তেজগাঁওয়ে শিশু নিখোঁজ
ময়লার স্তূপে বস্তাবন্দি লাশ খুঁজে পেল দুই বোন
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজধানীর তেজকুনিপাড়া এলাকা থেকে সোমবার নিখোঁজ হয় শিশু রোজামনি (৫)। মঙ্গলবার সকালে বিজয় সরণি উড়াল সড়কের নিচে ময়লার স্তূপে বস্তাবন্দি লাশ খুঁজে পেল রোজামনির আপন দুই বোন সুবর্ণা আক্তার ও আইরিন আক্তার। পরে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য রোজামনির লাশ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান বলেন, পরিবারের সঙ্গে তেজকুনিপাড়া এলাকায় একটি টিনশেড বাসায় থাকত শিশু রোজামনি। তার বাবা নূরে আলম মালয়েশিয়া প্রবাসী। সোমবার বিকাল থেকেই শিশুটি নিখোঁজ ছিল। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ময়লার মধ্যে সন্দেহজনক একটি বস্তা দেখতে পায় লোকজন। সেটি খুলে দেখা যায় ভেতরে এক শিশুর লাশ। মৃতদেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পরে তার পরিচয় জানা যায়। কেন তাকে হত্যা করা হয়েছে, কে বা কারা এতে জড়িত তা জানার চেষ্টা চলছে। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেগুলো বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। জানা গেছে, সোমবার শিশুটি নিখোঁজের পর তাকে না পেয়ে স্বজন ও প্রতিবেশীরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। এমনকি সন্ধান চেয়ে এলাকায় মাইকিংও করা হয়। কিন্তু শিশুটির অবস্থান জানা যায়নি। শিশুটির মৃতদেহে ফোসকার মতো চিহ্ন ছিল। পুলিশের ধারণা, তার শরীরে গরম পানি ঢেলে দেওয়া হতে পারে। হত্যার আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে কিনা সেটিও ময়নাতদন্তসংশ্লিষ্টদের খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। পাঁচ বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে রোজামনি ছিল সবার ছোট। তাদের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরায়।
শিশুটির বোন সুবর্ণা আক্তার বলে, রোজামনির খোঁজে মঙ্গলবার সকাল থেকেই আমরা বের হই। আমার ৯ বছরের বোন আইরিন আক্তারকে নিয়ে ময়লার স্তূপ ঘাঁটতে থাকি। হঠাৎ একটি বস্তা দেখতে পাই। দুজনে বস্তা টেনে তুলি। আরও মানুষ সেখানে আসে। বস্তার মুখ খোলার পর বেরিয়ে আসে আমার বোনের (রোজামনি) লাশ। রোজামনির মা শিল্পী আক্তার মেয়ের শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তিনি জানান, এক বছর আগে মালয়েশিয়ায় যান তার স্বামী নূর আলম।
কিন্তু সেখানে গিয়ে ভালো আয় রোজগার করতে পারছেন না। ফলে তারা রীতিমতো আর্থিক সংকটে পড়েন। এ অবস্থায় আট মাস আগে তিনি তার সাত সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। শিল্পী আক্তার বাসা বাড়িতে কাজ করেন। তার দুই মেয়ে চাকরি করে গার্মেন্টসে। প্রথম দিকে তেজগাঁও এলাকায় ১০ হাজার টাকা ভাড়ায় একটি বাসায় ছিলেন। গত পহেলা মে বাসা পাল্টিয়ে সাড়ে তিন হাজার টাকা ভাড়ায় তেজকুনিপাড়ার ওই বাসায় ওঠেন।
মেয়ের এমন মৃত্যুতে রীতিমতো ভেঙে পড়েছেন শিল্পী আক্তার। তিনি বলেন, আমার নিষ্পাপ মেয়েটারে যে মারল আমি তার ফাঁসি চাই। আমার মেয়ের তো কোনো শত্রু থাকার কথা না। কে এমনভাবে মারল আমার রোজামনিকে। আমি রাষ্ট্রের কাছে এর বিচার চাই। তিনি বলেন, আমার মেয়েটা বারবার বলত, ঢাকা তার ভালো লাগে না। বাড়ি চলে যেতে চাইত। কিন্তু আমার মেয়েটা দুনিয়া থেকেই চলে গেল।
