বিশেষ বিধান ও অভিন্ন নিয়োগবিধি
ফুঁসছে সচিবালয় কর্মচারীরা
আজ নতুন কর্মসূচি
আমিরুল ইসলাম
প্রকাশ: ১২ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সরকারি চাকরি আইনে বিশেষ বিধান এবং সচিবালয় ও মাঠ প্রশাসনে কর্মরত নন-ক্যাডার কর্মচারীর জন্য অভিন্ন নিয়োগবিধি ইস্যুতে ফুঁসছে কর্মচারীরা। অবিলম্বে এই ‘কালাকানুন’ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। পাশাপাশি তারা নবম পে-কমিশন গঠন, মহার্ঘভাতা, কর্মচারীদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু ও পদনাম পরিবর্তনের দাবি জানান। কর্মচারী নেতারা ওইসব বিতর্কিত আইন ও বিধি প্রণয়নের চেষ্টা যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন। সচিবালয়ে কর্মচারীদের সব সংগঠন আজ বৈঠক করে কঠোর কর্মসূচি দেবে বলে জানিয়েছে।
এদিকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সচিবালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। শনিবার ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সই করা এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা জারি করা হয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের কো-চেয়ারম্যন মো. নুরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমাদের দাবিগুলো যৌক্তিক। এটা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও স্বীকার করেন। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান চাই। আমরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করব, কোনো সভা-সমাবেশ নয়। আশা করি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাই বুঝতে পারেন।
কর্মচারী নেতারা যুগান্তরকে বলেন, শান্ত সচিবালয়কে অশান্ত করার জন্য বিশেষ কিছু কর্মকর্তা সরকারি চাকরি আইনে বিশেষ বিধান সংযোজনে কাজে হাত দিয়েছে। তারা সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বিভ্রান্ত করছে। ২০১৮ সালে সরকারি চাকরি আইন প্রণয়নের সময় ১৯৭৯ সালের বিশেষ বিধান বাতিল করা হয়। বিশেষ বিধান বাতিল হয়েছে সুপ্রিমকোর্টের রায়ের ভিত্তিতে। বাতিল হওয়া বিশেষ বিধান আবার কী করে চাকরি আইনে সন্নিবেশন করা হচ্ছে। বিশেষ বিধান কর্মচারীর জন্য ক্ষতিকর এবং অকল্যাণকর বলেই তো দেশের সর্বোচ্চ আদালত তা বাতিল করেছিলেন। কার স্বার্থে এ ধরনের একটি বিধান পুনঃপ্রবর্তনের কাজে প্রশাসন হাত দিয়েছে তা আমাদের কাছে অস্পষ্ট।
কর্মচারীরা মনে করছে, সরকার তাদের দাবিয়ে রাখার জন্য এ ধরনের আইন প্রণয়ন করছে। কর্মচারীরা যাতে তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবিগুলো পেশ করতে না পারে সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাদের কণ্ঠ রোধের প্রয়াসে এ আইন সংশোধন হচ্ছে। এটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া হবে না। তারা আরও বলেন, সরকার কাউকে ৮ দিনে চাকরি দিতে পারেনি। তাই ৮ দিনে চাকরি খাওয়ার বিধান করার কোনো সুযোগ নেই। কেউ অপরাধ করলে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য আইনের সংশোধন হতেই পারে। কিন্তু একেবারে চাকরি খেয়ে দেওয়ার মতো বিধান সমর্থনযোগ্য নয়।
তারা আরও বলছেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেও সচিবালয়ের কর্মচারী আর মাঠ প্রশাসনে কর্মরত নন-ক্যাডার কর্মচারীর জন্য পৃথক নিয়োগ বিধিমালা ছিল। স্বাধীনতার পর থেকে বেশ কয়েকবার সংশোধন হলেও সচিবালয়ে কর্মরত আর মাঠ প্রশাসনের নন-ক্যাডার কর্মচারীর নিয়োগবিধি ভিন্ন ছিল। হঠাৎ এমন কী ঘটনা ঘটেছে যে, অভিন্ন নিয়োগবিধি করতে হবে। তারা আরও বলছেন, এসব দুরভিসন্ধিমূলক কাজ। এ নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন করা হলে যখন-তখন যে কোনো কর্মচারীকে সরকার দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শাস্তিমূলক বদলির মাধ্যমে হয়রানি করবে। এটা কোনোভাবেই হতে পারে না। তাই সরকারের তরফ থেকে পরিষ্কার ঘোষণা দিয়ে বলতে হবে-সচিবালয় ও মাঠ প্রশাসনে কর্মরত নন-ক্যাডার কর্মচারীর জন্য অভিন্ন নতুন নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে না।
কর্মচারী নেতারা আরও বলেন, ২০১৫ সালে অষ্টম পে-স্কেল ঘোষণা করে সরকার। ইতোমধ্যে ১০ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। এ সময়ের জীবনযাত্রায় ব্যয় বেড়েছে বহুগুণ। অথচ বেতন আগের জায়গায় রয়েছে। সরকারের কাছে একাধিকবার নবম পে-কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। পে-কমিশন গঠন পর্যন্ত মহার্ঘভাতা দেওয়ার দাবি জানানো হয়। মহার্ঘভাতা দেওয়া কমিটি করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও দেওয়া হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তা বাস্তবায়ন করছে না সরকার। পে-কমিশন গঠন পর্যন্ত কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা দিতে হবে। সব কর্মচারীর জন্য রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। তারা বলেন, এর আগে পদনাম পরিবর্তনসংক্রান্ত ৪ দফা দাবি পেশ করা হয়েছে। ওই দাবিগুলো এখনো ঝুলো আছে। আবার নতুন করে বিশেষ বিধান যুক্ত করে সরকারি চাকরি আইন সংশোধনের খবরে কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ। প্রশাসনে দায়িত্বশীলদের উচিত হবে সংকট সমাধান করা। সমস্যা তৈরি করা নয়।
