছেন প্রসিকিউশন। তারা বলেছেন, এখন এ ভিডিও যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তদন্ত সংস্থার এক মাস সময় প্রয়োজন। সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পরবর্তী তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৫ মে দিন ঠিক করে দেন।

এদিন একই সঙ্গে জুলাই-আগস্টে ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও রামপুরার গণহত্যাসহ আরও তিনটি মামলার শুনানি হয়। এর মধ্যে একটি মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২৩ শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় প্রায় তিন মাস বাড়ানো হয়।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের দিন ঢাকার আশুলিয়ায় ঘটে এক নারকীয় হত্যাকাণ্ড। ৬ জনের নিথর দেহ গাড়িতে উঠিয়ে আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়িয়ে দেয় পুলিশ। তদন্ত সংস্থা জানায়, নিহতদের একজন তখনও জীবিত ছিলেন। আগুনেই তাকে পুড়িয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। সেই বিভীষিকাময় ঘটনার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

গত রোজার ঈদের আগে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পোড়ানোর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন তাদের হাতে এসেছে। যাচাই-বাছাই করে ফরমাল চার্জ হিসাবে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হবে। এখন প্রতিবেদন জমার দিন নতুন তথ্য পাওয়ার কথা জানাল তদন্ত সংস্থা।

আশুলিয়ায় ছয় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় সোমবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন ছিল। তদন্তকাজে নতুন তথ্য হাতে আসায় নতুন করে সময় চেয়ে আবেদন করা হয়। শুনানিতে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, এ মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। তবে এ হত্যাকাণ্ডের একটি নতুন ভিডিও পাওয়া গেছে। তাই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আরও এক মাস সময় প্রয়োজন। পরে ট্রাইব্যুনাল সময়ের আবেদন মঞ্জুর করেন।

এ মামলার আসামি হিসাবে সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, সাবেক উপপরিদর্শক মালেক ও সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদারকে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

শুনানি শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম। তিনি বলেন, তদন্ত করতে গিয়ে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটনের সময়ের একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। সেটা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। মিজানুল ইসলাম আরও বলেন, আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনার মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন সোমবার ধার্য ছিল। তারা যখন তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করছিলেন, সেই মুহূর্তে হঠাৎ করে একটা তথ্য আসে। তারা একটা ভিডিও শনাক্ত করতে পেরেছেন। তারা উদ্ধারও করেছেন। এতে দেখা গেছে, ওইখানে (আশুলিয়ায়) কারা কীভাবে হত্যা করেছেন। সেই বিষয়টা তাদের সামনে এসেছে। এ বিষয়ে তদন্ত সমাপ্ত করার জন্য কিছুদিন সময় দরকার।

এ সময় একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সব মিলিয়ে সময়ক্ষেপণ হয়ে যাচ্ছে নাকি? একটি ভিডিও একেবারে শেষের দিকে এসে পেলেন, ৮ মাস পেলেন না। এর ব্যাখ্যা কী? জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত একটা চলমান প্রক্রিয়া। এখন কোনো তথ্য যদি আমাদের সামনে আসে নতুন করে, সেই তথ্য ইগনোর (উপেক্ষা) করে তো তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করতে পারব না। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্টের জন্য এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে এ সময়টা প্রয়োজন। এটা বিচারকে বিলম্বিত করার জন্য নয়, ন্যায়বিচারকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য।’

এ মামলায় ১৫ এপ্রিল গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে। তারা হলেন-সাবেক এডিসি শহীদুল ইসলাম ও আব্দুল্লাহহিল কাফী এবং ওসি আরাফাত হোসেন। আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি করে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ১১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দুটি অভিযোগ করা হয়। পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনকে সেখানে আসামি করা হয়। দুজনের পরিবারের পক্ষে আইনজীবী হুজ্জাতুল ইসলাম খান অভিযোগ দুটি দায়ের করেন।

সাবেক আইজিপিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রতিবেদন দাখিলের সময় ফের বাড়ল : আরেক মামলায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২৩ শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় আবারও প্রায় তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। এর আগে ১৯ ডিসেম্বর তাদের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল সোমবার এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

গণ-অভ্যুত্থানের পর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে করা তৃতীয় মামলা এটি। এ মামলায় গ্রেফতার আট আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তারা হলেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান, ডিএমপির মিরপুর বিভাগের সাবেক উপকমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন মোল্লা, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান, বরখাস্ত হওয়া ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, গুলশান থানার সাবেক ওসি মো. মাজহারুল হক, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি-উত্তর) সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন।

এছাড়া সাবেক এসি রাজেন চন্দ্র সাহা, এসআই মালেক, এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সাহা, কনস্টেবল মুকুল এবং নরসিংদী যুবলীগ নেতা রবিউল ইসলামকেও ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম