Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

বাতিল নয়, সংশোধন হচ্ছে সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ ২০২৫ বাতিল নয় বরং সংশোধন হচ্ছে। কর্মচারী সংগঠনগুলোও বাতিলের দাবি থেকে সরে এসে সংশোধনে কথা বলছেন। একই সঙ্গে তারা বলছেন, অধ্যাদেশটিতে তাদের এ সব আপত্তির জায়গাগুলো সংশোধন করা হলে এই আইন থাকা আর না থাকার মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য থাকবে না। তবে গুরুতর অপরাধের জড়ালে বাধ্যতামূলক অবসর ও সাময়িক বরখাস্তের শাস্তি বহাল থাকবে। বৃহস্পতিবার বিকালে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে গঠিত উপদেষ্টা কমিটির সঙ্গে কর্মচারী নেতাদের নির্ধারিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে রাতে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা কর্মচারী ঐক্য ফোরামের মহাসচিব মো: নজরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের বিতর্কিত ধারাগুলো নিয়ে উপদেষ্টা কমিটির সঙ্গে আলোচনায় নিুলিখিত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

অধ্যাদেশে অনানুগত্যের জন্য চাকরিচ্যুতির বিধান আর থাকছে না। এই ধারাটি বাতিল করা হবে। কারণ অনানুগত্যের কোনো সংজ্ঞা নেই। কী কী করলে তা অনানুগত্য হবে। এ ধারাটি অধ্যাদেশ বহাল রাখা হলে কর্মকর্তারা নিজের ইচ্ছামতো যখন-তখন যে কাউকে চাকরিচ্যুত করতে পারবেন। হয়রানির শিকার হবে নিরীহ কর্মচারীরা। আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে অনানুগত্যের বিধান বাতিল হবে। তিনি আরও বলেন, অধ্যাদেশ এ চাকরি থেকে অপসারণের বিধানও তুলে দেওয়া হবে। কারণ একজন চাকরিজীবী মানে তিনি একজন নয়। তার বৃদ্ধ পিতা-মাতা, স্ত্রী ও সন্তানসহ ছয়জনের পরিবার। একজনের অপরাধের শাস্তি ছয়জন ভোগ করতে পারে না। উপদেষ্টা কমিটির সদস্যরা আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন ও অধ্যাদেশ থেকে চাকরি থেকে অপসারণের বিধান বাতিল করা হচ্ছে।

মহাসচিব আরও বলেন, জারি করা অধ্যাদেশে অপরাধ তদন্তের কোনো সুযোগ ছিল না। এখন কোনো কর্মচারী অপরাধ করলে তা তিন দিনের মধ্যে তদন্ত হবে। তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার বিধান করা হবে। নারী কর্মচারীরা অপরাধ করলে তা তদন্তে গঠিত কমিটিতে আবশ্যিকভাবে একজন নারী সদস্য রাখার বিধানযুক্ত করা হচ্ছে। এতে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। তিনি আরও বলেন, তদন্তে কোনো কর্মচারী দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে দেওয়া দণ্ড পুনর্বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবে। রাষ্ট্রপতির কাছে আপিলের আগে ওই কর্মচারী উচ্চ আদালতে কিংবা প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের আশ্রয় নিতে পারবে। এমন বিধান সংযোজন করা হবে। নজরুল ইসলাম আরও বলেন, কর্মস্থলে অনুপস্থিতির জন্য সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ-এ শাস্তির বিধান রয়েছে। এই বিধান রহিত করার জন্য আমরা দাবি জানিয়েছি। বলেছি, নানা কারণে একজন কর্মচারী অনুপস্থিত থাকতে পারেন। প্রকৃত কারণ না জেনে কাউকে শাস্তি দেওয়া অমানবিক হবে। তাছাড়া কর্মচারীরা নিজেদের অধিকার নিয়ে অনেক সময় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেনদরবার করে। সেই ক্ষেত্রে অনুপস্থিতির অভিযোগ তুলে কাউকে শাস্তি দেওয়া হলে তা কর্মচারীরা মানবে না। উপদেষ্টা কমিটির সদস্যরা আমাদের দাবি মেনে নিয়ে বলেছেন, এই ধারাটি অধ্যাদেশ থেকে বাদ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ পেশ করবে।

২৫ মে জারি করা সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। গত ৪ জুন জারি করা সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ অধিক পর্যালোচনা এবং কর্মচারীরা কেন আন্দোলন করছে তা অনুসন্ধানে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ রয়েছেন। এছাড়া কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ উদ্দিন আহমেদ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম এবং পরিসংখ্যান ও তথ্যব্যবস্থা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার। কর্মচারীরা কি অধ্যাদেশটি বাতিলের আন্দোলন থেকে সরে গেল কিনা- এমন প্রশ্নে মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে বৃহত্তর আন্দোলনের অংশ হিসাবে কর্মচারীদের জনসংযোগ কর্মসূচি চলছে। একই সঙ্গে তারা সরকার গঠিত উপদেষ্টা কমিটির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম