Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

বিএফআইইউ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে গভর্নর

বিদেশে পাচার ১৮-২০ বিলিয়ন ডলার

৩৫০টি বাড়ি কিনেছেন একজনই

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশ থেকে ১৮-২০ বিলিয়ন বা এক হাজার ৮০০ কোটি থেকে দুই হাজার কোটি ডলার পাচার করা হয়েছে (বাংলাদেশি টাকায় দুই লাখ ১৯ হাজার ৬০০ কোটি থেকে দুই লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা)। শুধু একজনই ৩৫০টি বাড়ি কিনেছেন বিদেশে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এসব অর্থ পাচার করা হয়েছে। এসব ঘটনা উদঘাটন করা গেছে। দিন দিন পাচার করা অর্থের এই অঙ্ক আরও বাড়ছে।

অর্থ পাচার প্রতিরোধে সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর এ মন্তব্য করেন। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএফআইইউর প্রধান কর্মকর্তা এএফএম শাহীনুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, পাচারের অর্থ ফেরত আনতে হবে, এ ধরনের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য নতুন। আমরা কেউ এ ধরনের কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। পাচারের অর্থ ফেরত আনার কাজ গতিশীল করতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। সেজন্য আইনে পরিবর্তন আনা হবে। ১১টি গ্রুপ নিয়ে যৌথ তদন্ত দল কাজ করছে, প্রয়োজনে আরও তদন্ত দল করা হবে।

গভর্নর আরও বলেন, পাচারের অর্থ ফেরত আনতে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লেগে যাবে। ইতোমধ্যে বিদেশে একজনের সম্পদ জব্দ হয়েছে। সামনে আরও সম্পদ জব্দ হবে। আমাদের উদ্দেশ্য, পাচারকারীদের ওপর চাপ তৈরি করা, যাতে আদালতের বাইরে গিয়ে অর্থ উদ্ধার করা যায়। কাউকে কারাগারে নিয়ে হয়রানি করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। কারও ব্যবসা বন্ধ করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা কারও ব্যবসা বন্ধ করিনি। যাদের ব্যবসা বন্ধ হয়েছে, সেটা অন্য কারণে হয়েছে।

সভায় জানানো হয়, চলতি অর্থবছরে বিএফআইইউতে মোট ১৭ হাজার ৩৪৫টি সন্দেহজনক লেনদেন ও কার্যক্রম সংক্রান্ত প্রতিবেদন (এসটিআর/এসএআর) দাখিল হয়েছে; আগের বছরের তুলনায় যা প্রায় ২৩ শতাংশ বেশি। এতে বোঝা যায়, অর্থ পাচার প্রতিরোধ কার্যক্রমে প্রতিবেদন প্রদানকারী সংস্থাগুলোর সচেতনতা ও দক্ষতা বেড়েছে।

এছাড়া বিএফআইইউ গত অর্থবছরে ১১৪টি আর্থিক গোয়েন্দা প্রতিবেদন বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থার কাছে পাঠিয়েছে। আইন প্রয়োগকারী, নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ মোট এক হাজার ২২০টি তথ্য বিনিময়ও হয়েছে, আগের বছরের তুলনায় যা ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি। বিএফআইইউর প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম বলেন, অর্থপাচার ও হুন্ডি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা ও লেনদেন ভারসাম্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এই প্রবণতা। অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় স্থিতিশীলতা ফেরাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে কাজ চলছে। ১১টি গ্রুপ নিয়ে যৌথ তদন্ত চলছে। এ কাজে পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংক।

বিএফআইইউর প্রধান বলেন, পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনার লক্ষ্যে সংস্থাটি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, তদন্তকারী সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে। বিশ্বব্যাংকের এসটিএআর, যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসডোজ, আইএসিসিসি ও আইসিএআরের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। এমনকি বিদেশি আইনি প্রতিষ্ঠান নিয়োগের মাধ্যমে অর্থ পুনরুদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে। তবে প্রক্রিয়াটি দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল হওয়ায় সময় লাগবে। সভায় বিএফআইইউর পরিচালক মুহাম্মদ আনিছুর রহমান বলেন, অর্থপাচার ধরা ও উদ্ধার করা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এটা চলতেই থাকবে। গত বছরের জুলাই মাসের পর বিএফআইইউর কাজ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। সন্দেহজনক প্রতিবেদন অনেক বেড়েছে। বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন পাঠানো চার গুণ বেড়েছে।

অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর জানান, কয়েকটি শরিয়াহভিত্তিক দুর্বল ব্যাংক একীভূত করা হতে পারে। নতুন আইনে বাংলাদেশ ব্যাংককে এ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যেসব ব্যাংক একীভূত করা হবে প্রথমে সরকারের অধীনে এসব ব্যাংকের মালিকানা যাবে। যেহেতু সরকার তার নিয়ন্ত্রণে নেবে তাই একীভূত হওয়া ব্যাংকের আমানতকারীদের ভয় থাকার কোনো কারণ নেই। তাদের আমানত ফেরত দেওয়া হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম