Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস আজ

সাত বছরে রোগী বেড়েছে তিনগুণের বেশি

Icon

জাহিদ হাসান

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দেশে বংশগত রক্তরোগ থ্যালাসেমিয়া রোগী দিন দিন বাড়ছে। গত সাত বছরে বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি। প্রতিবছর ৬ থেকে ৭ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্ম গ্রহণ করছে। বর্তমানে দেশে ৬০ থেকে ৭০ হাজার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী রয়েছে। অর্থাৎ মোট জনগোষ্ঠীর ১১ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ এ রোগের বাহক।

এমন পরিস্থিতিতে রোগটি সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে সারা বিশ্বের মতো আজ দেশে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস-২০২৫।’ এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘থ্যালাসেমিয়ার জন্য সামাজিক ঐক্য গড়ি, রোগীর অগ্রাধিকার নিশ্চিত করি’।

দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের নিবন্ধিত রোগী ছিল ২ হাজার ৭২৫ জন। ২০১৯ সালে ৩ হাজার ৯৮ জন, ২০২০ সালে ৩ হাজার ৪১৬ জন, ২০২১ সালে ৪ হাজার ৯৪১ জন, ২০২২ সালে ৬ হাজার ৫৫ জন, ২০২৩ সালে ছিল ৭ হাজার ২২ জন এবং ২০২৪ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৫১১ জনে।

প্রতিবছর ৬ থেকে ৭ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্ম নিচ্ছে। যাদের চিকিৎসায় বছরে ৩৬ হাজার ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু চাহিদার তুলনায় মাত্র ১৮ শতাংশের জোগান দেওয়া সম্ভব হয়। বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী দেশে ৬০ থেকে ৭০ হাজার থ্যালাসেমিয়া রোগী রয়েছে। একজন রোগীর চিকিৎসা বাবদ মাসে কমপক্ষে ১৩ হাজার টাকা খরচ হয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। ২০১৪-১৫ সালে বাংলাদেশে ৭ থেকে ৮ শতাংশ মানুষ এ রোগের বাহক ছিল।

থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দা মাসুমা রহমান বলেন, সরকারি হাসপাতালে এই রোগের চিকিৎসা নেই বললেই চলে। তাই ২০০২ সালের দিকে থ্যালাসিমিয়া ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে রোগীদেরকে ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসা দেওয়ার উদ্যোগ নেই। এই রোগ সস্পর্কে সচেতনতা সমাজের প্রতিটি স্তরে বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

রক্তরোগ বিশেষজ্ঞরা যুগান্তরকে জানান, থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তের রোগ। মানবকোষে রক্ত তৈরি করার জন্য দুটি জিন থাকে। কোনো ব্যক্তির রক্ত তৈরির একটি জিনে ত্রুটি থাকলে তাকে থ্যালাসেমিয়া বাহক বলে। আর দুটি জিনেই ত্রুটি থাকলে তাকে থ্যালাসেমিয়া রোগী বলে। তবে সব বাহকই রোগী হন না। শিশু জন্মের এক থেকে দুই বছরের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া রোগ ধরা পড়ে। এই রোগের লক্ষণগুলো হলো- ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, দুর্বলতা, ঘন ঘন রোগসংক্রমণ, শিশুর ওজন না বাড়া, জন্ডিস, খিটখিটে মেজাজ ইত্যাদি।

বিশেষজ্ঞরা যুগান্তরকে আরও বলেন, থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধযোগ্য। বাহকদের মধ্যে বিয়ে বন্ধ করে সাইপ্রাস, ইতালি ও গ্রিসের মতো দেশ থ্যালাসেমিয়া রোগী প্রায় শূন্যে নামিয়ে এনেছে। সঠিক চিকিৎসা ও পরিচর্যা পেলে থ্যালাসেমিয়া রোগী সুন্দর জীবনযাপন করতে পারেন। এই রোগের চিকিৎসায় সরকারকে ভর্তুকি দেওয়ার আহ্বান জানান তারা।

এদিকে বিশ্ব থ্যালাসিমিয়া দিবস উপলক্ষ্যে হেমাটোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) হেমাটোলজি বিভাগ আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় কলেজ প্রাঙ্গণে র‌্যালির আয়োজন করেছে। র‌্যালিতে হেমাটোলজিস্ট (রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ), হিমোফিলিয়া রোগী এবং সমাজসেবীরা অংশ নেবেন। পরে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে থ্যালাসেমিয়ার বাহক নির্ণয়ের কর্মকাণ্ড অনুষ্ঠিত হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে একটি গোল টেবিল বৈঠক হবে। এছাড়াও শনিবার বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন ও থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন হাসপাতাল যৌথভাবে আলোচনা ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম