রাজউক ঘেরাও
বৈষম্যমূলক ড্যাপ বাতিল করতে হবে
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বৈষম্যমূলক ড্যাপ (রাজউকের মাস্টারপ্ল্যান) বাতিল ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০০৮ পুনর্বহালের দাবিতে রাজউক ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকার জমি মালিকরা। এ সময় তারা স্লোগান দেন-পাশের বাড়ি ১০ তলা আমার কেন ৫ তলা-এমন স্লোগান দেন ভূমি মালিকরা। এজন্য তারা ৭ কর্মদিবস সময় বেঁধে দিয়েছেন। এর মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে তারা রাজউকের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৯টা থেকে ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে রাজউকের প্রধান কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় তাদের পক্ষে সহমত জানাতে ভূমি মালিক, প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কয়েক হাজার মানুষ সেখানে অবস্থান নেন।
গতকাল সকাল থেকে ৪ ঘণ্টার বেশি সময় ভূমি মালিকরা রাজউকের প্রধান কার্যালয় অবরোধ করে রাখেন। তারা রাজউকের নানা স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি, অনিয়ম এবং ঘুস বাণিজ্য নিয়ে কথা বলেন। পাশাপাশি রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদত্যাগ দাবি করেন। ভূমি মালিকরা পরিকল্পনাবিদদের নানা ছলচাতুরীর কথা তুলে ধরেন। পরিকল্পনাবিদরা কিছু ভূমি ব্যবসায়ীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে ড্যাপের সংশোধনীতে বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন ভূমি মালিকরা।
এছাড়া ৭ কর্মদিবসের মধ্যে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০০৮ পুনর্বহাল না করলে রাজউকের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. দেওয়ান এমএ সাজ্জাদ এই হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, তারা কয়েক হাজার ভূমি মালিক শান্তিপূর্ণভাবে রাজউক ঘেরাও করেছেন। গতকাল তারা শুধু সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করার জন্য ঘেরাও করেছেন। তাদের দাবি না মানলে আগামীতে আরও কঠোর আন্দোলন হবে।
ভূমি মালিকদের একজন তানভীরুল ইসলাম। তিনি জানান, জনস্বার্থবিরোধী বৈষম্যমূলক ড্যাপ বাতিল না হলে তারা রাজউকের সামনে আমরণ অনশন শুরু করবেন। যে ড্যাপ কৃষি জমি ধ্বংস করে, জলাধার ধ্বংস করে পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনে সেই ড্যাপের বাতিল চান তারা। তাদের দাবি আদায় না হলে তারা রাজপথ ছেড়ে যাবেন না।
ভূমি মালিক আমিনুর রহমান বলেন, পতিত সরকারের কতিপয় দোসরের প্রেসক্রিপশনে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধায়নে তড়িঘড়ি করে দেশের স্বার্থবিরোধী বৈষম্যমূলক ড্যাপ ২০২২-২০৩৫ প্রকাশ করা হয়েছে। ওই ড্যাপের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কেড়ে নেওয়া হয় ঢাকা মহানগরের ভবন নির্মাণের অধিকার। নগরবাসীর মধ্যে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সৃষ্টি করা হয় চরম বৈষম্য। যার ফলে কৃষিজমি ও বন্যাপ্রবাহ এলাকা দ্রুতগতিতে হ্রাস পাচ্ছে। ভূমি মালিকদের নেতা এজাজ খান বলেন, এই বৈষম্যমূলক ড্যাপের জন্য এখনো পতিত স্বৈরাচারী সরকারের সুবিধাবাদী কয়েকজন নগর পরিকল্পনাবিদ মায়াকান্না করে বেড়াচ্ছেন। তারা একটি মহলের হয়ে ঢাকা থেকে নাগরিকদের বের করে দিতে চাচ্ছে।
ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসমন্বয়ক লিজা বলেন, তারা বহুবার বিভিন্ন দপ্তরে গিয়েছেন, আবেদন-নিবেদন করেছেন। কিন্তু তাদের কান্না কেউ শুনছে না। জমির মালিক হওয়া সত্ত্বেও তারা মৌলিক অধিকারের অন্যতম আবাসন তৈরির অধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন। তাদের যেহেতু জমির স্বল্পতা আছে, সেই বিবেচনায় ঢাকা মহানগরের ড্যাপ ২০২২-৩৫ এর বিতর্কিত বিধিবিধানগুলো স্থগিত করে ঢাকা মহানগরের মহল্লাগুলোর রাস্তা প্রশস্তকরণ ও জনস্বার্থে মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮-এর বিধিবিধান অনুসারে ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ভূমি মালিকদের সংগঠনের সমন্বয়ক ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী রেজাউল ইসলাম বলেন, পরিতাপের সঙ্গে সমবেত হয়েছেন। দেশের আইন হয় জনস্বার্থে, জনস্বার্থপরিপন্থি হলে হয় না। প্ল্যান অনুমোদন নিতে হয়, নকশা নিতে একেক সময় একেক আইন করা হয়। প্রকৃত অবস্থা দেখে আইন করে না। অন্যদের কথায় করা হয়।
তিনি বলেন, গুলশান, বারিধারায় এক আইন আর অন্য এলাকায় আরেক আইন-এটা হয় না। ২০০৮ সালের যে আইন কার্যকর ছিল সেটাই যথাযথ ছিল। বিনা টাকায় নকশা হয় না, নকশার জন্য আবেদন করা হলে এক মাসের মধ্যে পাশ করা সম্ভব। কিন্তু টাকা না হলে মাসের পর মাস তা ফেলে রাখা হয়।
