Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন

অস্ত্রের মুখে মুসলিমদের বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে ভারত

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভারত সরকারের বিরুদ্ধে সেদেশের মুসলিমদের অস্ত্রের মুখে অবৈধভাবে বাংলাদেশে নির্বাসিত করার অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে নিপীড়নের অভিযান আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ সংবাদমধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

এতে বলা হয়েছে, মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর মতে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ভারতজুড়ে হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, যাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী বলে সন্দেহ করছে নয়াদিল্লি। তাদের অনেককে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত করে সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আইনজীবী এবং নির্বাসিতদের বিবরণ অনুসারে, অবৈধভাবে নির্বাসিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে-এমন ব্যক্তিদের মধ্যে ভারতীয় নাগরিকরাও রয়েছেন। বেশ কয়েকটি বিবরণ অনুসারে, যারা ‘পুশইন’ করার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিল তাদের ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বন্দুকের মুখে হুমকি দিয়েছে। এরপর থেকে প্রায় ২০০ জনকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ভারতীয় নাগরিক হিসাবে শনাক্ত করার পর ভারতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। এদের মধ্যে কিছু লোককে বাড়ি ফেরার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ভূখণ্ড দিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে যেতে বাধ্য করা হয়। বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী ভারতের এই পদক্ষেপকে ‘মানবিক শাসনব্যবস্থার বিচ্যুতি’ বলে নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘এটি আন্তর্জাতিক আইন এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মর্যাদার পরিপন্থি। মানুষকে বনে ফেলে রাখা, নারী ও শিশুদের নদীতে জোর করে ফেলা, অথবা ভূমিহীন শরণার্থীদের সমুদ্রে ফেলে দেওয়ার মতো কাজ মানবাধিকারের নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।’

বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সিনিয়র গবেষক তাসকিন ফাহমিনা বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করার পরিবর্তে, ভারত মূলত মুসলিম এবং নিম্নআয়ের সম্প্রদায়কে তাদের নিজস্ব দেশ থেকে কোনো সম্মতি ছাড়াই বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে। ভারতের এই চাপ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি।’ এপ্রিলে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে সশস্ত্র হামলায় ২৫ জন পর্যটক এবং একজন গাইড নিহত হওয়ার পর, তথাকথিত ‘অবৈধ বাংলাদেশিদের’ বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি সরকারের ক্রমবর্ধমান দমন-পীড়ন শুরু হয়। মূলত এরপর থেকে বিজেপি সরকার ‘বহিরাগতদের’ বহিষ্কারের কথা বলে। ১১ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তাদের হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডার অংশ হিসাবে দেশের ২০ কোটি মুসলিমকে নির্যাতন, হয়রানি এবং ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ রয়েছে। যদিও বিজেপি সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে।

সাম্প্রতিক সময়গুলোতে উত্তর-পূর্ব রাজ্য আসামে মুসলিমদের সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যবস্তু এবং নির্বাসন করা হয়েছে। কারণ বিজেপি-শাসিত রাজ্য সরকার ‘অনুপ্রবেশকারী’ আখ্যা দিয়ে সেসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি অভিযান জোরদার করেছে। মানবাধিকার কর্মীদের মতে, রাজ্যে সম্প্রতি আটক করা প্রায় ১০০ জন নিখোঁজ রয়েছে। এই সপ্তাহে আসামের কট্টরপন্থী বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত শর্মা বলেছেন, এখন রাজ্যের নীতি হলো ‘অবৈধ বিদেশিদের’ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বহিষ্কার করা। ‘এই প্রক্রিয়া আরও তীব্র এবং ত্বরান্বিত করা হবে।’ এসব বিষয়ে আসাম পুলিশ এবং বিএসএফ বারবার মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করলেও তারা দ্য গার্ডিয়ানের অনুরোধে কোনো সাড়া দেয়নি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম