উদ্ভূত পরিস্থিতি
দুই উপদেষ্টা ও এনসিপি নেতাদের ফেসবুক স্ট্যাটাস
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পালটাপালটি রাজনৈতিক কর্মসূচি, চারদিকে বিশৃঙ্খলা, জুলাইয়ের ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির ঐক্যে ফাটল দেখা দেওয়ার প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার সরকারের দুজন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম ও নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ফেসবুকে পৃথক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এসব স্ট্যাটাসে দুঃখ ও হতাশা প্রকাশের পাশাপাশি জুলাই ঐক্য ধরে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
নিজের ‘বিভাজনমূলক’ শব্দচয়নের জন্য ‘দুঃখিত’ উপদেষ্টা মাহফুজ : ‘আগেকার যেকোনো বক্তব্য ও শব্দচয়ন, যা বিভাজনমূলক ছিল- সেগুলোর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত’-পদত্যাগের দাবির মুখে এ কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেছেন, সরকারে আর একদিনও থাকলে অভ্যুত্থানের সব শক্তির প্রতি সম্মান ও সংবেদনশীলতা রেখে কাজ করতে চাই।’ বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা মাহফুজ। তিনি এমন সময়ে এই পোস্ট দিলেন, যখন তার ও আরেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
স্ট্যাটাসে মাহফুজ আলম লিখেছেন-‘ব্যক্তির আদর্শ, সম্মান ও আবেগের চেয়ে দেশ বড়। দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্য অনিবার্য। পুরাতন বন্দোবস্তের বিভেদকামী স্লোগান ও তকমাবাজি, যা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে হত্যাযোগ্য করে তোলে, সেগুলো পরিহার করলেই আশা করি ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে। বাংলাদেশের শত্রুরা ঐক্যবদ্ধ ও আগ্রাসী। সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে। দেশপ্রেমিক জনগণ যারা জুলাই অভ্যুত্থানে ঐক্যবদ্ধ ছিলেন, তাদের সামনে দীর্ঘ পরীক্ষা। এ পরীক্ষা ঐক্যের এবং ধৈর্যের। এ পরীক্ষা উতরে যেতেই হবে।’
আমাদের না আছে মরার ভয়, না আছে হারাবার কিছু : উপদেষ্টা আসিফ : স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, আমাদের না আছে মরার ভয়, না আছে হারাবার কিছু। একমাত্র আফসোস, গণতান্ত্রিক রূপান্তর আর এদেশের মানুষের ভাগ্য কোনোটাই ইতিবাচক পথে যাবে না আর কি! বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা বলেন। স্ট্যাটাসে আসিফ মাহমুদ লেখেন, ইঅখ (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ), North & Delhi (উত্তর এবং দিল্লি) জোটভুক্ত হয়ে যে কুমির ডেকে আনছেন তা আপনাদেরই খাবে। You’re not one of them-just co-opted temporarily. (তুমি তাদের একজন নও, শুধু সাময়িকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে)। তিনি আরও লেখেন, স্বপ্ন দেখে স্বপ্নভঙ্গের কষ্টই বোধহয় এদেশের ভাগ্য।
জুলাইয়ের ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তির ঐক্যের আহ্বান হাসনাতের : যে বিভাজনটা অপ্রত্যাশিতভাবে এসেছিল, সেই বিভাজনকে দেশ ও জাতির স্বার্থে মিটিয়ে ফেলার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ আহ্বান জানান। পোস্টে হাসনাত আবদুল্লাহ আরও লিখেছেন, এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য এবং পতিত ফ্যাসিবাদের নগ্ন দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র থেকে মুক্তির জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মনে রাখবেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতনে দেশে-বিদেশে অনেকে নাখোশ হয়ে আছে। এই নাখোশ বান্দারা আমাদের বিভাজনের সুযোগ নিতে নিতে আজকের এই অস্থিতিশীল দিন এনেছে। আমরা সবাই এক হয়েছিলাম বলে দীর্ঘ দেড় যুগের শক্তিশালী ফ্যাসিবাদকে তছনছ করতে পেরেছিলাম। আমরা খণ্ডবিখণ্ড হলে পতিত ফ্যাসিবাদ ও তার দেশি-বিদেশি দোসররা আমাদের তছনছ করার হীন পাঁয়তারা করবে।
আসিফ নজরুলের পদত্যাগ চাওয়া কি উচিত নয়, প্রশ্ন সারজিসের : ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এতগুলো মানুষ খুন হলেও এখন পর্যন্ত একটি বিচারকার্য সম্পন্ন হয়নি এবং এর দায় আইন উপদেষ্টা হিসেবে আসিফ নজরুল কোনোভাবে এড়াতে পারেন না। এ অবস্থায় তার পদত্যাগ চাওয়া কি উচিত নয়-বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, টাকা আর রাজনৈতিক দলের সুপারিশে অনেক হত্যাকারী আওয়ামী লীগারের জামিন হয়ে যায়। টাকা আর রাজনৈতিক সুপারিশ নেই বলে আওয়ামী আমলে জুলুমের শিকার অনেক মজলুমের জামিন হয় না। প্রকাশ্য দিবালোকে হাসিনার নির্দেশে এতগুলো মানুষ খুন হলো, এতগুলো মানুষের রক্ত ঝরল, তারপরও নয় মাসে একটা বিচারকার্য সম্পন্ন হয় না!
বিএনপি জনগণবিরোধী এক পরিণতির পথে হাঁটছে-নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী : বিএনপি আজ জনগণবিরোধী এক পরিণতির পথে হাঁটছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে তিনি বলেন, চুপ্পুর অপসারণ, জুলাই ঘোষণাপত্র-জনগণের পক্ষে যে কোনো উদ্যোগে বিএনপি বাধা দিয়েছে কিংবা নীরব থেকেছে। তারা ক্রমাগত পুরোনো বন্দোবস্ত ও শাসকগোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষায় ব্যস্ত। সর্বশেষ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতেও তাদের অবস্থান ছিল নিশ্চুপ। তারা রাজপথে নামে শুধু নিজেদের ক্ষমতার লোভে। তারা হয়তো ৫ আগস্ট ভুলে গেছে। ভাবে, ছাত্র-জনতা ঘরে ফিরে গেছে। কিন্তু তারা বুঝতে পারছে না একটি পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে যে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, আরেকটি মাফিয়াতন্ত্র টিকিয়ে রাখার প্রয়াস নিলে দ্বিতীয় অভ্যুত্থান অনিবার্য হয়ে উঠবে। জুলাই প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাজপথে আবারও দেখা হবে।
