নারায়ণগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ
টেন্ডারের নিয়ম ভেঙে ‘নিজের লোককে’ দুই ঘাট ইজারা
যুগান্তর প্রতিবেদন, নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর নিতাইগঞ্জের মাছুয়াবাজার কালেকশন রাইট পয়েন্ট ও টানবাজার কদমতলি লেবার হ্যান্ডলিং পয়েন্ট ঘাটের ইজারা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। টেন্ডারের শর্তানুযায়ী ইজারা মূল্যের অর্ধেকের বেশি পে-অর্ডার, ভ্যাট-আয়কর নির্ধারিত সময়ে সম্পূর্ণ না দেওয়ার পরও জনৈক ব্যক্তিকে ইজারা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বিআইডব্লিউটিএ’র একটি সিন্ডিকেট নিজের লোককে ঘাট ইজারা দিতে এই অনিয়ম, দুর্নীতি করেছে।
নারায়ণগঞ্জের অটো ফ্লাওয়ার মিলস্ ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি এস কে ওয়াজেদ আলী জানান, এই দুটি ঘাট দিয়ে নারায়ণগঞ্জের টানবাজার-নিতাইগঞ্জ এলাকার ডাল, চাল, গম, ভুট্টা, আটা, ময়দা, সুজি, ভুসি, লবণসহ বিভিন্ন মালামাল লোড-আনলোড হয়। চট্টগ্রাম বন্দরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে মালামাল আসে ও এখান থেকে আবার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে যায়। স্বাধীনতার পর থেকে নিতাইগঞ্জ-টানবাজার এলাকার এসব পণ্যের ব্যবসায়ীদের সমিতিগুলো একত্রিত হয়ে এই ঘাট দুটি ইজারা নিয়ে আসছে। কিন্তু এবার একটি সিন্ডিকেট এই দুটি ঘাটের টেন্ডার অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা চাল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম লিটন জানান, গত ১৪ এপ্রিল এই দুটি ঘাট ইজারা দেওয়ার ব্যাপারে দুটি জাতীয় পত্রিকায় প্রথমবার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। কিন্তু আগের বারের চাইতে এবার বিআইডব্লিউটিএ দুটি ঘাটেই অতিরিক্ত টোল হার নির্ধারণ করে। গত বছর মাছুয়া বাজারের টোল ছিল এক কোটি ৫১ লাখ টাকা, এবার বিআইডব্লিউটিএ’র চাহিদাকৃত টোল ছিল দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা। আগের বারের তুলনায় ৭৪ লাখ টাকা বেশি। অন্যদিকে টানবাজার ঘাটের গতবারের টোল ছিল এক কোটি ২১ লাখ টাকা। এ বছর চাহিদাকৃত টোল ছিল দুই কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় যা ৭৯ লাখ টাকা বেশি। অতিরিক্ত টোলের কারণে খাদ্য ব্যবসায়ী সমিতিগুলো পরপর দুবার এ টেন্ডারে অংশ নেয়নি।
নিয়ম অনুযায়ী প্রথমবার টেন্ডারে কেউ অংশ না নিলে পরের প্রত্যেকবারই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে হয়, মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করতে হয়। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ সে নিয়ম লঙ্ঘন করে পরের দুবার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়নি। মাইকিং ও লিফলেট বিতরণও করেনি। তারা শহরের আলী আহম্মদ চুনকা সড়কের বাসিন্দা শিবলী মাহমুদ ওরফে শিপলু বাবু নামের এক ব্যক্তিকে ঘাট দুটি ইজারা দেয়। বিআইডব্লিউটিএ’র আইন অনুযায়ী ইজারা মূল্যের অর্ধেক টাকা, ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ১০ শতাংশ আয়করের পে-অর্ডার জমা দেওয়ার কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে এই টাকার পে-অর্ডার জমা দিতে না পারলেও শিপলুকে এই ইজারা দেওয়া হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে শিপলু এই টাকা জমা দেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসলে শিপলুকে ঘাট দুটি ইজারা দেয়ার জন্যই বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তাদের একটি গ্রুপ এমনভাবে ইজারা মূল্য বাড়িয়েছে যাতে ব্যবসায়ীরা এই ঘাট ইজারা নিতে না পারেন।
শফিকুল ইসলাম লিটন আরও জানান, ঘাট ইজারায় দুর্নীতির ব্যাপারে নিতাইগঞ্জ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, নারায়ণগঞ্জ জেলা চাল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি ও অটো ফ্লাওয়ার মিলস ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির পক্ষ থেকে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগের ব্যাপারে ঘাট দুটির ইজারা পাওয়া শিবলী মাহমুদ ওরফে শিপলু বাবু দাবি করেন, তিনি বৈধভাবে ইজারা মূল্যের অর্ধেক টাকা, ১৫ পার্সেন্ট ভ্যাট ও ১০ পার্সেন্ট আয়করের পে-অর্ডার যথাসময়ে জমা দিয়ে ঘাট দুটি ইজারা পেয়েছেন। এর স্বপক্ষে কাগজপত্র দেখাবেন বললেও দেখাননি এবং যোগাযোগ করেননি। নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ বি সিদ্দিক বলেন, খাদ্যপণ্যের ঘাট অতিরিক্ত মূল্যে ইজারা হলে এর প্রভাব খাদ্যের ওপর পড়ে। এই প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে তা তদন্ত করে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে বিআইডব্লিউটিএ’র ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
নারায়ণগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, সিন্ডিকেট বা টেন্ডারসংক্রান্ত কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। কয়েক বছর ধরেই আমরা এই ঘাট দুটির ইজারা বাড়ানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু বাড়ছিল না। আমরাই বরং এবার সে সিন্ডিকেট ভেঙে আমাদের চাহিদাকৃত রেটের চেয়ে এক লাখ টাকা করে বেশি মূল্যে ঘাট দুটি ইজারা দিতে পেরেছি।
