আ.লীগ আমলে লুটপাটের ক্ষত আরও প্রকট হচ্ছে
রেকর্ড প্রভিশন ঘাটতিতে দুর্বল হচ্ছে ব্যাংক
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক খাতে লুটপাটের ক্ষত যতই দিন যাচ্ছে, ততই আরও প্রকট হচ্ছে। লুটপাটের কারণে যেমন খেলাপি হচ্ছে, তেমনই খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোর আয় কমে যাচ্ছে। ফলে খেলাপি ঋণের বিপরীতে যে প্রভিশন রাখা বাধ্যতামূলক, ব্যাংকগুলো তা রাখতে পারছে না। ফলে একদিকে প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি উচ্চঝুঁকির মুখেও পড়ছে। বিশেষ করে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় লুটপাটের কারণে ক্ষত বাড়ছে। গত মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক খাতে প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের মার্চে ছিল ২৭ হাজার কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি প্রতিবেদন থেকে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন ঋণের বিপরীতে পরিচালন মুনাফা থেকে দশমিক ৫ থেকে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হয়। এর মধ্যে নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ৫ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত, খেলাপি হয়ে গেলে নিুমানের ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং আদায় অযোগ্য মন্দ ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতের মোট প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৫ টাকা। এর আগের প্রান্তিকে অর্থাৎ ডিসেম্বর শেষে যার পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকিং খাতের প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ৬৪ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। তারও আগের প্রান্তিকে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর শেষে ঘাটতি ছিল ৫৫ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। এছাড়াও গত বছরের একই সময়ে অর্থাৎ ২০২৪ সালের মার্চে প্রভিশন ঘাটতি ছিল মাত্র ২৬ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা, যা এক বছরে বেড়েছে ছয়গুণ।
সূত্র জানায়, খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে না পারায় ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ বেড়ে যাচ্ছে। এতে মূলধন কমে গিয়ে এ খাতেও ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে। ফলে ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে। তবে লুটপাটের শিকার ডজন খানেক ব্যাংকে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, গত মার্চ শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে ছিল ৫৭ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা।
গত মার্চ পর্যন্ত বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৪৮ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ৫৮ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা বা দ্বিগুণেরও বেশি।
তবে বিদেশি ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর প্রভিশন উদ্বৃত্ত রয়েছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে বিদেশি ব্যাংকগুলোর প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি উদ্বৃত্ত রয়েছে ৪৩২ কোটি টাকা এবং বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর প্রভিশন উদ্বৃত্ত রয়েছে ২৪৮ কোটি টাকা। কারণ, এসব ব্যাংকে লুটপাট হয়নি বললেই চলে। এদিকে গত মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪০ কোটি টাকা।
