ব্যাংকে রেজুলেশন অধ্যাদেশ কার্যকর
জালিয়াতি হলে চেয়ারম্যান এমডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
দুর্বল ব্যাংক সবল করতে সেতু ব্যাংক গঠন করা হবে * সাত সদস্যের একটি ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কাউন্সিল গঠন করা হবে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১২ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এখন থেকে কোনো ব্যাংকে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আমানতকারীদের অর্থ আত্মসাৎ করা হলে এর জন্য দায়ী থাকবেন ব্যাংকের এমডি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি জালিয়াতির অর্থ আদায় করা হবে। যেকোনো দুর্বল ব্যাংকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অস্থায়ীভাবে প্রশাসক নিয়োগ করতে পারবে। একই সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকের শেয়ার সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে স্থানান্তর করতে পারবে।
এমন সব বিধান রেখে ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশটির গেজেট শুক্রবার জারি করা হয়েছে। ওই দিন থেকেই এটি কার্যকর করা হয়েছে। এতে এখন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কোনো দুর্বল ব্যাংককে সবল করার জন্য অবসায়নসহ অস্থায়ীভাবে প্রশাসক নিয়োগ, শেয়ার অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে স্থানান্তর, আমানতকারীদের অর্থ আত্মসাতের দায়ে ব্যাংকের এমডি, চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে। এর আগে আইনটির খসড়া প্রণয়ন করে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের মতামত নেওয়া হয়েছে। গত ১৭ এপ্রিল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এর অনুমোদন দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, দেশে এ ধরনের আইন এই প্রথম করা হলো। এর মাধ্যমে ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের দায়ে ব্যাংকের এমডি, চেয়ারম্যান, পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল যেকোনো কর্মকর্তাকে শাস্তি দেওয়া যাবে। গত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে নজিরবিহীন লুটপাট হয়েছে। ব্যাংক দখল করে টাকা লুট করে সেগুলো বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কয়েকটি সরকারি ব্যাংকসহ ডজনখানেক বেসরকারি ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়েছে। তারা আমানতকারীদের টাকা নিয়মিত ফেরৎ দিতে পারছে না। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ তহবিলের জোগান দিতে হচ্ছে।
এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে ব্যাংক খাতে জালিয়াতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে আমানতকারীদের স্বপক্ষে যেকোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারবে। অধ্যাদেশ অনুযায়ী, এই আইনটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেকোনো প্রচলিত ব্যাংক ইসলামী ধারায় পরিচালিত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে।
নতুন অধ্যাদেশের আওতায় সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন থেকে অস্থায়ীভাবে যেকোনো দুর্বল ব্যাংকের দায়িত্ব নিতে পারবে। প্রয়োজন হলে ব্যাংকটি অধিগ্রহণ করার জন্য অস্থায়ীভাবে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে। ব্যাংকের শেয়ার অধিগ্রহণ করে বা নতুন শেয়ার সৃষ্টি করে বা বিদ্যমান শেয়ার জব্দ করে যেকোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে হস্তান্তর করতে পারবে। এতে যেকোনো ব্যাংক থেকে পর্ষদের যেকোনো পরিচালককে বাদ দিয়ে তার শেয়ার সরকারি অধিগ্রহণ করে সেগুলো অন্য যেকোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে হস্তান্তর করতে পারবে।
আইন অনুযায়ী ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা অর্থ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে আদায় করার ব্যবস্থা নিতে হবে প্রথমে ব্যাংকগুলোকে। পাশাপাশি যেসব ব্যাংক কর্মকর্তার দায়িত্ব অবহেলার কারণে জালিয়াতি হয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে পারবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে যদি প্রমাণ মেলে জালিয়াতির সঙ্গে ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরা জড়িত তবে তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা নিতে পারবে।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজন মনে করলে দুর্বল ব্যাংকগুলোতে নতুন করে মূলধনের জোগান দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে পারবে। এজন্য শেয়ার সৃষ্টি করে সেগুলোর বিপরীতে মূলধন সংগ্রহ করে সেগুলো ব্যাংকে দিতে পারবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজন মনে করলে ব্যাংক ঋণ বা বিনিয়োগ বা অন্য কোনো সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তরের আদেশ দিতে পারবে।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ধরনের বিধিবিধানগুলো কেবলমাত্র যেসব ব্যাংক অকার্যকর হয়ে পড়েছে বা আমানতকারীদের অর্থ ফেরৎ দিতে পারছে না বা নানাভাবে সংকটের সম্মুখীন হয়েছে এমন সব ব্যাংকের বিরুদ্ধেই এই আইন প্রয়োগ করতে পারবে। প্রয়োজন হলে ওইসব ব্যাংকে যেকোনো ধরনের ব্যাংকিং নিয়মাচারবিষয়ক হস্তক্ষেপ করতে পারবে।
অধ্যাদেশে বলা হয়, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি সেতু ব্যাংক গঠন করতে পারবে। এই ব্যাংক গঠন করতে বিভিন্ন উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহ করতে পারবে। এসব তহবিল দিয়ে দুর্বল ব্যাংককে সবল করার পদক্ষেপ নিতে পারবে। এছাড়াও সাত সদস্যের একটি ব্যাংকিং সেক্টর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কাউন্সিল গঠন করা হবে। এই কাউন্সিল ব্যাংকগুলোকে পর্যবেক্ষণ করে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে আগে থেকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
