দলীয় আয়ের উৎস প্রকাশ করল এনসিপি
চাঁদা ও দান থেকে তহবিল সংগ্রহ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আর্থিক নীতিমালা ও তহবিল পরিচালনা (ক্রাউড ফান্ডিং) কার্যক্রম প্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। টি-শার্ট, মগ, বই বিক্রি, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং অনলাইন কোর্স নির্ভর হবে তাদের তহবিল সংগ্রহ। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের থেকে অর্থ সংগ্রহে ‘১০০ টাকা ক্যাম্পেইন’ ও ‘ছোট দান, বড় স্বপ্ন’ কার্যক্রম হাতে নেবে। মোবাইল পেমেন্ট বা ব্যাংকের মাধ্যমে মাসিক সদস্য ফি দেওয়া যাবে। এতে নির্ভরযোগ্য, স্বচ্ছ এবং জনভিত্তিক রাজনীতির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পূর্ণকালীন রাজনৈতিক কর্মীদের ভাতা ও বোনাস দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এনসিপির আর্থিক নীতিমালা ঘোষণা ও ক্রাউড ফান্ডিং কার্যক্রম নিয়ে বুধবার দলটির দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ নীতিমালা প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিকে, চলতি মাসেই দলের নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) কাগজপত্র জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, সামগ্রিক দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের জন্য সব দলকে আর্থিক স্বচ্ছতার বিষয়টি নিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে এই বিষয় নির্বাচন কমিশনকেও কঠোর হতে হবে। কারণ নির্বাচনের সময় কিন্তু অর্থ এবং পেশিশক্তির একটা অপব্যবহার হয়ে থাকে। আমরা মনে করি নির্বাচন কমিশন কঠোর আইন তৈরি করলে এবং সে আইনগুলো যথাযথ প্রয়োগ করলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। তিনি বলেন, আমরা জনগণের আন্দোলনের মধ্য থেকে গড়ে উঠেছি। যদি জনগণ আমাদের সমর্থন না দেয় তাহলে রাজনৈতিকভাবে বা নৈতিকভাবে বাংলাদেশে আমরা টিকে থাকতে পারব না। ফলে আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সেই জনগণের সমর্থন নেওয়া। ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে আমরা জনগণের সেই সমর্থনটাই নিতে চাই। দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, তাদের দল স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বিশ্বাসী। সহায়তা সরাসরি ব্যক্তির হাতে না দিয়ে দলের অ্যাকাউন্টে দিতে আহ্বান জানান তিনি।
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, দলের অর্থনীতি নিয়ে মিডিয়ায় গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
এনসিপির আর্থিক ও তহবিল পরিচালনা নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য নিয়ে বলা হয়, দলের প্রতিটি টাকার উৎস ও ব্যয়ের হিসাব স্বচ্ছ, নৈতিক ও আইনি কাঠামোর মধ্যে রাখা হবে। দলের অর্থনীতি হবে শৃঙ্খলাবদ্ধ ও অডিটযোগ্য। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অর্থের ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করা হবে। দেশের প্রচলিত আইন, যেমন-গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, নির্বাচন কমিশন নীতিমালা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা পুরোপুরি মেনে চলা হবে।
অর্থের উৎস নিয়ে বলা হয়, মাসিক সদস্য ফি, যেটা সদস্যরা নির্দিষ্ট রসিদ, মোবাইল পেমেন্ট বা ব্যাংকের মাধ্যমে চাঁদা দিতে পারবেন। অনলাইন গণচাঁদা তথা ওয়েবসাইটে ডিজিটাল রসিদের মাধ্যমে দেশের ও বিদেশের প্রবাসীরা অর্থ দান করতে পারবেন। করপোরেট অনুদান নেওয়া হবে, যেখানে নিরপেক্ষভাবে যাচাই করে শুধু বৈধ ও নৈতিক উৎস থেকে করপোরেট অনুদান গ্রহণ করা হবে। তবে কোনো কালোটাকা, অজানা উৎস, বিদেশি সরকার বা অপরাধসংশ্লিষ্ট অর্থ একেবারেই নেওয়া হবে না।
