Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৭ হাজার ছাড়িয়েছে

বরগুনায় ভর্তি ২ হাজারের বেশি * বরগুনায় পদায়ন করা অতিরিক্ত চিকিৎসক-নার্সদের সবাই যোগদান করেননি : জেলা সিভিল সার্জন

Icon

জাহিদ হাসান

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অনিয়মিত বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির হেরফেরে বাড়ছে এডিস মশাবাহী রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে আরও ২৫১ রোগী ভর্তি হয়েছেন। তবে এ সময় এতে কারও মৃত্যু হয়নি। স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাবে চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগী সাত হাজারের (৭ হাজার ৭৭ জন) ঘর ছাড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি প্রকোপ দেখা দেওয়া বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৮৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৭ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৮ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) তিনজন, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) দুজন রয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় ১১১ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ছয় হাজার ২১৪ জন রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন।

২০ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন সাত হাজার ৭৭ জন। এর মধ্যে ৫৯ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৪০ দশমিক ৭ শতাংশ নারী রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কারও মৃত্যু না হওয়ায় এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৩০ জনেই রয়েছে।

বরগুনায় ডেঙ্গু রোগী ২ হাজার ছাড়িয়েছে : এদিকে দিন যত যাচ্ছে ডেঙ্গুর হটস্পট হিসাবে স্বীকৃত বরগুনার পরিস্থিতি ততই অবনতি হচ্ছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের বরাত দিয়ে যুগান্তরের বরগুনা (দক্ষিণ) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সদর উপজেলা ছাড়িয়ে অন্যান্য উপজেলাতেও আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় এই জেলায় নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৩ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৮৮ জনে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক-নার্সরা যুগান্তরকে জানিয়েছেন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে ধারণ ক্ষমতার প্রায় চারগুণ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে। রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন।

বরগুনা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে বরগুনা সদরে ৭৮ জন ও পাথরঘাটায় ৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৪১ জন। এর মধ্যে বরগুনা সদর হাসপাতালে ২০৬ জন, পাথরঘাটায় ১০ জন, তালতলীতে ৯ জন, বামনায় ৮ জন, আমতলীতে ৪ জন, বেতাগীতে ৪ জন ভর্তি আছেন। এ নিয়ে এ বছর আক্রান্তে সংখ্যা মোট ২ হাজার ১৮৮ জনে পৌঁছেছে। এ বছর বরগুনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ জন ডেঙ্গু রোগী মারা গেছেন। এছাড়া জেলার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে গত ২ মাসে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনসহ মোট ২০ জনের।

শুক্রবার বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. মাহমুদ মুর্শিদ শুভ বলেন, গতকালের (বৃহস্পতিবার) তুলনায় আজ (শুক্রবার) ডেঙ্গু রোগীর চাপ আরও বেড়েছে। বন্ধের দিনেও নিয়মিত রাউন্ড দিতে হচ্ছে। এখানে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। তারপরও সেবা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।

তবে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাজকিয়া সিদ্দিকাহ বলেন, ‘ডেঙ্গুজ্বরে প্রকোপ বেড়ে যাওয়া এমন অনেক রোগী এসে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, যাদের বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা করা সম্ভব। এসব রোগীর কারণে হাসপাতালে চাপ বাড়ছে। তিনি বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাÍক আকার ধারণ করায় রোগীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেই হাসপাতালে ছুটে আসছেন। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে চিকিৎসক-নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

বরগুনা জেনারেল সিনিয়র স্টাফ নার্স সুপ্রিয়া হাওলাদার বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাকে বরগুনা হাসপাতালে পদায়ন করেছে। এখানে পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। রোগীর চাপে ওয়ার্ডগুলোতে হাঁটার জায়গাটুকুও নেই। চিকিৎসক ও নার্স সংকটে চিকিৎসা দিতে আমরা চরম কষ্টে রয়েছি।

বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, জেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় ১২ জন চিকিৎসক ও ১০ জন নার্সকে পদায়ন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচজন চিকিৎসক ও পাঁচজন নার্স ইতোমধ্যে যোগদান করেছেন। বাকিরা এখনো যোগ দেননি।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন বলেন, বরগুনা জেলায় খাবার পানির অসুবিধার জন্য প্রত্যেকটা বাড়িতে পানি ধরে রাখে। কিন্তু অনেকে ঢেকে রাখে না। এজন্য মশা নিধনে বাড়ি মালিক সমিতি কাজে লাগাতে হবে। কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করতে হবে। যেসব এলাকায় ডেঙ্গুর হটস্পটগুলো চিহ্নিত হয়েছে সেখানে জোরেশোরে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালাতে হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম