১৭ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকে বিডা চেয়ারম্যান
জাতীয় স্বার্থের বিষয়ে কোনো আপস নেই
বৈঠকে অংশ নেয়নি বিএনপি * বিনিয়োগের জন্য ৫ সমস্যা চিহ্নিত * চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্বমানের হবে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, জাতীয় স্বার্থের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। এ বিষয়ে কোনো ধরনের কম্প্রোমাইজ (আপস) করা হবে না। মঙ্গলবার টেকসই বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীতিগত ধারাবাহিকতা, চলমান সংস্কার কার্যক্রম এবং এর সাম্প্রতিক অগ্রগতির বিষয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক দলের পরামর্শ ও সুপারিশ গ্রহণে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন বিডা চেয়ারম্যান। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিডার প্রধান কার্যালয়ের কনফারেন্স হলে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৭টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এ সময় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রশ্নের জবাবে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর আমাদের সমগ্র বাংলাদেশের। এটিকে বিশ্বমানের একটি বন্দরে আমরা রূপান্তরিত করতে চাই। কিন্তু আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, জাতীয় স্বার্থের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। সবার আগে জাতীয় স্বার্থ। এ ব্যাপারে কোনো আপস নেই। এ সময় বিনিয়োগকারীদের মতামতের ভিত্তিতে দেশে বিনিয়োগের জন্য বড় ৫টি সমস্যা তুলে ধরা হয়। বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নিলেও বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দলের (বিএনপি) কোনো প্রতিনিধি অংশ নেননি।
সভায় বিনিয়োগ উপযোগী পরিবেশ ও নিরাপদ বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিভিন্ন দল তাদের প্রস্তাব ও দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে। রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়াও সভায় বিডা, বেজা ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।
আশিক চৌধুরী বলেন, দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নানামুখী সংকট রয়েছে। এ সংকট মোকাবিলা করে বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিডা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। সংকট উত্তরণে বিডা এখন কী করছে, সামনের ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে কী করা হবে-এসব বিষয়ে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করতে এই আয়োজন। সভায় বিডার কার্যক্রম নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশন দেন বিডার হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নাহিয়ান রহমান রচি। তিনি সংস্কার পরিকল্পনা এবং অগ্রগতি প্রতিবেদন ও বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয় বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, দুইশ জনের বেশি স্থানীয় বিনিয়োগকারী ও অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের পাঁচটি সমস্যা চিহ্নিত করেছে বিডা। এগুলো হলো-সরকারি পরিষেবার মান, নীতির ধারাবাহিকতা, ইন্ডাস্ট্রি কনসালটেশন, দুর্নীতি দূরীকরণ এবং সম্পদ ব্যবহারের সুযোগ। এসব সমস্যা সমাধানে বিডা ইতোমধ্যে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং দীর্ঘমেয়াদি কী কী পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে, সেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে জানানো জরুরি।
সভায় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা এ আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানান। তারা বিডার সংস্কার পরিকল্পনা ও অগ্রগতির প্রশংসা করেন। তারা বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টিতে বিডার কার্যক্রমের প্রতি নিজেদের পূর্ণ সমর্থন জানান। এ সময় তারা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি দেশি বিনিয়োগকারীদেরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান। এছাড়া দেশে দক্ষ শ্রমিক গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আইনি জটিলতা দূর করা, শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষা এবং পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সঙ্গে বিডাকে আলোচনার জন্য পরামর্শ দেন। রাজনৈতিক দলগুলো দেশের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থরক্ষার দিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান। যেসব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সভায় অংশ নিয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে-বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এবং ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ।
