পিকেএসএফের সম্মেলনে গভর্নর
টাকা পাচারকারীরা চাপে, জব্দ হচ্ছে সম্পদ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থ ফেরত দেওয়ার বিষয়ে এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চাপ তৈরি হয়েছে। সেই চাপের কারণেই যুক্তরাজ্যের লন্ডনে সম্পদ জব্দ হতে দেখা গেছে। এ রকম আরও কিছু দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির সম্পদ ভবিষ্যতে জব্দ করা হবে বলে আশা করা যায়।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে শনিবার সকালে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ঋণ সক্ষমতা বৃদ্ধি কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন গভর্নর। পিকেএসএফের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক ও বাংলাদেশে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং।
প্রধান অতিথির বক্তেব্যে গভর্নর বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে সম্পদ জব্দের ঘটনায় খুবই উৎসাহিত বোধ করছি। এটাকে সামনের দিকে আরও বেগবান করতে হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কিত আরও অনেক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির (পাচার করা) সম্পদ যুক্তরাজ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। আশা করছি, সেগুলোকেও চিহ্নিত করে জব্দ (ফ্রিজ) করা সম্ভব হবে।
লন্ডনে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তির মালিকানাধীন ৯০ মিলিয়ন বা প্রায় ৯ কোটি পাউন্ডের (১৬৪ টাকা ধরে যা প্রায় ১ হাজার ৪৭৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা) বিলাসবহুল সম্পত্তি জব্দ করেছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)। যাদের সম্পদ জব্দ করা হয়েছে, তারা হলেন-সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান এফ রহমান ও সালমান এফ রহমানের ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমান।
জব্দের আদেশে বলা হয়েছে, আহমেদ শায়ান এফ রহমানও তার চাচাতো ভাই আহমেদ শাহরিয়ার রহমান লন্ডনে তাদের সম্পদ বিক্রি করতে পারবেন না। এর মধ্যে লন্ডনের গ্রোসভেনর স্কয়ারের অ্যাপার্টমেন্টও রয়েছে। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের যুক্তরাজ্যে থাকা সম্পদ নিয়ে ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানে শায়ান ও শাহরিয়ার এ দুজনের নাম রয়েছে। পিকেএসএফের ভবনে অনুষ্ঠান শেষে এ বিষয়ে গভর্নরের কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা। উত্তরে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আমি লন্ডন সফর করেছি। সেখানে অর্থ পাচার নিয়ে দেশটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। এটা আমাদের পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট। প্রধান উপদেষ্টাও এ বিষয়ে সব জায়গায় প্রচেষ্টাও চালাচ্ছেন। এটারই অংশ হিসাবে আমরা এখন দেখছি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অর্থ পাচার নিয়ে একটা চাপের মধ্যে রয়েছে।’
গভর্নর বলেন, ‘ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, আলজাজিরাসহ বৈশ্বিক গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের অর্থ পাচার নিয়ে বড় বড় নিবন্ধ লিখছে। ব্রিটিশ সংসদ-সদস্যরা সমর্থন দিচ্ছেন। এর বাইরে ব্রিটিশ এনজিও যারা আছে, তারাও এটাকে সমর্থন করছে। ফলে আমি মনে করি, টাকা পাচারকারীদের ওপর একটা চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সেই চাপের ফলে এনসিএ কিছু সম্পদ জব্দ করেছে।’
জব্দ হওয়া সম্পদ কতদিনের মধ্যে দেশে ফেরত আসতে পারে সে বিষয়ে জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, ‘জব্দের অর্থ এখনই ফেরত আনা সম্ভব হবে না। এটি আসবে বিচারের পর। কিন্তু জব্দের ফলে বিচার শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা এই সম্পদগুলো আর বিক্রি করতে পারবেন না। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। এখন বিচারক সিদ্ধান্ত নেবেন যে সেই সম্পদ যুক্তরাজ্যের না বাংলাদেশের। আমরা এখন আইনি প্রক্রিয়াটা শুরু করব।’
যুক্তরাজ্য ছাড়া আরও কিছু দেশে এ ধরনের সম্পদ রয়েছে বলে বিভিন্ন সময় সংবাদে উঠে এসেছে-এ প্রসঙ্গে গভর্নরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। গত সপ্তাহে আমি দুবাই গিয়েছিলাম। সিঙ্গাপুরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি। লন্ডনে আবার যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া অর্থ পাচার নিয়ে আন্তর্জাতিক একটা সম্মেলন করারও পরিকল্পনা রয়েছে।’
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এটা স্মরণ করিয়ে দিতে হবে যে পাচার করা সম্পদ রাখা নৈতিকতাবিরোধী, এটা রাখা ঠিক নয়। এটা যার সম্পদ, যে জনগণের টাকা, তাদের ফেরত দিয়ে দেওয়া উচিত। সে ব্যাপারে তারা যেন তাদের তৎপরতা দেখায়, এটাই আমাদের আশা।’