আর্থিক স্বচ্ছতা সম্পর্কে বলা হয়, প্রতিটি অনুদানে স্বয়ংক্রিয় রসিদ, অনলাইন এন্ট্রি এবং ইউনিক আইডি থাকবে। ৫ হাজার টাকার বেশি দানের ক্ষেত্রে দাতার পরিচয় গোপন রাখা হলেও, দলীয়ভাবে তা সংরক্ষিত থাকবে। সব লেনদেন গুগল শিট বা সফটওয়্যারে রেকর্ড হবে, যা কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যবেক্ষণযোগ্য। তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে, অনুদানের একটি অংশ কেন্দ্রীয়ভাবে পুনর্বণ্টন করা হবে।
বরাদ্দ ও ব্যয়ের নীতিমালা নিয়ে বলা হয়, বাজেট অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যয় করা যাবে না এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে ৬টি অগ্রাধিকার ধাপ অনুসরণ করতে হবে। চাঁদাবাজি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স উল্লেখ করে জোর করে বা হুমকি দিয়ে অর্থ সংগ্রহ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কথা বলা বা হুইসেলব্লোয়ার পলিসির মাধ্যমে যে কেউ অনৈতিক অর্থ লেনদেন গোপনে রিপোর্ট করতে পারবেন। অনিয়ম প্রমাণিত হলে সতর্কীকরণ, বরখাস্ত এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় অর্থ ও বাজেট কমিটি প্রসঙ্গে বলা হয়, দলের বাজেট, অনুদান ও ব্যয়ের স্বচ্ছ ও নৈতিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে এই কমিটি গঠিত হবে। কোষাধ্যক্ষ সভাপতি হিসাবে থাকবেন এবং ৫ জন সদস্য থাকবেন যারা তথ্যপ্রযুক্তি, অডিট, ব্যাংকিং, আইন ও ডায়াসপোরা প্রতিনিধি হবেন। কমিটির মেয়াদ ২ বছর এবং সর্বোচ্চ ৩ মেয়াদ পর্যন্ত কাজ করতে পারবে। কমিটির প্রধান দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে-বাজেট তৈরি ও অনুমোদন, তহবিল সংগ্রহ কৌশল প্রণয়ন, বণ্টন ও অনুমোদন, অডিট তদারকি (অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নিরীক্ষা), নীতিমালা হালনাগাদ, গোপনীয়তা রক্ষা, কোষাধ্যক্ষের ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরুরি ব্যয় অনুমোদন এবং আর্থিক তদন্ত শুরু করার ক্ষমতা থাকবে। প্রতি ৬ মাস অন্তর আর্থিক প্রতিবেদন উপস্থাপন এবং দলের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। ৫ কোটি টাকার বেশি লেনদেনে পূর্ণ নিরীক্ষা বাধ্যতামূলক। আর্থিক কমিটির বিষয়ে কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হলে এনসিপির শৃঙ্খলা কমিটি তদন্ত করবে। পূর্ণকালীন রাজনৈতিক কর্মীদের জন্য ভাতা ও বোনাস কাঠামো থাকবে উল্লেখ করে নীতিমালায় বলা হয়, এনসিপি বিশ্বাস করে, টেকসই ও মেধাভিত্তিক রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পূর্ণকালীন সংগঠকদের জন্য কাঠামোবদ্ধ ভাতা এবং ফেলোশিপ প্রোগ্রাম প্রয়োজন। তরুণ নেতারা নৈতিক আয় বজায় রেখে জনসেবায় পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারেন, সে লক্ষ্যে এনসিপি কাজ করে যাচ্ছে। ফেলোদের অভিজ্ঞতা, দায়িত্ব ও কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে চারটি স্তরে শ্রেণিবদ্ধ করা হবে এবং ভাতার পরিমাণ অঞ্চলভেদে জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে নির্ধারণ করা হবে। এই নীতিমালার মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ ও নৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর এনসিপি।
