হাসপাতালে ভর্তি ২৩৪৭
ডেঙ্গুতে ১০ দিনে ৯ জনের মৃত্যু
জাহিদ হাসান
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির হেরফেরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে এডিস মশাবাহী রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ। সেই সঙ্গে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। শনিবার সকাল থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩২৯ জন। আক্রান্ত ও মৃত্যুর এই ঊর্ধ্বমুখী ধারায় সবশেষ গত ১০ দিনে ডেঙ্গুতে ৯ জন মারা গেছেন এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৩৪৭ জন। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের ডেঙ্গু বিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরের (২০২৪) ১৩ থেকে ২২ জুন পর্যন্ত ১০ দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১৯৩ জন। এর মধ্যে মারা যান ৩ জন। অর্থাৎ গত বছরের ঠিক এ সময়ের চেয়ে এবার একই সময়ে ২ হাজারের বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৬ জন। চলতি বছর ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ জনে। অপরদিকে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭৫৮ জনে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার ডেঙ্গুর সবচেয়ে বেশি প্রকোপ বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলায়। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় এই জেলায় নতুন করে ৭৮ রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। নতুন রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন বরিশাল বিভাগের। রোববার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজন রোগী মারা যান। ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ৬৪ জন, ঢাকা বিভাগে ৩৮ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে দুজন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৪ জন, খুলনা বিভাগে ১৫ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ১০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
ডেঙ্গু নিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৯০৯ জন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ২৪৮ জন। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ৬৬১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩০১ ডেঙ্গুরোগী। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ছাড়পত্র পেয়েছেন ছয় হাজার ৮১৭ জন। এডিস মশাবাহিত রোগটির সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে গত ১০ দিনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি বছরের ২১ জুন একদিনে সর্বোচ্চ ৩৫২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। এছাড়া ২০ জুন ১৫১ জন, ১৯ জুন ২৪৮, ১৮ জুন ২১২, ১৭ জুন ২৪৪, ১৬ জুন ২৩৪, ১৫ জুন ২৪৯, ১৪ জুন ১৬৯ এবং ১৩ জুন ১৫৯ জনসহ সবশেষ দশ দিনে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৩৪৭ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৯ জন। মাসভিত্তিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত বছরের (২০২৪) জানুয়ারিতে ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১০৫৫ জন, মারা যান ১৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ভর্তি ৩৩৯ জন, মারা যান ৩ জন, মার্চে ভর্তি ৩১১, মৃত্যু ৫, এপ্রিলে ভর্তি ৫০৪, মৃত্যু ২, মে মাসে ভর্তি ৬৪৪, মৃত্যু ১২ এবং জুনের প্রথম ২২ দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৪৯০ জন এবং মারা যান ৫ জন। সব মিলে গত বছরের ২২ জনু পর্যন্ত ভর্তি হয়েছিলেন ৩ হাজার ৩৪৩ জন এবং মারা যান ৪১ জন। অন্যদিকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হন ১১৬১ জন, মারা যান ১০ জন। এভাবে ফেব্রুয়ারিতে ভর্তি ৩৭৪, মত্যু ৩, মার্চে ভর্তি ৩৩৬ জন। তবে কোন মৃত্যু হয়নি। এপ্রিলে ভর্তি ৭০১, মৃত্যু ৭, মে মাসে ভর্তি ১৭৭৩ মৃত্যু ৩, চলতি জুনের ২২ দিনে ভর্তি হয়েছেন ৩৪১৩ জন হাসপাতালে। চলতি বছর এক মাসে সর্বোচ্চ রোগী ভর্তির রেকর্ডও এটি। জুনে এখন পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৭ হাজার ৭৫৮ জন। গত বছরের চেয়ে এবার ৪ হাজার ৪১৫ জন রোগী বেশি ভর্তি হয়েছেন।
জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম)-এর কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম ছারোয়ার যুগান্তরকে বলেন, ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার লার্ভার প্রাক-মৌসুম জরিপের তথ্য অনুযায়ী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১৩টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট মানদণ্ডের চেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রধান বাহক এডিস অ্যাজিপ্টাই মশা এবং ঢাকার বাইরে এডিস অ্যালবোপিক্টাস নামক মশা বেশি দায়ী। ঢাকায় বহুতল ভবনে সবচেয়ে বেশি (৫৮.৮৮ শতাংশ) এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। ঢাকার বাইরে বরিশাল বিভাগের বরগুনায় ডেঙ্গুর ভয়াববহতা বেশি দেখা যাচ্ছে। তাই সামাজিক ও পরিবেশগত সব প্যারামিটারকে বিবেচনায় নিয়ে দেশে মশক নিধনের কার্যকর ও বিজ্ঞানভিত্তিক কার্যক্রম চালাতে হবে। এ কাজে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। না হলে সামনে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা আরও বাড়বে।
