Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

বাংলাদেশে স্টারলিংকের যাত্রা শুরু

প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেটের নতুন সম্ভাবনা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২১ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করল স্টারলিংক। ইলন মাস্কের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স পরিচালিত এই স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা এখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও উচ্চগতির সংযোগ নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে বলে জানিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। সঙ্গে ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, স্টারলিংকের যন্ত্রপাতি ও সংযোগ গ্রহণে গ্রাহকদের ওয়েবসাইট থেকেই অর্ডার করতে হবে। প্রাথমিক সেটআপে থাকবে স্যাটেলাইট ডিশ অ্যান্টেনা, ওয়াইফাই রাউটার, মাউন্টিং ট্রাইপড ও প্রয়োজনীয় কেবল। একবার স্থাপন করলেই ব্যবহারকারী ইন্টারনেট সুবিধা নিতে পারবেন। এটি ব্যবহারযোগ্য হবে শহর ও গ্রাম উভয় পরিবেশে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, বাংলাদেশে স্টারলিংকের দাম এ অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে কম। আমরা শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ডসহ অন্য দেশগুলোর বাজার বিশ্লেষণ করেছি। স্টারলিংক প্রাথমিকভাবে এককালীন যন্ত্রপাতির জন্য ৪৭ হাজার টাকা নিচ্ছে ও মাসিক খরচ ৪২০০ থেকে ৬০০০ টাকার মধ্যে নির্ধারিত হয়েছে, যা আমাদের বিবেচনায় যৌক্তিক। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রাথমিক মূল্য নির্ধারণের পর এই সেবার ওপর আর কোনো সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। বাজারের সরবরাহ ও চাহিদা অনুযায়ী ভবিষ্যতের মূল্য নির্ধারিত হবে। তিনি জানান, বিটিআরসি স্টারলিংকের প্রস্তাবিত ট্যারিফ অনুমোদন দিয়েছে।

স্টারলিংকের প্রভাব ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ বলেন, দেশে এখন ৩০ শতাংশ মোবাইল টাওয়ারে অপটিক্যাল ফাইবার আছে। অধিকাংশ জায়গায় এখনো মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তি ব্যবহার হয়, যার ব্যান্ডউইডথ সীমিত ও কম গতির। এমন পরিস্থিতিতে স্টারলিংক একটি টাওয়ারের সমপরিমাণ ব্যান্ডউইডথ দিতে পারবে মাত্র একটি সেটআপ থেকেই। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশের হাজার হাজার মোবাইল টাওয়ারে মাত্র ৩০০ এমবিপিএস ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার হচ্ছে ও তা কয়েক হাজার গ্রাহকের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। স্টারলিংক সেই অব্যবস্থাপনার বাইরে একটি সমাধান দিতে পারবে।

তবে স্টারলিংকের আগমনে দেশের ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো (আইএসপি) ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তৈয়্যব বলেন, আমরা আগেই বলেছি, দেশে বর্তমানে আইএসপিদের দেওয়া ব্রডব্যান্ড বিশ্বের অন্যতম নিকৃষ্ট সেবা। তারা যদি সেবার মান না বাড়ান, তাহলে গ্রাহক হারানো স্বাভাবিক। আমাদের দায়িত্ব ভালোমানের সেবা নিশ্চিত করা। স্টারলিংক বিষয়ে মানুষের সাধারণ প্রশ্নগুলোর লিখিত উত্তর সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই পড়ে শোনানো হয়। জানানো হয়, এই ইন্টারনেট সেবায় কোনো ডেটা লিমিট থাকবে না। একটি ডিভাইস ২০ থেকে ৫০ মিটার পর্যন্ত ইন্টারনেট কভারেজ দিতে পারবে; গ্রামীণ এলাকায় এই পরিসীমা ৫০-৬০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। একজন ব্যক্তি চাইলে বা সমবায়ের ভিত্তিতে একাধিক ব্যক্তি মিলে এই সেবা ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে পারবেন। সরকার কেন স্টারলিংককে অগ্রাধিকার দিচ্ছে এই প্রশ্নের জবাবে ফয়েজ আহমদ বলেন, জুলাইয়ে দেশে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে আমরা আন্তর্জাতিকভাবে বিনিয়োগের ক্ষতির মুখে পড়ি। তখন থেকেই আমরা একটি টেকসই, উচ্চগতির ও মানসম্পন্ন বিকল্প খুঁজছিলাম। সেখান থেকেই স্টারলিংকের প্রয়োজনীয়তা উঠে আসে। তিনি আরও বলেন, স্টারলিংক শুধুই একটি সেবা নয়, এটি বৈশ্বিক ইন্টারনেট অবকাঠামোয় বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী করতে পারে। স্টারলিংকের আগমনের মাধ্যমে অন্য স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোও বাংলাদেশে আসার আগ্রহ দেখাচ্ছে। ইতোমধ্যে চারটি কোম্পানি বাংলাদেশে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। টেলিযোগাযোগ আইন সংশোধনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বছরের তৃতীয় বা চতুর্থ প্রান্তিকে আইন সংশোধন করে ইন্টারনেট বন্ধের বিধান বাতিল করবে। আমরা প্রযুক্তিবান্ধব নীতির পথে হাঁটছি। স্টারলিংকের বাংলাদেশে আগ্রহ নতুন নয়। ২০২৩ সালের জুলাইতে প্রতিষ্ঠানটি প্রযুক্তি এনে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম